Bogla Mama Jug Jug Jio Review

খরাজের অভিনয়ে বড় পর্দায় ‘বগলা মামা’ কতটা বিশ্বাসযোগ্য? জানাচ্ছে আনন্দবাজার অনলাইন

শুক্রবার মুক্তি পেয়েছে ধ্রুব বন্দ্যোপাধ্যায় পরিচালিত ছবি ‘বগলা মামা যুগ যুগ জিও’। সাহিত্য থেকে বড় পর্দায় বগলার প্রথম অভিযান কি মনে দাগ কাটতে পারল?

Advertisement

অভিনন্দন দত্ত

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ নভেম্বর ২০২৩ ১৮:৪১
Share:

‘বগলা মামা যুগ যুগ জিও’ ছবিতে বগলা মামা চরিত্রে খরাজ মুখোপাধ্যায়। ছবি: সংগৃহীত।

ভূত, গোয়েন্দা, থ্রিলারে বাংলা ছবি এখন বেশ ভারাক্রান্ত। সেখানে হাসির ছবি কিছুটা টাটকা বাতাসের মতো। তার উপরে গল্প যদি সাহিত্য-নির্ভর হয়, তা হলে তো সোনায় সোহাগা। সব মিলিয়ে ‘বগলা মামা যুগ যুগ জিও’ ছবিকে বাস্তবায়িত করতে পরিচালক ধ্রুব বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাঁধে একাধিক চ্যালেঞ্জ ছিল।

Advertisement

সাহিত্যিক রাজকুমার মৈত্র সৃষ্ট বগলা মামা এক সময় পাঠকদের মন জয় করেছিল। আপাতদৃষ্টিতে রসিক অথচ আবেগপ্রবণ বগলাচরণ ভট্টাচার্য থিয়েটার নিয়ে মেতে থাকে। বগলার সঙ্গে রয়েছে কেবু এবং তার দলবল। বাংলা কৌতুক সাহিত্যের মধ্যে টেনিদাকে দর্শক এর আগে বড় পর্দায় দেখেছেন। তবে পর্দায় বগলা মামার আবির্ভাব এই প্রথম। ছবিতে নামভূমিকায় খরাজ মুখোপাধ্যায়।

গল্পের প্রেক্ষাপট আশির দশক। স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যবসায়ী (পড়ুন, গুন্ডা) ফেলু আচার্যের (রজতাভ দত্ত) থেকে নাটকের বায়না নিয়ে ফাঁপরে পড়েছে বগলা (খরাজ মুখোপাধ্যায়)। ফেলু চায় নাটকের প্রতিযোগিতায় জিতে মানুষের চোখে ‘সংস্কৃতিমনস্ক’ হিসাবে পরিচিতি পেতে। বগলা কীচকবধের প্রেক্ষাপটে নাটক সাজিয়েছে। বিপরীতে রয়েছে গ্রামের মাস্টারমশাইয়ের সিরাজদৌল্লা নাটক। প্রতিযোগিতায় না জিততে পারলে ফেলুর হাত থেকে বগলা এবং তার দলবলের নিস্তার নেই। সুতরাং পর্দায় গল্পের গতির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে ‘প্যান্ডেমোনিয়াম’।

Advertisement

‘বগলা মামা যুগ যুগ জিও’ ছবির একটি দৃশ্য। ছবি: সংগৃহীত।

ছবিতে একাধিক চরিত্রের ভিড়। স্বাভাবিক ভাবেই সেখানে ছবি জুড়ে রয়েছেন খরাজ মুখোপাধ্যায়। তাঁর মতো শক্তিশালী অভিনেতার কমেডি সম্পর্কেও দর্শক অবগত। এই চরিত্রে পান থেকে চুন খসলেই সেখানে ‘ভাঁড়ামো’র অভিযোগ উঠতে পারত। কিন্তু বগলা চরিত্রটিকে খরাজ কিন্তু নিজের মতো গড়েপিটে নিয়েছেন। ফলে ছবি যত এগিয়েছে চরিত্রটির সঙ্গে দর্শক তত বেশি আত্মস্থ হতে পেরেছেন। হাসি, কান্না, রাগ— খরাজ ব্যতীত তাই বগলা মামাকে ভাবাই যায় না। খরাজের পরেই ছবিতে সব থেকে বেশি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন রজতাভ দত্ত। খল চরিত্র হলেও তাঁর চরিত্রে কমেডির মিশ্রণ মন্দ নয়। কেবুর চরিত্রে ঋদ্ধি সেন এবং তার বন্ধুদের চরিত্রে প্রত্যেকেই ভাল।

কেবুর প্রেমিকা মধুজার চরিত্রে দিতিপ্রিয়া রায় বেশ সপ্রতিভ। কৌশিক সেন, রেশমি সেন এবং সুমিত সমাদ্দারেরা নিজের নিজের জায়গা ধরে রেখেছেন। তবে অপরাজিতা আঢ্যের চরিত্রটিকে আরও জানতে ইচ্ছা করে। কয়েকটি দৃশ্যে তাঁর অভিনয় মনে রাখার মতো। বিজ্ঞানীর চরিত্রে বিশ্বনাথ বসু খুব বেশি জায়গা পাননি। সন্দীপ ভট্টাচার্যের অভিনয় যেন একটু বেশিই ‘বল্লভপুরের রূপকথা’ ছবি মনে করিয়ে দিল। স্বল্প পরিসরে নজর কেড়েছেন নরেন ভট্টাচার্য।

‘বগলা মামা যুগ যুগ জিও’ ছবিতে খল চরিত্রে রজতাভ দত্ত। ছবি: সংগৃহীত।

সিনেমার প্রয়োজনে ছবিতে বেশ কিছু পরিবর্তন করেছেন পরিচালক। তবে তা গল্পটিকে আরও এগিয়ে যেতে সাহায্য করেছে। ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্তের সুরে গানগুলো ছবির মেজাজ ধরে রেখেছে। ছবির পোশাক পরিকল্পনা এবং সেট পরিকল্পনায় যত্নের ছাপ স্পষ্ট। শ্রীজীবের চিত্রনাট্যে হাসির খোরাকের কমতি নেই। কিন্তু ছবির ভিত তৈরি করতে গিয়ে প্রথমার্ধ অহেতুক দীর্ঘায়িত হয়েছে। তুলনায় দ্বিতীয়ার্ধ অনেক বেশি গতিশীল এবং মজাদার। সম্পাদনায় ছবির দৈর্ঘ্য আরও মিনিট দশেক কমালে ছবিটি আরও আঁটসাঁট হতে পারত।

সোনাদা সিরিজ়ের মাধ্যমে দর্শক মনে এবং বক্স অফিসে ধ্রুব আধিপত্য কায়েম করেছেন। ‘গোলন্দাজ’-এর মতো ছবি তাঁর থেকে প্রত্যাশা আরও বাড়িয়েছে। শুরু থেকেই তিনি বলেছিলেন হারিয়ে যাওয়া বাংলা হাস্যরসকে তিনি ফিরিয়ে আনতে চেয়েছেন বগলার মাধ্যমে। সেখানে কমেডিতে তাঁর হাতেখড়ি মন্দ হল না। আপাতত বগলা মামার পরবর্তী অভিযানের জন্য অপেক্ষার শুরু। ইদানীং টলিপাড়ায় কান পাতলেই শোনা যায়, দর্শক নাকি এখন হাসতে ভুলে গিয়েছেন। সত্যিই কি তাই? ‘বগলা মামা’ সেই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে কি না, দেখা যাক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন