যে দেশে মন্দিরে ঢোকার অধিকার পেতেও মেয়েদের সুপ্রিম কোর্টে যেতে হয়, সে দেশ থেকেই উঠে আসেন কোনও এক অরুণাচলম মুরুগাননথম! এটাই ‘ইনক্রেডিবল ইন্ডিয়া’! এটাই ‘অতুল্য ভারত’!
এবং ঠিক এই কারণেই ‘প্যাডম্যান’ সিনেমা হয়েও আসলে তা নাছোড়বান্দা, ‘আনপড়’ ও ‘গাঁওয়ার’ এক জিনিয়াসের বজ্রনির্ঘোষ, বারবার হেরে গিয়েও যাঁর অনির্বাণ জেদই তাঁকে আবার ভাসিয়ে তোলে এবং শেষমেশ পৌঁছে দেয় সাফল্যের দরজায়।
বক্স অফিসের দাবি মেনে সত্যি ঘটনার সঙ্গে বিনোদন মাখিয়ে যে ‘ককটেল’ পরিচালক আর বালকি তৈরি করেছেন, তাতে ‘ফিল্মি’ মুহূর্তের কোনও অভাব নেই। গানে, সংলাপে, আবেগে চিত্রনাট্য এতই টইটম্বুর যে, নাটকীয়তা কোথাও কোথাও হয়তো বা আসল সমস্যাকেই ছাপিয়ে গিয়েছে। তবু স্রেফ বিষয় নির্বাচনের জন্যই বোধহয় এ ছবিকে কুর্নিশ না জানিয়ে উপায় নেই। অরুণাচলম মুরুগাননথমের লড়াইটা শুরু হয়েছিল নিজের বাড়িতেই। বিয়ের পর এক দিন দেখেন, রজস্বলা স্ত্রী খুব মলিন, নোংরা কাপড়ের টুকরো ব্যবহার করছেন। বাড়ির অন্য মেয়েরাও তাতেই অভ্যস্ত। উদ্বিগ্ন অরুণাচলমের মনে হয়, যা দিয়ে তিনি সাইকেলও মুছবেন না, সেটা ব্যবহার করলে তো সংক্রমণ অবধারিত! অতএব দিন আনি-দিন খাই স্বামী দোকানে ছোটেন স্ত্রীর জন্য স্যানিটারি ন্যাপকিন কিনতে। কিন্তু দাম শুনে তাঁর চক্ষু চড়কগাছ! হিসেব করে দেখেন, এক-একটি প্যাড তৈরি করতে যা খরচ, তার প্রায় ৪০ গুণ দামে তা বিক্রি করছে বিভিন্ন নামী-দামি ব্র্যান্ড!
জীবনে প্রথম বার স্যানিটারি প্যাড হাতে পেয়ে স্ত্রী খুশির চেয়েও বেশি বিস্মিত। কিন্তু দাম শুনে বেঁকে বসেন তিনি। অরুণাচলম ঠিক করেন, নিজেই তৈরি করবেন ওই প্যাড।
প্যাডম্যান
পরিচালনা: আর বালকি
অভিনয়: অক্ষয়কুমার,
রাধিকা আপ্তে, সোনম কপূর
৬.৫/১০
বাস্তবের ‘প্যাডম্যান’ অরুণাচলম কোয়ম্বত্তূরের বাসিন্দা। ছবির গল্প অবশ্য ফাঁদা হয়েছে হিন্দি বলয়ে। অরুণাচলম সেখানে লক্ষ্মীকান্ত চৌহান (অক্ষয়কুমার)। স্ত্রী গায়ত্রীর (রাধিকা আপ্তে) জন্য স্যানিটারি ন্যাপকিন তৈরি করতে গিয়ে সে এক সময়ে বানিয়ে ফেলে ন্যাপকিন তৈরির এমন একটি যন্ত্র, যার দাম কোটি কোটি টাকা নয়, মাত্র ৯০ হাজার!
লক্ষ্মীকান্তের সঙ্গে পরিচয় হয় এমবিএ পাশ পরি ওয়ালিয়ার (সোনম কপূর)। যার সাহায্যে নিজের তৈরি যন্ত্র সে ছড়িয়ে দেয় গ্রামে গ্রামে, যাতে মহিলারা নিজেরাই তা দিয়ে ন্যাপকিন তৈরি করে খুব কম দামে বেচতে পারে। কাগজে ছবি থেকে রাষ্ট্রপুঞ্জে বক্তৃতা— দ্রুত বদলে যায় লক্ষ্মীর জীবন।
অক্ষয়কুমার এ ছবির সম্পদ। তবে তিনি সব দৃশ্যেই বড় বেশি ঋজু আর দৃপ্ত। হতাশায় ভেঙে পড়ার মুহূর্তে তাঁর মধ্যে আর একটু ভঙ্গুরতা দেখা গেলে ভাল হতো। সোনম কপূর ছবির দ্বিতীয় ভাগে আসেন। পরির চরিত্রে তিনি সাবলীল। তবে গায়ত্রীর চরিত্রে রাধিকা আপ্তে অতুলনীয়। গলায় দলা পাকানো কান্না নিয়ে এক জায়গায় স্বামীকে তিনি বলছেন, ‘অউরতোঁ কে দো প্যায়ের কে বিচ কিঁউ আটকে হুয়ে হ্যায় আপ’ (মহিলাদের দু’পায়ের মাঝে কেন আটকে আছেন আপনি)। বলতে বলতে কেঁদে ফেলছেন। এই ধরনের কিছু দৃশ্য ঝাঁকুনি দিয়ে যায়।
শুধু মেয়েদের নয়, এ ছবি একই সঙ্গে পুরুষের সমস্যা নিয়েও। সেই সব পুরুষ, কোনও ‘মেয়েলি সমস্যা’ই যাঁদের কখনও ভাবায় না, বিব্রত বা চিন্তিত করে না। মঞ্চে অরুণাচলম উপস্থিত পুরুষ শ্রোতাদের এক বার বলেছিলেন, ‘‘মেয়েরা প্রতি মাসে যে কষ্টের মধ্য দিয়ে যায়, আপনাদের যদি এক বারও সেই অভিজ্ঞতা হতো, তা হলে বুঝতেন!’’
পুরুষেরা বোঝেন না। তাই বোধহয় আজও এ দেশের প্রায় ৮৮ শতাংশ মহিলার কাছেই পৌঁছয় না স্যানিটারি ন্যাপকিন। তাঁদের জন্যই তো লড়ে যাচ্ছেন অরুণাচলম। এ বার লড়ুক ‘প্যাডম্যান’ও।