Movie Review

শিখর ছুঁয়েছে শিকড়ের জোরে

বং জুন-হো অন্যান্য বিদেশি ছবির ধারা অনুকরণ করেননি।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০০:০০
Share:

প্যারাসাইট
পরিচালনা: বং জুন-হো
অভিনয়: সং কাং-হো, চো উ-শিক, পার্ক সু-দান
৮/১০

Advertisement

গন্ডা দশেক পুরস্কার। তার উপর ছ’খানা অস্কার নমিনেশন। ঠিক কতটা আন্তর্জাতিক হয়ে উঠতে পারলে একটা কোরিয়ান ছবি সর্বস্তরে কুর্নিশ আদায় করে নিতে পারে? আয়রনিটা এখানেই যে, পরিচালক

বং জুন-হো অন্যান্য বিদেশি ছবির ধারা অনুকরণ করেননি। নিজের মাটির গল্প বলেছেন। যে গল্পটা সর্বকালীন। যে কোনও দেশের, যে কোনও পটভূমিতে তা বলা যেতে পারত। এটাই ‘প্যারাসাইট’-এর সার্থকতা।

Advertisement

পরিচালক আদ্যন্ত পারিবারিক গল্প বুনেছেন থ্রিলারের সুতোয়। একটি পরিবারের চার সদস্য। বাবা-মা ও ভাই-বোন। প্রত্যেকেই কাজের খোঁজে, কোনও রকমে দিন গুজরান করে। একদিন পরিবারের ছেলেটির ভাগ্যে একটি টিউশন জোটে। তার পরিবারের বাকিরা সেই উচ্চবিত্ত বাড়িতেই একে একে ঠাঁই খুঁজে নেয়। যেটা অবশ্যই সোজা রাস্তায় হয় না। কিন্তু অভাবের তাড়নায় ‘পরজীবী’ হওয়ার অজুহাত বদলে যায় যুক্তিতে। ওই উচ্চবিত্তের আশ্রয়ে দিব্যি চলতে থাকে তাদের সংসার। কিন্তু একটি রাত সব হিসেবনিকেশ বদলে দেয়। ফের শুরু হয় টিকে থাকার লড়াই।

‘প্যারাসাইট’-এর পোস্টারে অভিনেতাদের চোখে কালো টেপ। ছবিতে তেমন কোনও দৃশ্য নেই। ছবিটা আসলে প্রতীকী। চোখে অদৃশ্য ঠুলি তো আমাদের সকলেরই। যে কারণে একই সমাজে উচ্চবিত্ত-নিম্নবিত্তের অনায়াস সহাবস্থান হয়। উচ্চবিত্ত খুশি হয়, নিম্নবিত্ত তাদের গণ্ডি ডিঙিয়ে অনধিকার চর্চা করছে না বলে। শুধু তাদের গরিবি-গন্ধটাই যা থেকে থেকে ঝাপটা মেরে অস্বস্তি তৈরি করে।

কোরিয়ান ছবি সত্যিটা বরাবরই রূঢ় ভাবে দেখায়। যে মাটির তলার ঘরে ওই নিম্নবিত্ত পরিবারটি বাস করে, তা তাদের সামাজিক অবস্থান বোঝানোর জন্য যথেষ্ট। বৃষ্টির জলে সব ভেসে গিয়েছে। প্যান থেকে উঠে আসছে পূতিগন্ধময় জল। তার উপরে উঠে বসে বাড়ির মেয়েটি নিশ্চিন্তির সিগারেট ধরায়। সে জানে, ওটাই ভবিতব্য। যে কারণে দিনের খাবার জুটবে কি না ঠিক নেই, কিন্তু সকলের চিন্তা চোরাই ওয়াই-ফাইয়ের সিগনাল কেন জুটছে না!

এ ছবি রাজনৈতিকও। দক্ষিণ কোরিয়া জাতীয়তাবাদকে গুরুত্ব দিলেও, যুব সম্প্রদায় যে ইংরেজির মোহে কাতর, সে বার্তাও পরিচালক দিয়েছেন। আমেরিকা থেকে কেনা জিনিস নিশ্চয়ই সেরা হবে, এমন ভাবনা সমাজের সব স্তরেই। উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার বৈরিতাও উঠে এসেছে। দু’ঘণ্টা ১৪ মিনিটের ছবির কোনও জায়গা অতিরিক্ত মনে হবে না। সারভাইভালের সঙ্গে থ্রিলারের উপাদান, কাহিনির ভিত ধরে রাখে।

এই সমালোচনায় চরিত্রের নাম-পরিচয় অবান্তর। ‘প্যারাসাইট’ কোরিয়ান ছবির ধারা বজায় রাখলেও, চরিত্রগুলি আমাদের চেনা। এ ছবির গ্রহণযোগ্যতা এর শিকড়েই ন্যস্ত।

দীপান্বিতা মুখোপাধ্যায় ঘোষ

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন