হাউসফুল: বাহুবলীর লাইনে কলকাতা। —নিজস্ব চিত্র।
বিন্ধ্য পর্বতের ব্যবধান শেষমেশ ঘুচেই গেল। ঘুচিয়ে দিল ‘বাহুবলী টু’। এর পর থেকে বলিউডকে আর ভারতীয় ছবির মুখ বলা যাবে কি না, সেই প্রশ্নটাও উঠে গেল।
কারণ, কলকাতা থেকে কন্যাকুমারী পর্দা জুড়ে এখন এক জনই। এত দিন হিন্দি ছবির দাপটে আঞ্চলিক ছবি মার খাচ্ছে বলে হাহুতাশ ছিল! এ বার একটা আঞ্চলিক ছবিই বাকি সবাইকে স্রেফ হাওয়া করে দিল।
পরিসংখ্যানেই মালুম হচ্ছে বাহুবল! সারা পৃথিবীতে ৯ হাজার স্ক্রিন, এ দেশে সাড়ে ছ’হাজার। বুকমাইশো-তে বুকিং শুরু হওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১০ লক্ষ টিকিট খতম। শুধু আমেরিকাতেই ১৯ কোটি টাকার টিকিট আগাম বিক্রি। বক্স অফিস বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হাজার কোটির নীচে এ ঘোড়া থামবে বলে মনে হচ্ছে না!
অতএব? দঙ্গল-সুলতান-চেন্নাই এক্সপ্রেস...সবাইকেই একটি তেলুগু ছবির পাশে শিশু বলে মনে হচ্ছে। এবং ব্যাপারটা রীতিমতো উপলব্ধির জায়গা নিয়েছে। যে কারণে এই শুক্রবার বলিউড আর কোনও হিন্দি ছবি রিলিজই করায়নি। খোদ মুম্বই পুলিশ টুইটারে এ দিন একটি মেমে ছেড়েছে! তাতে লেখা— ‘‘মুম্বইয়ের জন্য দু’টো প্রশ্ন। এক, কাটাপ্পা বাহুবলীকে মারল কেন? দুই, লোকে ট্র্যাফিক আইন মানে না কেন? প্রথমটার উত্তর আজ পাওয়া যাচ্ছে। পরেরটার উত্তর আপনারাই দিতে পারেন!’’ অর্থাৎ? বলিউডের নিজের উঠোনেই বাহুবলের দাপট!
‘বাহুবলী’র প্রথম ভাগেই দেওয়ালের লেখাটা পড়া গিয়েছিল। দ্বিতীয় পর্বে কোনও ঝুঁকি নেয়নি বলিউড। খোদ কর্ণ জোহরই ছবিটি পরিবেশনার দায়িত্ব নিয়েছেন। বাংলায় ‘বাহুবলী-২’ ১৯০টি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে। কোনও কোনও মাল্টিপ্লেক্সে ২০টা অবধিও শো থাকছে। প্রযোজকদের দাবি বলছে, গত দু’সপ্তাহে বক্স অফিসে এক কোটির কাছাকাছি ব্যবসা করেছে কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘বিসর্জন’। তবু ‘বাহুবলী’র টানে ৬২টি হল থেকে সে ছবি সরে এসেছে ৪০টিতে। মিত্রা, নবীনা, পদ্মশ্রী, বারুইপুরের মিলনের মতো হল সরিয়ে দিয়েছে ‘বিসর্জন’কে। অরিন্দম শীল অবশ্য বুক ঠুকে তাঁর নতুন ছবি ‘দুর্গা সহায়’ এ দিন রিলি়জ করেছেন। কারও কারও মতে, প্রভাবশালী পরিবেশক সঙ্গে থাকাতেই কিছুটা সাহস দেখিয়ে ভাল শো টাইমিং আদায় করতে পেরেছে ছবিটা। অরিন্দম নিজে বলছেন, ‘‘বাহুবলীকে নিয়ে মাথাব্যথা নেই। আমি নিজের ছবি নিয়ে আত্মবিশ্বাসী।’’
কিন্তু উত্তর কলকাতায় মিত্রার মতো ১২০০ আসনের হল-এ চার-চারটে শো বাহুবলী! তাতেও ৭০-৮০ ভাগ ভর্তি! হলদিয়ার মাল্টিপ্লেক্সে সাতটার মধ্যে ছ’টা শো হাউসফুল! একটা দক্ষিণী ছবিকে ঘিরে আসমুদ্রহিমাচল এতটা উন্মাদনার বেনজির বললেই চলে। গত কয়েক বছর ধরে একটু একটু করে তৈরি হয়েছে আবহটা। ডিজিটাল দুনিয়ায় ছবি দেখার ভৌগোলিক সীমানা ফিকে হয়েছে। রজনীকান্তের ‘শিবাজি দ্য বস’ বা ‘রোবট’-এর মতো ছবি দক্ষিণের গণ্ডিতে আবদ্ধ থাকেনি। মরাঠি ব্লকবাস্টার ‘সাইরাট’-এর দর্শক নানা প্রান্তে ছড়িয়েছে। মাল্টিপ্লেক্সে অন্য ভাষাভাষী ছবি মুক্তি পাচ্ছে নিয়ম করে। বাংলা ছবি তো অনেক কালই দক্ষিণী ছবির রিমেক সম্বল করেই এগোচ্ছে অনেকাংশে।
আরও পড়ুন:‘বাহুবলী ২’-এর জন্য সঙ্কটে ‘বিসর্জন’, টুইটারে সরব কৌশিক
এই সম্মিলিত পট পরিবর্তনের ফসল প্রথম বারেই তুলেছিল ‘বাহুবলী’। প্রভাস আর রানা ডাগ্গুবাতির টক্কর, সঙ্গে জাঁকালো স্পেশাল এফেক্টসের ফুলঝুরি এ বার আরও সাড়ম্বরে, আরও প্রচার নিয়ে, আরও হল নিয়ে, আরও আরও ভাষায় নিজেকে ডাব করে দেশ জুড়ে পরাক্রম বিস্তার করল। চেন্নাই-হায়দরাবাদ-বেঙ্গালুরু-তিরুবনন্তপুরমের পরিচিত ছবিটা সারা দেশের ছবি হয়ে গেল। তরণ আদর্শকে টুইট করে বলতে হল, বক্স অফিসে টাইফুন! পূর্ব, পশ্চিম, উত্তর, দক্ষিণ...আজ বাহুবলে হল লীন।