ছবি: তথাগত ঘোষ । মেকআপ: সুমন গঙ্গোপাধ্যায়। হেয়ার: মৌসুমী ছেত্রী। স্টাইলিং: সুমিত সিংহ
এক সময় যাঁর ওজন বেড়ে হয়েছিল ৯০ কেজি, এখন তাঁর ছিপছিপে ফিগার রীতিমতো তাক লাগায়! তাঁকে টলিউডের নতুন ফিটনেস ফ্রিক নায়িকা বলাই যায়। প্রিয়ঙ্কা সরকার। বছর দুয়েক আগেও জিমের সঙ্গে নায়িকার বিশেষ সদ্ভাব ছিল না। কিন্তু এখন জিমের সঙ্গে মিতালি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, তাঁর কাছে ওয়র্কআউট মানে শুধু এক্সারসাইজ় নয়, নিজের সঙ্গে সময় কাটানো। স্ট্রেস রিলিফ!
কী ভাবে হল এই পরিবর্তন? ‘‘এর আগে বহু বার জিমে ভর্তি হলেও উৎসাহ পাইনি। বাড়ি ইত্যাদি কারণে নিয়মিত যেতেও পারিনি। গত বছরের শেষ থেকে প্রপার গাইডেন্সে জিম করতে শুরু করলাম। বুঝলাম, নিয়ম করে ওয়র্কআউট কতটা জরুরি। এই সময়টা স্বার্থপরের মতো নিজের জন্য বরাদ্দ। এর ফলে নিজের চেহারায় যে বদল আসে, সেটাই ধীরে ধীরে উৎসাহ বাড়ায়।’’
উচ্চতা অনুযায়ী যতটা ওজন হওয়া উচিত, প্রিয়ঙ্কা এখন সেই লক্ষ্যে পৌঁছে গিয়েছেন। তাই আলাদা করে ওজন কমানোর প্রয়োজন নেই। ‘‘এখন টার্গেট এরিয়া ধরে এক্সারসাইজ় করছি বডিপার্ট ওয়াইজ়। মাসল টোন করা, অ্যাবস, লেগস... কোনটার পর কোন এক্সারসাইজ় করছি, সেটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। তাই ওয়র্কআউট করলে প্রপার গাইডেন্সে করা উচিত। নয়তো চোট পাওয়ার ভয় থাকে, কাঙ্ক্ষিত ফলও পাওয়া যায় না,’’ সাবধানবাণী শোনালেন নায়িকা। এত ব্যস্ততার মাঝে এক্সারসাইজ় করেন কখন? ‘‘সকালে। ওয়র্কআউট দিয়ে দিন শুরু করলে ওই এনার্জিটা থেকে যায়। খুব ভোরে শুট থাকলে রাতে করতে চেষ্টা করি।’’
এক্সারসাইজ়ের সঙ্গে দোসর ডায়েট তো আছেই। সেখানেও কড়া নিয়মের পাহারা। ‘‘আনাজ, ফল খাওয়া অনেক বাড়িয়ে দিয়েছি। ভাত-রুটি এমনিতেই কম খাই, খেলে সকালের দিকেই বেশি। বিকেলের পর থেকে কার্ব একদম বাদ। ডিনারে শুধু প্রোটিন,’’ প্রিয়ঙ্কা বললেন তাঁর ডায়েট সিক্রেট।
ফিটনেসের পাশাপাশি কেরিয়ার নিয়ে তিনি এখন ভীষণ মনোযোগী। নাকি বলব সাহসী? চিত্রনাট্য হাতে না পাওয়ায় সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের মতো হেভিওয়েট পরিচালকের ‘এক যে ছিল রাজা’ ছেড়েছিলেন। এ বার ছাড়লেন দেবের প্রোডাকশনের ‘হইচই আনলিমিটেড’। কারণ প্রসঙ্গে প্রিয়ঙ্কার উত্তর, ‘‘সে সময়ে আমার ‘সুলতান’, ‘ক্রিসক্রস’ শেষ করার এত চাপ ছিল যে, স্ক্রিপ্ট রিডিংয়ে যেতে পারিনি। তার পর ওদের কাছে চিত্রনাট্যের সফ্ট কপি চেয়েছিলাম। কিন্তু সেটা ওদের দিতে অসুবিধে ছিল। এটা প্রোডাকশনের সিদ্ধান্ত। এবং আমি সেটা সম্মান করি। কিন্তু স্ক্রিপ্ট না পড়ে তো আমি কমিট করতে পারব না। তখন বললাম, ‘আমাকে বাদ দাও।’ তা ছাড়া, এর পর শুটিং শুরু হয়ে যাবে। ওরাও সমস্যায় পড়ে যাবে। তাই পেশাদার জায়গা থেকে এই সিদ্ধান্ত।’’ অরিন্দম শীলের ‘ব্যোমকেশ গোত্র’ ছবিতেও একটা গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে দেখা যাবে প্রিয়ঙ্কাকে। তা নিয়ে এখনই কিছু খোলসা করতে চাইলেন না। তবে ছবিতে তাঁর লুক খুব ইন্টারেস্টিং হবে। প্রিয়ঙ্কার তূণে তির কিন্তু আরও আছে। অর্ণব মিদ্যার ছবি ‘অন্দরকাহিনি’র স্ক্রিনিং হবে কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে। স্বভাবতই উচ্ছ্বসিত অভিনেত্রী।
আসলে সময় চিরকাল কারও জন্য এক থাকে না। তাই সিদ্ধান্তের ধরনও বদলায় সময়ের সঙ্গে সঙ্গে। একটা সময়ে প্রিয়ঙ্কা কোয়ালিটির উপর কোয়ান্টিটিকে গুরুত্ব দিয়েছিলেন। মানলেন সে কথা। ‘‘সেটা আমি এখন অনেকটাই চেক করেছি। মাঝে একটা সময় ছিল, যখন আমাকে অনেক কাজ করতে হয়েছে। তার জন্য দুঃখ নেই। এর একটা বড় কারণ ছিল আর্থিক। এখন নতুন লাইফ স্টাইলে অনেকটা থিতু হয়েছি। তাই গল্প, পরিচালক, চরিত্র ভেবে ছবি বাছছি।’’
আসলে এই নতুন প্রিয়ঙ্কা আগের চেয়ে অনেকটাই আলাদা। জীবনের ঘাত-প্রতিঘাত তাঁকে নতুন করে গড়েছে। এখন তিনি পুরোদস্তুর পেশাদার নায়িকা, যাঁর ফোকাস শুধুই কেরিয়ারে। এতটা আত্মবিশ্বাসী, উচ্চাকাঙ্ক্ষী তাঁকে কি আগে কখনও দেখা গিয়েছে! ‘‘কাজ করা কোনও দিনই ছাড়তে পারিনি। প্যাশনের জায়গাটা চিরকালই ছিল। কিন্তু প্রায়োরিটির দিক থেকে কেরিয়ারকে অনেকটা পিছিয়ে রেখেছিলাম। বাড়ি, সম্পর্ক... এ সবকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছিলাম। কিন্তু এখন গুরুত্ব বদলে গিয়েছে,’’ ভনিতাহীন উত্তর তাঁর।
পারমিতা সাহা