ছবি: সুপ্রতিম চট্টোপাধ্যায়
স্বামী পরিচালক আর স্ত্রী নায়িকা। এমন ছবির সেট ভিজ়িটের সুযোগ দুর্লভ। স্বাভাবিক ভাবেই আগ্রহ ছিল, কেমন হবে ‘পরিণীতা’র সেট?
বেলতলা রোডের লাল রঙের পেল্লায় একটি বাড়িতে চলছিল রাজ চক্রবর্তীর ছবির শুটিং। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, বাড়িটি রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়ের। বাড়ির আসবাব বলে দিচ্ছে, বাসিন্দারা কতটা শৌখিন। যে ঘরটিতে শুটিং চলছে, তার মেঝে থেকে সিলিং পর্যন্ত ক্যাবিনেট জুড়ে বই ঠাসা। ছবিতে দেখানো হচ্ছে, ওই ঘরটি ঋত্বিক চক্রবর্তীর। চার দিকে এত বই দেখে অভিনেতা বেশ উত্তেজিত। আর রাজ তো ছবি তুলে ক্যাপশনে ‘নলেজ’ লিখে পোস্টই করে দিলেন।
রাজ নিজের প্রোডাকশনে প্রথম ছবি পরিচালনা করছেন। বিয়ের পরে শুভশ্রীরও এটি প্রথম ছবি। নিজের ছবিতে স্ত্রীকে নায়িকা হিসেবে নিলে ইন্ডাস্ট্রিতে যে নানা রকম আলোচনা হবে, রাজ তা জানেন। বলছিলেন, ‘‘নিজে প্রযোজনা করছি, তাই কাউকে কৈফিয়ত দেওয়ার প্রয়োজন নেই। শুভশ্রী মানেই নাচ-গান নির্ভর গ্ল্যামারাস ছবি করবে, এমন তো নয়। ‘পরিণীতা’য় ওর চরিত্রে একাধিক শেড রয়েছে। অভিনয়নির্ভর ছবি বলেই ঋত্বিক আর শুভশ্রীকে কাস্ট করা হয়েছে।’’
‘লে ছক্কা’র এত দিন পরে ঋত্বিক আর রাজ একসঙ্গে কাজ করলেন। কতটা বদল দেখলেন পরিচালকের মধ্যে? ‘‘ছবির সেটে এনার্জি জোগানোর দায়িত্বটা রাজ বরাবরই নিত। এখনও নিচ্ছে। তবে আগের চেয়ে অনেক ঠান্ডা হয়ে গিয়েছে দেখছি,’’ ঋত্বিকের গলায় মজার ছোঁয়া। বিয়ের পরে এই বদল হয়েছে বলছেন? ফিচেল হেসে বললেন, ‘‘হতে পারে। নিজেকে দিয়েই বুঝছি!’’ আর শুভশ্রী কী বলছেন এটা নিয়ে? ‘‘আগে শুনেছি মাইকটাইক ছুড়ে ফেলে দিত। এখন তো সে রকম কিছু করে না। মেজাজ ঠান্ডা হয়ে গেলে তো ভালই। তবে আমি এর কোনও কৃতিত্ব নিচ্ছি না,’’ নায়িকার গলাতেও মজার সুর!
ঋত্বিক এক দিকে ‘পরিণীতা’র শুটিং করছেন। অন্য দিকে তাঁর তিনটি ছবি একসঙ্গে সিনেমা হলে চলছে— ‘নগরকীর্তন’, ‘তারিখ’, ‘ভিঞ্চিদা’। মাসের শেষে ‘জ্যেষ্ঠপুত্র’ মুক্তি পাচ্ছে। এমন অভিনেতার সঙ্গে শুট করতে শুভশ্রী প্রথম দিকে একটু নার্ভাস ছিলেন। বলছিলেন, ‘‘ঋত্বিকদাকে আমার আত্মভোলা মনে হতো। কাজ করার আগে টেনশনে ছিলাম। বাস্তবে অবশ্য তা নয়। খুব কো-অপারেট করেছে।’’
ছবিতে শুভশ্রীই মলাট চরিত্রে। সেখানে ঋত্বিকের জন্য কতটা পরিসর থাকছে? ‘‘আমি তো আসলে চরিত্র করি। মেয়েটার দিক থেকে বলা হলেও, গল্পটা আসলে দু’জনের। পরিণতি না পাওয়া প্রেম... লাভ স্টোরির সঙ্গে রিভেঞ্জ ড্রামাও আছে,’’ জবাব অভিনেতার।
ছবির চরিত্রের জন্য সোহিনী সেনগুপ্তর কাছে ওয়র্কশপ করেছেন শুভশ্রী। এক বছর বিরতি নিয়েছিলেন কাজে। পুরোদস্তুর প্রস্তুত হয়েই ময়দানে নেমেছেন। চরিত্রের জন্য একেবারে মেকআপ করছেন না শুভশ্রী। স্রেফ সানস্ক্রিন লাগিয়েই ক্যামেরার সামনে তিনি।
সেটে রয়েছেন রাজের বোনের মেয়ে সৃষ্টি। সদ্য উচ্চমাধ্যমিক দিয়েছেন। ছবিতে নায়িকার কস্টিউম করছেন সৃষ্টি। এ দিনের শুটিংয়ে অন্যান্য অভিনেতা আদৃত ও ফলক রশিদ কেউই ছিলেন না।
শুটিং ফ্লোরে ঢোকার আগে যে কৌতূহল ছিল, খানিকক্ষণের মধ্যেই তার নিরসন হল। শুভশ্রী বরাবরই বলতেন, তিনি ব্যক্তিগত এবং পেশাগত জীবন আলাদা রাখেন। বাস্তবেও তাই। সেটে রাজ-শুভশ্রীর মধ্যে পরিচালক-নায়িকার রসায়নই দেখা গেল। আর পাঁচটি ছবির মতো অভিনেত্রীকে ডেকে পরিচালক শট বুঝিয়ে দিলেন। টেক নেওয়ার আগে রিহার্সাল করালেন। মাঝে শুধু স্ত্রীর চুলটা এক বার ঠিক করে দিলেন... তফাত বলতে ওটুকুই।
রাজের কথায়, ‘‘শুভশ্রী এখন টেকনিক্যালি অনেক পরিণত। ‘চ্যালেঞ্জ’-এর সময়ে একদমই বাচ্চা ছিল।’’ আর রাজের পরিচালনায় কাজ করা নিয়ে শুভশ্রী কী বলছেন? ‘‘হাজ়ব্যান্ড বলে বলছি না। আমি লাকি যে, কামব্যাক ছবিটা রাজ চক্রবর্তীর পরিচালনায় হচ্ছে। সেটে স্বামী-স্ত্রীর রসায়ন কিন্তু আপনি পাবেন না। একসঙ্গে গাড়িতে হয়তো আসছি। কিন্তু তখন আমি স্ত্রী নই, অভিনেত্রীই...’’