অন্ধকারের চার্চিল

সিনেমার পরদায় সেই ১৯৩৫-এ ‘রয়্যাল ক্যাভালকেড’ থেকে চার্চিলের যাত্রা শুরু। কিন্তু এই সিনেমায় চার্চিল-চরিত্রের বিশেষত্ব, ডিটেলিং। স্কচ-সহ ব্রেকফাস্ট বা ঠোঁটে নিভন্ত সিগার ধরে থাকা, ‘উইটি’ কথন, এ সবই সেই ডিটেলিংয়ের জন্য।

Advertisement

অর্ঘ্য বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২২ জানুয়ারি ২০১৮ ০০:০০
Share:

ডার্কেস্ট আওয়ার

Advertisement

পরিচালনা: জো রাইট

অভিনয়: গ্যারি ওল্ডম্যান, রোনাল্ড পিকআপ, ক্রিস্টিন স্কট থমাস

Advertisement

৭/১০

এই রাষ্ট্রনেতা শব্দ নিয়ে খেলতে ভালবাসেন। সেই খেলা শুধুই সাহিত্যের জন্য নয়, বরং তা একটা গোটা জাতিকে যুদ্ধের অভিমুখেও পাঠাতে পারে। ‘ডার্কেস্ট আওয়ার’ সিনেমাটি দেখতে দেখতে উইনস্টন চার্চিল ও তাঁর ‘শব্দব্রহ্ম’ সম্পর্কে ফের এ কথা বলা চলে।

অনুষ্কা শঙ্করের সদ্য-প্রাক্তন স্বামী পরিচালক জো রাইটের এই ‘পলিটিক্যাল ড্রামা’র সময়, ১৯৪০-এর মে মাস। নেভিল চেম্বারলেনের (‌রোনাল্ড পিকআপ) পরে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে চার্চিলের (গ্যারি ওল্ডম্যান) ক্ষমতার শীর্ষে উত্তরণ, অভ্যন্তরীণ রাজনীতির বেড়়া টপকে ‘ইউরোপের আতঙ্ক’ হিটলারের সঙ্গে আপস না করা, ‘ডানক্রিক’ থেকে ইংরেজ সৈনিকদের বের করতে ‘অপারেশন ডায়ানামো’র পরিকল্পনা— এমন এক অন্ধকার সময়ের প্রেক্ষাপটে সিনে-গল্পের জাল বোনা। সেই জালে একটার পর একটা জট ছাড়ানোতেই চার্চিল, থুড়ি পরিচালকের লক্ষ্যপূরণ।

সেই লক্ষ্যপূরণে হ্যারি পটার সিরিজের ‘সিরিয়াস ব্ল্যাক’ ওল্ডম্যান এখানে অন্য ভাবে নিজেকে নিংড়ে দিয়েছেন। ‘ওয়ার ক্যাবিনেট’-এর বদ্ধ আলোচনা হোক, ‘লেডি চার্চিল’-এর (ক্রিস্টিন স্কট থমাস) সঙ্গে দাম্পত্যের দৈনন্দিন ‘বিরক্তিকর’ খুঁটিনাটি বা পার্লামেন্টের বক্তা, সব ক্ষেত্রেই ওল্ডম্যানের অভিনয় অন্য উচ্চতার। ইতিমধ্যেই পেয়েছেন ‘গোল্ডেন গ্লোব’। এর পর ওল্ডম্যান অ্যাকাডেমি পুরস্কার পেলেও আশ্চর্য হওয়ার নয়।

সিনেমার পরদায় সেই ১৯৩৫-এ ‘রয়্যাল ক্যাভালকেড’ থেকে চার্চিলের যাত্রা শুরু। কিন্তু এই সিনেমায় চার্চিল-চরিত্রের বিশেষত্ব, ডিটেলিং। স্কচ-সহ ব্রেকফাস্ট বা ঠোঁটে নিভন্ত সিগার ধরে থাকা, ‘উইটি’ কথন, এ সবই সেই ডিটেলিংয়ের জন্য। রাষ্ট্রনেতাও যে হতাশায় বিড়বি়ড়় করেন, শিশুর কথায় তাঁরও যে চোখ ভেজে, তা-ও দেখায় এই সিনেমা।

‘আ ভেরি লং এনগেজমেন্ট’ বা ‘হ্যারি পটার অ্যান্ড দ্য হাফ ব্লাড প্রিন্স’-এর পরে সিনেমাটোগ্রাফার ব্রুনো ডেলবোনেল এই সিনেমাতেও জাত চিনিয়েছেন।

দুর্দান্ত কিছু দৃশ্যের জন্যও সিনেমাটি দেখতে ভাল লাগে। একটি দৃশ্য যেমন, চারদিকে গাঢ় অন্ধকার। আর ঠিক মাঝখানে চার্চিলকে নিয়ে উপরে উঠছে আলো ঝলমলে লিফ্‌ট। এ যেন সমসাময়িক সময়টাকেই ব্যঙ্গ করে। কারণ, সেই সময় হিটলারের নাৎসি সেনারা প্রায় গোটা পশ্চিম ইউরোপকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করছে। এই দৃশ্য দেখে সচেতন ভারতীয় দর্শকের মনে পড়তে পারে, ১৯৪৩-এর বাংলার দুর্ভিক্ষের কথা। কারণ, সেই ক্ষুধার সময়ে চার্চিল নামের ওই লোকটির ভূমিকা নিয়েও কিন্তু যথেষ্ট প্রশ্নচিহ্ন রয়েছে।

তবে সিনেমাটির বিরুদ্ধে দর্শকের আপত্তিও থাকতে পারে। অন্তত দু’টি ক্ষেত্রে। প্রথমত, ১২৫ মিনিটের পুরোটাই চার্চিল বা গোল্ডম্যান-শো। শুধু মাত্র সেক্রেটারি এলিজাবেথ নেল (লিলি জেমস) তাঁর সংক্ষিপ্ত কিন্তু সুযোগসন্ধানী অভিনয়ে আলাদা দাগ কাটেন, এই যা। দ্বিতীয়ত, সিনেমার প্রায় চূড়ান্ত মুহূর্তে ভিসকাউন্ট হালিফাক্সের (লর্ড ডিলেন) মুখে ‘হি মবিলাইজড দ্য ইংলিশ ল্যাঙ্গোয়েজ অ্যান্ড সেন্ট ইট টু ব্যাটল’ শুনতে কাব্যিক লাগে। কিন্তু এই মন্তব্যের কৃতিত্ব আদতে আমেরিকান সাংবাদিক এডওয়ার্ড আর মুরোর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন