review

Review: নামেই গ্রেট, কাজে নয়

ওটিটি কনটেন্ট বলতে ভারতীয় নির্মাতাদের কাছে থ্রিলারই যেন একমাত্র আশ্রয়।

Advertisement

দীপান্বিতা মুখোপাধ্যায় ঘোষ

কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৮:০৯
Share:

ওটিটি কনটেন্ট বলতে ভারতীয় নির্মাতাদের কাছে থ্রিলারই যেন একমাত্র আশ্রয়। বছরভর তাঁরা নানা মোড়কে রহস্যকাহিনি পরিবেশন করে চলেছেন। ডিজ়নি প্লাস হটস্টারের ‘দ্য গ্রেট ইন্ডিয়ান মার্ডার’ তেমনই একটি সিরিজ়। একটি খুন, তাকে কেন্দ্র করে চলতে থাকা ধরপাকড়, যার সবটাই হচ্ছে রাজনৈতিক পরিমণ্ডলের মধ্যে। বিষয়ে নতুনত্ব নেই। তবে পরিচালকের নাম তিগমাংশু ধুলিয়া হওয়ায় খানিক আশা জাগে। তার উপর সিরিজ়টি বিকাশ স্বরূপের বই ‘সিক্স সাসপেক্টস’-এর অনুসরণে তৈরি। কিন্তু নামের মধ্যে ‘গ্রেট’ জুড়ে দিলেই তা উচ্চমানের হয়ে যায় না।

Advertisement

ন’পর্বের সিরিজ়ে পরিচালক জট পাকানো উলের গোলা ছেড়ে দিয়েছেন। কাহিনি যত গড়াচ্ছে, জট তত বাড়ছে। শিল্পপতি ভিকি রাই (যতীন গোস্বামী) খুন হয় তার বাড়ির পার্টিতেই। সে ছত্তিসগঢ়ের গৃহমন্ত্রী জগন্নাথ রাইয়ের (আশুতোষ রানা) ছেলে। হেন অপরাধ নেই, যা ভিকি করেনি। ফলে তাকে খুন করার অভিসন্ধি অনেকেরই। এককথায় ভিকির ঘরে-বাইরে শত্রু। সন্দেহভাজন তালিকায় একাধিক নাম। কিন্তু খুন পরবর্তী তল্লাশিতে ধরা পড়ে তিন জন— ছিঁচকে চোর মুন্না (শশাঙ্ক অরোরা), আন্দামানের আদিবাসী একেতি (মণি পিআর) এবং প্রাক্তন আমলা মোহন কুমার (রঘুবীর যাদব)। এই চরিত্রগুলোর নিজস্ব কাহিনি আছে। ভিকির কুকর্ম খোলসা হওয়ার পাশাপাশি সেগুলোও চলতে থাকে। ফলে এমন বেশ কিছু অংশ এসেছে, যা সিরিজ়ের গতি রুদ্ধ করেছে।

সিরিজ় জুড়ে অজস্র চরিত্র। বলিউডের নায়িকা শবনম (পাওলি দাম), সরকারি কর্মী অশোক রাজপুত (শারিব হাশমি), দুঁদে নেতা অম্বিকা প্রসাদ (বিনীত কুমার), সাংবাদিক অরুণ দেশমুখ (এমি ওয়াঘ)... ক্ষেত্র বিশেষে এক একটি চরিত্র গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। গোটা রহস্যটাই সিবিআই অফিসার সুরজ যাদব (প্রতীক গান্ধী) এবং ডিসিপি সুধা ভরদ্বাজের (রিচা চড্ডা) মাধ্যমে প্রত্যক্ষ করছেন দর্শক। কাহিনি দিল্লি, ছত্তিসগঢ়ের পরিধির মধ্যে ঘোরাফেরা করলেও, কলকাতা-চেন্নাই-রাজস্থানে বুড়ি ছুঁয়ে গিয়েছে। সেই বিন্যাসে জায়গাগুলোর পরিচয় তৈরির চেষ্টা প্রশংসনীয়।

Advertisement

ক্ষমতা, রাজনীতি, প্রতিশোধের খেলা যেখানে চলে, সেখানে আসল অপরাধী কে, সেই প্রশ্নের চেয়ে বেশি গুরুত্ব পায় কাকে অপরাধী সাজানো হবে। ফলে খুনিকে খোঁজার পাশাপাশি, অন্যকে দোষী সাব্যস্ত করার ছকটাও চলতে থাকে। সত্যির চেয়েও মিথ্যেকে জোরালো ভাবে প্রতিস্থাপন করার দায়িত্ব পড়ে সিবিআই অফিসার সুরজের উপরে। এই উপাদানটাই সিরিজ়ের গ্রেটনেসের মর্যাদা রেখেছে খানিকটা।

নিজেদের নামের মর্যাদা রেখেছেন অভিনেতারাও। আশুতোষ রানা, রিচা চড্ডা, প্রতীক গান্ধী, বিনীত কুমার, রঘুবীর যাদব, শশাঙ্ক অরোরা প্রত্যেকে স্বচরিত্রে উজ্জ্বল। আলাদা করে বলতে হয় একেতির চরিত্রে মণি পিআরের কথা। তবে ভিকি রাইয়ের চরিত্রের জন্য যে ধার প্রয়োজন ছিল, তা যতীন গোস্বামীর অভিনয়ে ধরা পড়েনি। পাওলি দাম ও শারিব হাশমি হয়তো পরবর্তী সিজ়নে উপযুক্ত স্ক্রিনস্পেস পাবেন।

সিরিজ়ে গুঁতোগুঁতি করে অনেক বিষয় ঢোকানো হয়েছে। নকশাল, আন্দামানের আদিবাসীদের অবহেলিত যাপন, স্‌প্লিট পার্সোনালিটি সমস্যা, বাবা-ছেলের দ্বন্দ্ব, রাজনীতির হাতে ন্যায়নিষ্ঠার অসহায়তা... এত আয়োজন চিত্রনাট্যে বাড়তি মেদের কারণ হয়েছে। একাধিক চরিত্রের নেপথ্য কাহিনির দীর্ঘসূত্রতা ক্লান্তি এনে দেয়।

সিরিজ়ে এমন কোনও বাঁক নেই, যা দর্শককে চমকে দেবে, সেখানেই তিগমাংশুর থ্রিলার ব্যর্থ। ‘সাহেব বিবি গ্যাংস্টার’, ‘পান সিংহ তোমর’-এর পরিচালকের কাছ থেকে এর চেয়ে বেশি প্রত্যাশা ছিল। দেখা যাক দ্বিতীয় সিজ়নে তিনি সেই প্রত্যাশার সম্মান রাখতে পারেন কি না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন