Toofan

Toofan: আর একটি লড়াইয়ের গল্প

Advertisement

সায়নী ঘটক

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ জুলাই ২০২১ ০৬:২৭
Share:

খুব চেনা একটা গল্প নতুন করে দেখতে চাইলে এই সপ্তাহান্তে ‘তুফান’ দেখে অবসর কাটানোর কথা ভাবতে পারেন। ছবির কাস্টিং দুরন্ত, ফলে অভিনেতাদের পারফরম্যান্স দেখার জন্যই বিশেষ করে দেখা যায় এ ছবি। কিন্তু তার বাইরে প্রায় পুরোটাই চেনা, গতে বাঁধা। বিভিন্ন ভাষায় তৈরি অজস্র স্পোর্টস মুভির ভিড়ে আরও একটা নাম সংযোজিত হল মাত্র, তার বেশি কিছু বলা যায় না রাকেশ ওমপ্রকাশ মেহরার এই ছবিকে। যিনি বছর আটেক আগে পর্দার ‘ফ্লায়িং শিখ’ হয়ে ওঠার দৌড়ে নামিয়েছিলেন এই ফারহান আখতারকেই।

Advertisement

এখানে ফারহানের এন্ট্রি ডোংরির মস্তান রূপে। জ়াফর ভাইয়ের (বিজয় রাজ) হয়ে তোলাবাজি করা আজ়িজ় আলির মাথায় বক্সিংয়ের ভূত চাপে মহম্মদ আলির ভিডিয়ো দেখে। তাকে উৎসাহ দেয় সদ্য আলাপ হওয়া অনন্যা প্রভু (ম্রুণাল ঠাকুর)। মারামারি করে চোট পেলে এই লেডি ডাক্তারের কাছেই হাজির হয় সে। আজ়িজ় শুধুই গলির গুন্ডা নয়, তার রবিনহুডের মন, প্রেমিকের হৃদয়, উঁচুতে ওঠার একগুঁয়েমি— সবই আছে। যেমনটা গল্পের নায়কদের থাকে আর কী! ফর্মুলা মেনে বিধর্মে প্রেমও হয়, মেয়ের বাবার প্রত্যাখ্যান, বাড়িওয়ালার অর্ধচন্দ্র... পরপর ঘটে যায় সূত্র অনুসারে। উপরন্তু মেয়ের বাবা এখানে আজ়িজ়ের গুরুও বটে। কোচ নানা প্রভুর চরিত্রে পরেশ রাওয়ালের কাস্টিং অত্যন্ত লাগসই। মুসলমান-বিদ্বেষী, গোঁড়া নানা-ই আজ়িজ়কে ‘তুফান’ বানিয়েছিল। মেয়ের সঙ্গে সম্পর্কে জড়ানোয় যার মাথার উপর থেকে পরে হাত সরিয়ে নেয় নানা। আজ়িজ়ের লড়াই জারি থাকে, রিংয়ের ভিতরে ও বাইরে। ঘষা খেতে খেতে তার জীবন এর পর কোন খাতে বাঁক নেয়, তা সহজেই অনুমেয়। অত্যন্ত প্রত্যাশিত কিছু ‘টুইস্ট’ ও ‘কামব্যাক’-এ ভরা ছবিটি চলে প্রায় পৌনে তিন ঘণ্টা ধরে! নির্মাতাদের পরিকল্পনামাফিক গত বছর সিনেমা হলে মুক্তি পেলেও দর্শক কতক্ষণ ধৈর্য ধরে চেয়ার আঁকড়ে থাকতেন, তা নিয়ে সংশয় জাগে।

তুফান
পরিচালনা: রাকেশ ওমপ্রকাশ মেহরা
অভিনয়: ফারহান আখতার, ম্রুণাল ঠাকুর, পরেশ রাওয়াল, মোহন আগাসে, সুপ্রিয়া পাঠক, বিজয় রাজ
৫/১০

Advertisement

‘তুফান’-এর ভাবনা ফারহান আখতারের। তাকে কলমে রূপ দিয়েছেন অঞ্জুম রাজাবলী। যে চিত্রনাট্যের প্রধান সমস্যা হল, তার মধ্যে নতুনত্বের অভাব। ছবির গল্প বলার ধরন, সংলাপ, দৃশ্যের চাহিদা মেনে গান, মুম্বইয়ের অলিগলি, সর্বোপরি খোদ গল্পটাই খুব চেনা, চর্চিত। ডোংরির গুন্ডাগিরি, নায়িকার সঙ্গ পেয়ে সেই গুন্ডার সোজা পথে আসার চেষ্টা, বান্দ্রা ব্যান্ডস্ট্যান্ডে প্রেম, বাধাবিপত্তির শেষে ঘুরে দাঁড়ানো... এ সবই তো নব্বইয়ের দশক থেকে দেখে আসছেন দর্শক। গল্পের এই সারল্য, একমুখী চলন প্রথমার্ধে ভাল লাগলেও ধীরে ধীরে গতিহীন হয়ে পড়ে ছবি। ফারহান আখতারের বক্সার হয়ে ওঠার রক্ত-জল-করা পরিশ্রমের বাহবা দেওয়া ছাড়া আর কিছু বেঁচে থাকে না।

ছবির নায়িকা ম্রুণাল ঠাকুর পর্দায় আসতেই তাঁর ঝলমলে হাসিতে মন ভাল করে দিয়েছেন বারবার। ফারহানের সঙ্গে তাঁর রসায়ন যেমন ভাল লাগে (নায়ককে সামান্য বয়স্ক লাগলেও), তেমনই তাবড় অভিনেতাদের মাঝেও নজর কেড়ে নেন এই তরুণ অভিনেত্রী। আজ়িজ় ওরফে আজ্জু ভাইয়ের ‘সার্কিট’ এখানে মুন্না (হুসেন দালাল)। তাঁর অভিনয় ভাল লাগে। পরেশ রাওয়াল অন্যতম মুখ্য ভূমিকায় থাকলেও তাঁর চরিত্রটিও বড্ড একমুখী, তাতে পরত যোগ করলে ভাল লাগত। সুপ্রিয়া পাঠক, মোহন আগাসের মতো শক্তিশালী অভিনেতারা খুব কমই সুযোগ পেয়েছেন।

অস্কারজয়ী ‘মিলিয়ন ডলার বেবি’ পর্যন্ত যেতে হবে না। এই বলিউডেই তৈরি হয়েছে ‘মুক্কাবাজ়’, বক্স অফিস ও দর্শকের মনে ঝড় তুলেছে ‘দঙ্গল’-এর মতো ছবি। স্পোর্টস ফিল্মের সেই ট্র্যাডিশনে ‘তুফান’ হয়তো শুধু একটা নাম হয়েই রয়ে যাবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন