মাটি কামড়ে পড়ে একা লড়ছেন কঙ্গনা

ছ বিটি কার? কঙ্গনার না কি রানি লক্ষ্মীবাইয়ের? অবশ্যই কঙ্গনার। রানি লক্ষ্মীবাইকে নিয়ে লেখা সুভদ্রাকুমারী চৌহানের প‌ঙ্‌ক্তি ভীষণ জনপ্রিয়— ‘বুন্দেলে হরবোলো কে মুহ হমনে সুনি কহানি থি/ খুব লড়ি মর্দানি উয়ো তো ঝাঁসি ওয়ালি রানি থি।’

Advertisement

রূম্পা দাস

শেষ আপডেট: ২৬ জানুয়ারি ২০১৯ ০২:০৫
Share:

ছবিটি কার? কঙ্গনার না কি রানি লক্ষ্মীবাইয়ের? অবশ্যই কঙ্গনার। রানি লক্ষ্মীবাইকে নিয়ে লেখা সুভদ্রাকুমারী চৌহানের প‌ঙ্‌ক্তি ভীষণ জনপ্রিয়— ‘বুন্দেলে হরবোলো কে মুহ হমনে সুনি কহানি থি/ খুব লড়ি মর্দানি উয়ো তো ঝাঁসি ওয়ালি রানি থি।’ লক্ষ্মীবাইয়ের সংগ্রাম, অবদান প্রশ্নাতীত। কিন্তু তাঁকে নিয়ে বায়োপিক তৈরি করতে গিয়ে যথার্থই পুরুষালি হয়ে উঠেছেন কঙ্গনা রানাউত। একা কাঁধে নিয়ে আড়াই ঘণ্টার একটা ছবি টানতে পেরেছেন! এখানেই তিনি সফল।

Advertisement

ছবি বানানোয় কম সমস্যা হয়নি। পরিচালকের ছেড়ে যাওয়া, কঙ্গনার পরিচালনা, করণী সেনার হুমকি... কিন্তু শেষ অবধি যাঁর টানে বসে থাকা যায় হলে, তিনি কঙ্গনা। ‘মণিকর্ণিকা: দ্য কুইন অব ঝাঁসি’র গল্প শুরু বারাণসীর ঘাট থেকে। সেখান থেকে বিথুরে মণিকর্ণিকা ওরফে আদরের মনু নজরে পড়ে দীক্ষিতের (কুলভূষণ খারবান্দা)। এর পরে নওয়ালকর বংশের গঙ্গাধর রাওয়ের (যিশু সেনগুপ্ত) সঙ্গে মনুর বিয়ে, ঝাঁসির রানি হওয়া, নতুন নামকরণ, সন্তান দামোদরের জন্ম ও মৃত্যু, দত্তক নেওয়া, ব্রিটিশের কাছে মাথা নত না করা, যুদ্ধ এবং মৃত্যু... ঘটনাপ্রবাহ এমনই। প্রথমার্ধ বেশ শ্লথ। গতি এসেছে বিরতির পরে। চিত্রনাট্যের বুনন আলগা ঠেকে। তবে বেশ কিছু দৃশ্যায়ন মনে রাখার মতো। বিশেষত, ওই জায়গাটা... রানিকে মারতে আসা তৃষ্ণার্ত হিউ রোজ় জল চাইতে এসেছে একটি মেয়ের কাছে। হাসিমুখে সে কুয়ো থেকে জল তুলে দিয়েছে। পান করে মেয়েটির নাম ‘লক্ষ্মী’ জানতে পেরে সেখান থেকে চলে যায় রোজ়। পিছনে তখন গাছ থেকে ঝুলছে শাড়ি পরা দু’টি পা! চমকে উঠতে হয় বইকী।

সিনেমা শুরুর দু’-তিন মিনিট পরেই কঙ্গনার এন্ট্রি। একটা সময়ে মনে হতে পারে, প্রত্যেক দৃশ্যেই কঙ্গনা! কিন্তু একঘেয়েমির অবকাশ দেননি নায়িকা। বাঘকে ঘায়েল করার পরেই তার শুশ্রূষা করার কোমল হৃদয়, সন্তানমৃত্যুতে হৃদয়বিদীর্ণ যন্ত্রণা থেকে শুরু করে সদ্য বিধবা রানির ঝাঁসির জন্য এগিয়ে যাওয়া বা তরবারিচালনা, ঘোড়সওয়ারি... দাপুটে অভিনয় কঙ্গনার। যুদ্ধবিধ্বস্ত রানি যখন পিঠে ছেলেকে বেঁধে ঘোড়ায় ঝাঁসি ছাড়েন, তাঁর মনে পড়ে যায় রাজ্যে প্রথম পা রাখার স্মৃতি। ক্লান্ত-রক্তাক্ত যন্ত্রণা আর সুখস্মৃতি মেদুর বেদনা... কঙ্গনার অভিব্যক্তি বহু দিন মনে রয়ে যাবে। ছবিতে নানা চরিত্রের আনাগোনা— তাঁতিয়া (অতুল কুলকার্নি), গউস (ড্যানি ড্যানজ়ো‌ংপা)। তবে তাঁদের আর একটু কাজে লাগালে মন্দ লাগত না। যিশু অবশ্যই রাজকীয় ও স্বমহিমায় উজ্জ্বল। ঝলকারি বাইয়ের চরিত্রে অঙ্কিতা লোখণ্ডে মন্দ নন। তবে শঙ্কর-এহসান-লয়ের সঙ্গীত দাগ কাটতে পারল না। কঙ্গনার একার পরিচালনায় ছবির অপেক্ষা রইল।

Advertisement

মণিকর্ণিকা: দ্য কুইন অব ঝাঁসি পরিচালনা: কঙ্গনা রানাউত, রাধা কৃষ্ণ জাগরলামুদি অভিনয়: কঙ্গনা, যিশু, ড্যানি, অতুল, কুলভূষণ, অঙ্কিতা ৬/১০

ছবির শুরুতেই ছিল ঘোষণা— ইতিহাসনির্ভর হলেও সিনেমা তৈরির প্রয়োজনে কল্পনার সাহায্য নেওয়া হয়েছে। ১৮৫৭-৫৮ সালে অবিভক্ত ভারতবর্ষের রাজ্যগুলি নিজেদের স্বার্থের জন্যই লড়েছিল... কেউ ব্রিটিশদের বার্ষিক ভাতার দান মানতে না চেয়ে, কেউ ধর্মের খাতিরে, কেউ মাথা নিচু করে নিজেকে বিকিয়ে না দেওয়ার অটল প্রতিজ্ঞায়। সাধারণ শত্রু ইংরেজ হওয়ায় অনেকেই পাশাপাশি এসেছে। কিন্তু তখনও পর্যন্ত ভারতকে ঐক্যবদ্ধ করে তোলার কথা কেউ ভাবেনি। ফলে লক্ষ্মীবাইয়ের মুখে ‘স্বতন্ত্র ভারত’-এর বার্তা খানিক বিতর্ক উস্কে দেয় অবশ্যই। যেখানে রুপোলি পর্দার মাধ্যমেই ইতিহাস পৌঁছয় অনেকের কাছে, সেখানে ছবি তৈরিতে ইতিহাসের প্রতি আর একটু যত্নবান হওয়ার দায়িত্ব বর্তায় নিশ্চয়ই!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন