Rishi Kapoor

আমি আর আমার হুইস্কি...

সোজাসাপটা, রঙিন মেজাজের সেই প্রাণখোলা মানুষটা অসুস্থতার পরেও মদ্যপান ছাড়তে পারেননি, শখ বলতে ওটাই ছিল। এক ভক্ত প্রশ্ন করেছিলেন, কাছের লোকেদের থেকে দূরে নিউ ইয়র্কে ছুটি কাটাতে কেমন লাগছে?

Advertisement
শেষ আপডেট: ০১ মে ২০২০ ০১:৩৯
Share:

সপরিবার

তাঁর আত্মজীবনীর নাম আর টুইটারের ইন্ট্রো... এই দুটো দেখলেই স্পষ্ট হয়ে যায় ব্যক্তি ঋষি কপূর কতটা ভালনারেবল ছিলেন। সপাট, স্পষ্টবক্তা, খুল্লাম খুল্লা ঋষিকে ঢিল মারলে পাটকেল খেতেই হবে। এই গত মার্চ মাসেরই ঘটনা। করোনাভাইরাসের কারণে সকলকে বাড়িতে থাকার বার্তা দিয়েছিলেন ঋষি। টুইটারে একজন তাঁকে প্রশ্ন করেন, ঋষি বাড়িতে যথেষ্ট পরিমাণে স্কচ মজুত রেখেছেন কি না। তাতে চটে গিয়ে ঋষি বলেন, ‘‘এটা ইয়ার্কির বিষয় নয়। আমাকে, আমার জীবনযাপনকে নিয়ে ঠাট্টা করলে, আমি তাকে ব্লক করে দেব।’’ ওই সময়েই লিকার শপ খোলা রাখার আর্জি জানিয়ে একাধিক টুইট করেন ঋষি। তাতে ট্রোলড হতেই, টুইটার হ্যান্ডলের ইন্ট্রো বদলে দেন অভিনেতা। স্পষ্ট করে দেন, তাঁকে নিয়ে ঠাট্টা-তামাশা কখনও বরদাস্ত করবেন না।

Advertisement

অসুস্থতার পরেও মদ্যপান ছাড়তে পারেননি, শখ বলতে ওটাই ছিল। এক ভক্ত প্রশ্ন করেছিলেন, কাছের লোকেদের থেকে দূরে নিউ ইয়র্কে ছুটি কাটাতে কেমন লাগছে? ঋষির মন্তব্য, ‘‘আমি আমার হুইস্কি... এই জিনিসটাই আমাকে বাড়ি থেকে এত দূরে থাকার দুঃখ ভুলিয়ে রেখেছে।’’ ১১ মাস ১১ দিন স্বজনদের থেকে দূরে ছিলেন ঋষি।

খাদ্যরসিক অভিনেতা কোনও রেস্তরাঁয় গেলে তার বিবরণ দিতেন। ভাল লাগলে প্রশংসা, নয়তো কড়া সমালোচনা। গত বছর নিজের জন্মদিনে স্ত্রী নীতুকে নিয়ে গিয়েছিলেন নিউ ইয়র্কের এক নামী রেস্তরাঁয়। খাবার খারাপ লাগায়, টুইটারে জুড়ে মন্দ উপাখ্যান। খেতে ভালবাসতেন রায়তা সহযোগে আলুর পরোটা। বাড়ির খাবার মিস করতেন বিদেশে। সহকর্মী-বন্ধু অনুপম খেরের নিউ ইয়র্কের অ্যাপার্টমেন্টে গিয়ে হাতে গড়া আটার রুটি খেয়ে শিশুর মতো উচ্ছ্বসিত হয়ে পোস্ট দিয়েছিলেন।

Advertisement

আরও পড়ুন: হাসপাতালের বেডে শুয়ে ভক্তের গান শুনে কী বলেছিলেন ঋষি কপূর?

সোশ্যাল মিডিয়ার ঝগড়াগুলোও তাঁর শিশুসুলভ স্বভাবেরই বর্হিপ্রকাশ। সেলেব্রিটিদের মাপসই আচরণের ঊর্ধ্বে ছিলেন ঋষি। তাঁর মন্তব্য পরখ করলে শভিনিস্টিক গন্ধ পাওয়া যায়। টুইটার অনুধাবন করলে বোঝা যায়, কতটা ‘মুহফট’ ছিলেন। মিডিয়ার সঙ্গেও বহু বার ঝগড়া বাধিয়েছেন। আবার বিপরীত দিকে অসম্ভব বন্ধুবৎসল। বিদেশ-বাসে তাঁকে কেউ দেখতে গেলে ভারী খুশি হতেন। মুকেশ-নীতা অম্বানি, সুনীল গাওস্কর, কপিল দেব, প্রিয়ঙ্কা চোপড়া, বোমান ইরানি... তালিকা বুঝিয়ে দেয় ঋষির বিস্তার। আর ছিল ‘নাম’-এর গরিমা। একবার লিখেছিলেন, ‘‘ঋষি কপূর নামটা তৈরি করতে আমাকে অনেক খাটতে হয়েছে। ছেলেমেয়েদের ডাকনাম দেওয়া উচিত নয়। আমি অন্তত দিইনি।’’

পছন্দ-অপছন্দ স্পষ্ট বুঝিয়ে দিতেন। নন্দিতা দাসের পরিচালনায় ‘মান্টো’য় কাজ করলেও বলেছিলেন, ‘‘এ ছবি কেউ দেখতে যাবে না।’’ জ়োয়া আখতারের ‘লাক বাই চান্স’-এ ঋষির মুখে একটা সংলাপ ছিল, ‘ওয়ে ইনস্টিটিউট, ম্যায় ইয়ে ফিল্ম ফেস্টিভ্যালকে লিয়ে নহি বনা রহা হুঁ।’ কথাটা সরাসরি অনুরাগ কাশ্যপের মুখের উপরে বলেছিলেন। ইন্টালেকচুয়াল ফিল্ম ঘরানায় বিশ্বাস করতে না। যেমন ‘দি আইরিশম্যান’ এবং ‘ওয়ান্স আপন আ টাইম ইন হলিউড’ ছবি দু’টিকে বলেছিলেন, ‘‘বড্ড লম্বা আর বোরিং।’’

রাজনীতি নিয়ে নিজস্ব অভিজ্ঞানও লুকোননি। প্রধানমন্ত্রীর ডাকা জনতা কার্ফুর দিন বাড়ির বারান্দায় দাঁড়িয়ে থালা বাজিয়েছেন। সবই তো সে দিনের কথা... কণিকা কপূরকে নিয়ে শোরগোলের মাঝে ঋষি টুইটারে লিখলেন, ‘‘আজ কাল কিছু ‘কপূর’দের সময় খারাপ যাচ্ছে। ভয় লাগছে... ভগবান অন্যান্য ‘কপূরদের’ রক্ষা করুন। কোনও ভুল না হয়ে যায়।’’

ভুল ভগবানেরও হয়! এই আকস্মিক ও লোকারণ্যহীন বিদায়-যাত্রা অন্তত ঋষি কপূরের মতো মাপের অভিনেতার প্রাপ্য ছিল না।

আরও পড়ুন: ঋষি কপূর অভিনীত সেরা ১০ সিনেমা, যা তাঁকে অবিস্মরণীয় করে রাখবে

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন