এত কেন নামের খোঁটা, ‘তৈমুর’ নিয়ে ক্ষুব্ধ ঋষি

৪৮ ঘণ্টা আগে টুইটারে তিনি সুখবরটা জানিয়েছিলেন। তাঁর নাতি হয়েছে। অর্থাৎ তাঁর ভাইঝির পুত্র। বলেছিলেন, ‘‘মা ও বাচ্চা ভাল আছে। আপনাদের শুভেচ্ছা যথাস্থানে পৌঁছে দেব। ধন্যবাদ।’’

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৩ ডিসেম্বর ২০১৬ ০৩:২৯
Share:

খুদে তৈমুরের সঙ্গে সইফ-করিনা। মুম্বইয়ের বাড়িতে। পিটিআইয়ের তোলা ফাইল ছবি।

৪৮ ঘণ্টা আগে টুইটারে তিনি সুখবরটা জানিয়েছিলেন। তাঁর নাতি হয়েছে। অর্থাৎ তাঁর ভাইঝির পুত্র। বলেছিলেন, ‘‘মা ও বাচ্চা ভাল আছে। আপনাদের শুভেচ্ছা যথাস্থানে পৌঁছে দেব। ধন্যবাদ।’’

Advertisement

৪৮ ঘণ্টা পরে সেই ঋষি কপূরই লড়ে যাচ্ছেন চতুর্দিক থেকে ছুটে আসা তিরের সঙ্গে। প্রবীণ অভিনেতা দেখছেন, ডিজিটাল ময়দান এক রকম ছিঁড়ে খাচ্ছে তাঁদের স্বনামধন্য কপূর পরিবারকে। তাঁর ভাইঝি করিনা কপূর, করিনার স্বামী সইফ আলি খানকে। রেহাই পায়নি ভাইঝির বিখ্যাত শ্বশুরবাড়িও। কোন আইএসআই অফিসার নাকি পটৌডি পরিবারের আত্মীয়— রীতিমতো ছবি-টবি দিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় এমন অভিযোগও তুলেছেন একটি টুইটার অ্যাকাউন্টের মালিক।

কেন এই বিষোদ্গার, গত দু’দিনে মোটামুটি সারা দেশ তা জানে। সইফ-করিনা তাঁদের সদ্যোজাত সন্তানের নাম রেখেছেন তৈমুর আলি খান পটৌডী। তার পর থেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘গেল গেল’ রব। অনেকেরই প্রশ্ন, কোন আক্কেলে এই নামটা রাখা হল? ১৩৯৮ সালে দিল্লি দখল করে লক্ষাধিক মানুষকে খুন করা, দেদার লুঠপাটে একাধিক শহর শ্মশান করে দেওয়া তুর্কি-মোঙ্গল শাসক তৈমুর লঙ্গের কথা কি ভুলে গিয়েছিলেন সইফ-করিনা? গত ২০ তারিখ তৈমুরের জন্ম ও নাম ঘোষণার পর থেকেই সেই আলোচনা ‘সমানে চলিতেছে’। এক সময়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় আলোচনার শীর্ষে থাকা প্রথম দশটি বিষয় (ট্রেন্ডিং)-এর মধ্যে একটি ছিল ‘#তৈমুর’!

Advertisement

পটৌডী বা কপূর পরিবারের কেউ গত কাল পর্যন্ত এ নিয়ে মুখ খোলেননি। যেটা আজ করেছেন তিতিবিরক্ত ঋষি। টুইটারে তিনি লিখেছেন, ‘‘বাপ-মা তাদের বাচ্চার নাম রেখেছে। তা নিয়ে এত লোকের চিন্তার কী আছে! তুমহারে বেটাকা নাম তো নেহি রাখা হ্যায়।’’ তৎক্ষণাৎ ঋষির ওয়ালে এক ‘প্রতিবাদী পাল্টা লিখেছেন, ‘‘আপনারা আর নাম পেলেন না!’’ আর এক জন লিখেছেন, ‘‘আপনি ইতিহাসটা ভাল করে পড়ুন!’’

তিনি তৈমুর ‘লঙ্গ’

• তুর্কি-মোঙ্গল শাসক

•রাজত্বকাল: ১৩৭০-১৪০৫ খ্রিস্টাব্দ

•অল্প বয়সে একটি পা ক্ষতিগ্রস্ত, তাই ‘লঙ্গ’

•সাম্রাজ্য: আফগানিস্তান, পারস্য, বাগদাদ-সহ বিরাট অংশ জুড়ে
•১৩৯৮: সিন্ধু নদ পেরিয়ে মেরঠ হয়ে দিল্লি দখল

•অন্তত এক লক্ষ ভারতীয় বন্দিকে খুন

•কার্যত ধুলোয় মিশে যায় দিল্লি। শোনা যায়, ছিন্নমুণ্ডগুলি স্তম্ভের আকারে সাজিয়ে দিয়েছিল তাঁর সেনা

• লুঠ হয় বিপুল সম্পদ

এর পরেও টুইট করেছেন রণবীর কপূরের বাবা। বলেছেন, ‘‘আলেকজান্দার-সিকান্দার কোনও সাধুসন্ত ছিলেন না। এগুলো বিশ্বজুড়ে প্রচলিত নাম। আপনা কাম করো!’’ ক্রমশ দেখা যায়, মেজাজ হারিয়েছেন ঋষি। এক সময়ে ছাপার অযোগ্য শব্দ প্রয়োগ করে হুমকি দিয়েছেন, এই চর্চা বন্ধ না হলে তিনি টুইটার অ্যাকাউন্ট ধরে ধরে ‘ব্লক’ করবেন।

হুমকিতে কাজ হওয়ার কথা ছিল না। হয়ওনি। উল্টে সইফ-করিনার বাপ-ঠাকুর্দা ধরে চলছে টানাটানি। তৈমুরের জন্মের দিন, অর্থাৎ ২০ তারিখ রাতে়ই হোয়াটস্অ্যাপে ছড়িয়ে পড়েছিল তার একটি বংশলতিকা। তৈমুরের ঠাকুমা শর্মিলা ঠাকুরের সূত্র ধরে যার শেষে বলা হচ্ছে, ‘রবীন্দ্রনাথের দাদুর ভাইপোর নাতির দৌহিত্রীর নাতি তৈমুর।’

এ তো তা-ও নিরামিষ। ঋষি কপূরের ওয়ালেই রয়েছে একেবারে চাঁছাছোলা কটাক্ষ— ‘‘পৃথ্বীরাজ কপূর থেকে তৈমুর আলি খান! আপনার পূর্বপুরুষেরা আজ কাঁদছেন। লজ্জা!’’ আর রয়েছে পটৌডীদের পাক-যোগ টেনে আনা। আইএসআই অফিসারের নাম জড়ানো তো ছিলই। তার পর এমন টুইটও এসেছে— ‘‘সইফ-করিনার সঙ্গে পাকিস্তানের মিল কী? একটি ক্ষেপণাস্ত্র, যার নাম তৈমুর!’’

ঘুরেফিরে যে প্রশ্নটা বারবার উঠছে, তা হল নামকরণের মতো একটি একান্ত পারিবারিক বিষয় নিয়ে বহির্জগতের নীতি-পুলিশি কতটা যুক্তিযুক্ত? ইতিহাসবিদ গৌতম ভদ্র বলছেন, ‘‘কার নাম তৈমুর বা কংস রাখা হবে, সেটা তার বাবা মায়ের ব্যক্তিগত ব্যাপার। এ নিয়ে বিতর্ক অর্থহীন। মধ্য এশিয়ার পরিপ্রেক্ষিতে দেখলে তৈমুর লঙ্গ এক জন বড় শাসক। তাঁর সুসংহত সাম্রাজ্য ছিল। এ কথা ঠিক, তিনি ভারতে এসেছিলেন লুঠপাট করতে। কিন্তু শাসনব্যবস্থা থেকে মনসবদারি প্রথা— অনেক বিষয়েই তাঁর অবদান রয়েছে।’’ তাঁর প্রশ্ন, বাংলাতেও তো বর্গীর হানা হয়েছে। তা বলে কি শিবাজির নাম বাতিল হয়ে গিয়েছে?

আর এক ইতিহাসবিদ তথা তৃণমূল সাংসদ সুগত বসুও মনে করেন, তৈমুর নাম নিয়ে বিতর্কের অবকাশ নেই। তাঁর কথায়, ‘‘তৈমুর একটি সুন্দর নাম। ইসলামিক জগতে নামটির যথেষ্ট প্রচলন আছে। এক জন তৈমুর মধ্য এশিয়ায় সাম্রাজ্য তৈরি করেছিলেন। দিল্লি আক্রমণও করেন। তার সঙ্গে নামের কী সম্পর্ক?’’

তুর্কি শব্দ ‘তৈমুর’-এর অর্থ লোহা। সইফের এক ভাগ্নের নামই নাকি তৈমুর। বিশ্ববিখ্যাত এক ফাস্ট বোলারও ১৬ বছর আগে নিজের জ্যেষ্ঠ পুত্রের নাম রেখেছিলেন তৈমুর। ওয়াসিম আক্রম।

কলকাতার ক্রিকেটরসিক আক্ষেপ করছিলেন, ‘‘বাচ্চাটার নামের শেষ শব্দটা নিয়ে যদি এর সিকিভাগও চর্চা হতো। কে বলতে পারে, ‘খোকা পটৌডী’ ব্যাট হাতে বিশ্বজয়ে বেরোবে না!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন