Entertainment News

উত্পলেন্দু চক্রবর্তী আমার বায়োলজিক্যাল বাবা, ব্যস ওই পর্যন্তই...

আমার বায়োলজিক্যাল বাবা চিত্র পরিচালক উত্পলেন্দু চক্রবর্তীকে নিয়ে আনন্দবাজারে একটি প্রতিবেদন বেরিয়েছিল। তাঁর অসুস্থতা, অর্থাভাবের কথা লেখা ছিল সেখানে। আনন্দবাজারকে তিনি বলেন, ‘‘বড় চিত্রাঙ্গদা আমার ভালবাসা, আর ছোট ঋতাভরী আমার মায়া, দুর্বলতা। কেন যে ওরা বাপের সঙ্গে যোগাযোগটা রাখে না!’’

Advertisement

ঋতাভরী চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ১৪ জুন ২০১৭ ১১:৩১
Share:

ঋতাভরী চক্রবর্তী।— ফাইল চিত্র।

যে বিষয়টা নিয়ে লিখছি, সেটা নিয়ে আলোচনা যত দ্রুত বন্ধ হয় ততই ভাল। আসলে আলোচনা যাতে বন্ধ হয় সে জন্যই ফেসবুকে নিজের মতটা জানিয়েছিলাম। এ বার আনন্দবাজারে লিখছি।

Advertisement

গত ৮ জুলাই আমার বায়োলজিক্যাল বাবা চিত্র পরিচালক উত্পলেন্দু চক্রবর্তীকে নিয়ে আনন্দবাজারে একটি প্রতিবেদন বেরিয়েছিল। তাঁর অসুস্থতা, অর্থাভাবের কথা লেখা ছিল সেখানে। আনন্দবাজারকে তিনি বলেন, ‘‘বড় চিত্রাঙ্গদা আমার ভালবাসা, আর ছোট ঋতাভরী আমার মায়া, দুর্বলতা। কেন যে ওরা বাপের সঙ্গে যোগাযোগটা রাখে না!’’

আরও পড়ুন, অর্থাভাব অসুস্থতায় জেরবার উৎপলেন্দু

Advertisement

আমি যে ওঁর ‘মায়া’ এটা আমাকে কখনও বলেননি। সে যাই হোক, এর পর থেকেই মা-কে (চিত্র পরিচালক শতরূপা সান্যাল) এবং আমাকে অনেক প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়। কেউ কেউ আবার আমাদের অ্যাকিউজ করতে শুরু করেন। অনেকেই বলা শুরু করলেন, মা অথবা দিদি বা আমার এখন বাবার দেখাশোনা করা উচিত। এ সব দেখে বিরক্ত হয়ে মা আনন্দবাজারকে নিজের মতামত জানিয়েছিলেন। মা বলেছিলেন, ‘‘২০০০ সালে আমাদের বিবাহবিচ্ছেদ হয়। এত দিন পর্যন্ত উৎপলেন্দু চক্রবর্তী তাঁর মেয়েদের একটা লজেন্সও কিনে দেননি। আমি ভালবেসে, ওঁর ট্যালেন্টের কাছে নতজানু হয়েছিলাম। আর উনি দুর্বল ভেবে রোজ মদ খেয়ে আমায় মারতেন। দেখলাম, আমার মেয়েরা ওঁর এই নিয়মিত অত্যাচারে ভয় পেয়ে যাচ্ছে। কেউ চিৎকার করে কথা বললে, আমার বড় মেয়ে ভয়ে টয়লেট করে দিত। ছোট মেয়ে কুঁকড়ে যাচ্ছিল। ওদের কোনও ব্যক্তিত্ব তৈরি হচ্ছিল না। বেশি দিন থাকলে আমার সঙ্গে আমার মেয়েদের উনি মেরেই ফেলতেন।’’


মা শতরূপার সঙ্গে শিকাগোয় বেড়ানোর ফাঁকে ঋতাভরী। ছবি ঋতাভরীর ফেসবুক পেজ থেকে।

এর পর আমার মনে হল, আর চুপ করে থাকা ঠিক হবে না। হ্যাঁ, উত্পলেন্দু চক্রবর্তী আমার বায়োলজিক্যাল বাবা। কিন্তু ওই পর্যন্তই। আমার মা-কে দিনের পর দিন মদ খেয়ে শারীরিক এবং মানসিক অত্যাচার করতেন উনি। যে কারণে সংসার ভাঙে। আমার তখন বছর চারেক বয়স…। এতগুলো বছর উনি আমাদের কোনও ভাবে সাপোর্ট করেননি। মা একা হাতে আমাদের দু’বোনকে মানুষ করেছেন। যখন ডিভোর্সের জন্য কোর্ট কেস চলছিল তখন নিজের মান বাঁচাতে উনি এটা বলতেও বাকি রাখেননি যে, ছোট মেয়ে ওঁর নিজের নয়! আজকে হঠাত্ আমি ওঁর মায়া!

উনি সত্যিই ভাল নেই, খবরটা দেখে খারাপ লাগল। কিন্তু আরও খারাপ লাগল যে, উনি নিজের আর এক স্ত্রী, ছেলে বা ভাই-বোনেদের কথা বলেননি। সব দায়িত্ব যেন আমাদের তিন জনের। যাদের সিকি পয়সা দেওয়া তো দূরের কথা ফোন করে ‘কেমন আছিস?’ পর্যন্ত জিজ্ঞেস করেননি।

আরও পড়ুন, ‘আমার সঙ্গে মেয়েদেরও মেরেই ফেলত উৎপলেন্দু’

আমার মায়ের দুঃখ, কষ্ট, ২২ বছরের লড়াই— আমি ওই প্রতিবেদনের জন্য নষ্ট হতে দিতে পারি না। উনি গুণী মানুষ। জাতীয় পুরস্কার পাওয়া চিত্র পরিচালক। আমার মাকে মদ্যপ অবস্থায় মারতে মারতে বহু বার বলেছেন, মা তাঁর ‘যোগ্য’ নয়। আমরা সেই দিনগুলো ভুলে যেতে চেয়েছিলাম। ভুলে যেতেই চাই। তাই দয়া করে ওঁকে আমার বাবা বলবেন না। …এক জন অসহায়, অসুস্থ মানুষের পাশে আমি দাঁড়াব। কিন্তু আমার ‘বাবা’, ‘দায়িত্ব’— এই শব্দগুলো শুটিংয়ে পাবলিকলি ওঁর হাতে মায়ের চড় বা গালাগালি খাওয়ার থেকেও বেশি অপমানজনক!


মা ও মেয়ে। ছবি ঋতাভরীর ফেসবুক পেজ থেকে।

আজ আপনারা আমাদের সাফল্যটাই দেখতে পান। আমার মায়ের সারা গায়ে মারের দাগ বা মদ খেয়ে মাঝ রাতে দিদির অন্তর্বাস ধরে ওঁর টানাটানি করার কারণে আতঙ্ক— এগুলো দেখতে পাবেন না। সেটা আমি জানি। কিন্তু ‘বাবা’ শব্দটার যে কী মানে, তা কোনও দিনই যাঁর জানা ছিল না, তাঁকে বোঝাতে আসবেন না, এটা আমার অনুরোধ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন