Malyalam Actor

Movie: চেনা বিষয়বস্তু, তবু প্রাসঙ্গিক

প্রায় পৌনে তিন ঘণ্টার এই ছবি আশির দশকের উপকূলীয় অঞ্চলের স্মাগলিং থেকে শুরু করে শেষ হয় সমসময়ের দাঙ্গায়।

Advertisement

মধুমন্তী পৈত চৌধুরী

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ জুলাই ২০২১ ০৫:৪২
Share:

মালিক
(মলয়ালম)

Advertisement

পরিচালনা: মহেশ নারায়ণন

অভিনয়: ফহাদ, নিমিশা, বিনয়, জোজু, সনল

Advertisement

৬.৫/১০

গত কয়েক মাসে ওটিটি প্ল্যাটফর্মে মুক্তি পাওয়া বেশ কয়েকটি মলয়ালম ছবি জাতীয় স্তরে নজর কেড়েছে। বিষয়বস্তু, অভিনয়, সর্বোপরি প্রাসঙ্গিকতার নিরিখে ছবিগুলি স্বকীয়তার ছাপ রেখেছে। মহেশ নারায়ণন পরিচালিত এবং ফহাদ ফাসিল অভিনীত অ্যামাজ়ন প্রাইমের ছবি ‘মালিক’ এগিয়ে থাকবে তার প্রাসঙ্গিকতার জন্য। রাষ্ট্র-পুলিশ যোগ, দাক্ষিণাত্যের ‘বর্ণাশ্রম’ক্লিন্ন ভোট-রাজনীতির রূঢ় চিত্র তুলে ধরেছিল নেটফ্লিক্স ছবি ‘নয়াত্তূ’। ওই ছবির সম্পাদনা করেছিলেন মহেশ। সে ছবির মাসতিনেক পরে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘মালিক’-এর মূল ভাবনাও নিহিত ধর্ম-বর্ণের রাজনীতি এবং পুলিশি অত্যাচারে। পাশাপাশি সে ভাবনা এখানে বৃহত্তর ক্যানভ্যাস পেয়েছে ‘দ্য গডফাদার’ বা ‘সরকার’ জাতীয় ছবির চেনা জৌলুসে। পরিচালক মহেশের চোখে সুলেমান আলি (ফহাদ ফাসিল) রমাদাপল্লির মসীহা, দর্শকের চোখে কেরলের গডফাদার!

প্রায় পৌনে তিন ঘণ্টার এই ছবি আশির দশকের উপকূলীয় অঞ্চলের স্মাগলিং থেকে শুরু করে শেষ হয় সমসময়ের দাঙ্গায়। রাজনীতির নিপীড়নে ইসলাম ও খ্রিস্ট ধর্মের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান বদলে যায় রক্তগঙ্গায়। তবু প্রতিশোধস্পৃহা লালিত হতে থাকে পরবর্তী প্রজন্মের হাত ধরে, যা গ্যাংস্টার ছবির একটি ট্রোপ। ছবির ট্রিটমেন্ট থেকে স্পষ্ট, বৃহত্তর দর্শকের কাছে উপভোগ্য করার জন্য এটিকে লার্জার-দ্যান-লাইফ বানানোর চেষ্টা করেছেন মহেশ। গ্যাংস্টার সাগায় মিশেছে প্রেম, গান, আশির দশকের নস্ট্যালজিয়া। বাণিজ্যিক মোড়কে যতটা লোভনীয় করে তোলা যায়, ততটাই করতে চেয়েছেন পরিচালক। তবে সে পথে খানিক অন্তরায় ছিল।

ফহাদের চেহারায় গ্যাংস্টারের মতো ডাকসাইটেপনা নেই। তাই গ্যাংস্টারের চেয়েও তিনি অনেক বেশি অভিমানী ছেলে, পুত্রশোকে বিহ্বল পিতা বা প্রেমিক রূপে নজর কেড়েছেন। তাঁর স্ত্রী রোসালিনের চরিত্রে নিমিশা সাজায়ান বেশ ভাল। কিন্তু যতটা তাঁকে বয়স্কা দেখানো হয়েছে, বৃদ্ধ সুলেমানের মেকআপ কি তুলনায় বেমানান? ‘দ্য গ্রেট ইন্ডিয়ান কিচেন’খ্যাত নিমিশা চোখের ভাষা দিয়ে অভিনয় করেন। তবে প্রথম দিকে রোসালিন চরিত্র হিসেবে যতটা সপ্রতিভ, পরে যেন সে শুধুই সুলেমানের ছায়াসঙ্গিনী! এত বলিষ্ঠ অভিনেত্রীকে এমন ভাবে দেখতে খারাপ লাগে। বরং পার্শ্বচরিত্রে জোজু জর্জ (আনওয়ার আলি), বিনয় ফর্ট (ডেভিড) বেশি নজর কেড়েছেন। ছোট কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে পার্বতী কৃষ্ণ (ডক্টর শারমিন) খুব ভাল। ফ্রেডির চরিত্রে সনল আমনও ভাল।

ছবিতে যে দাঙ্গা দেখানো হয়েছে, তার সঙ্গে সরাসরি কোনও বাস্তব ঘটনার যোগ টানা হয়নি। তবে কেরলের সমসাময়িক রাজনীতিতে পুলিশ এবং রাষ্ট্রের যোগসাজশ বাস্তববর্জিত নয়। বিশেষত, একাধিক পরিচালকের ছবির এই ট্রোপ ভাবতে বাধ্য করে, বাস্তবই কি এখানে রূপক? দীর্ঘ এই ছবি পুরোদস্তুর উপভোগ্য। তবে পরিচালকও হয়তো জানতেন, চেনা থিমের শেষে মোচড় না দিলে মোক্ষলাভ হবে না এ ছবির। শেষের টুইস্ট আরোপিত মনে হতে পারে। তবে ছবি দেখার থ্রিল তাতে নষ্ট হয় না।

গত বছরে ওটিটিতে মুক্তিপ্রাপ্ত মহেশ পরিচালিত ‘সি ইউ সুন’ প্রশংসা কুড়িয়েছিল সমালোচক ও দর্শকের। লকডাউনে ঘরবন্দি অভিনেতাদের বাড়িতে নিজ নিজ অংশের শুট করা ওই ছবি সিনেমা নির্মাণের ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক। তেমন অভিনবত্ব ‘মালিক’-এ নেই। তবে যে ধরনের মলয়ালম ছবি ওটিটির দৌলতে তার দর্শকের পরিধি বাড়িয়েছে, সে তালিকায় ঠাঁই পাবে ‘মালিক’। রাষ্ট্রদ্রোহ, ধর্মের নামে জেহাদ, রাজনীতির নিপীড়ন এখন ততটাই বাস্তব, যতটা তা সিনেম্যাটিক!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন