আমার সারাটা দিন...

ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তকে পাওয়া গেল অন্য মুডে। মেয়ের আবদার, স্বামীর শখের খেয়াল রাখা আবার মিটিংও সারছেন... ব্যালান্সিং যাকে বলেঋতুপর্ণা সেনগুপ্তকে পাওয়া গেল অন্য মুডে। মেয়ের আবদার, স্বামীর শখের খেয়াল রাখা আবার মিটিংও সারছেন... ব্যালান্সিং যাকে বলে

Advertisement

পারমিতা সাহা

শেষ আপডেট: ০৪ জানুয়ারি ২০১৮ ০০:২২
Share:

পোশাক: আনন্দ শাড়ি, রাসেল স্ট্রিট; জুয়েলারি: মায়রা বাই রাধিকা জৈন; মেকআপ: নবীন দাস; ছবি: দেবর্ষি সরকার

লেক গার্ডেন্সে অভিনেত্রীর বাড়িতে পৌঁছতেই সরোদের মিষ্টি সুর কানে এল। একতলার ড্রয়িংরুমে বসার মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই তিনি চলে এলেন। ‘‘সঞ্জয় (চক্রবর্তী, স্বামী) আর অঙ্কন (ছেলে) এসেছে সিঙ্গাপুর থেকে। সঞ্জয় খুব ভাল সরোদ বাজায়, জানেন। যখনই ও শহরে আসে, যারা বাজনা শুনতে ভালবাসে, তাদের ডাকি,’’ বললেন গর্বিত নায়িকা-গিন্নি ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। তিন তলায় সরোদ শোনার আয়োজন হলেও একতলায় তখনও চলছে জরুরি মিটিং। ‘‘চলুন দোতলায় গিয়ে বসি, নিরিবিলিতে কথা বলা যাবে।’’ দোতলায় গিয়ে বসলেও নিরিবিলিতে তাঁকে পাওয়া দুষ্কর। কখনও মিটিং, আবার বরের অনুষ্ঠানে তাঁর ক্ষণিকের উপস্থিতি... অতিথি আপ্যায়নও চলছে— ‘কাবাব খাও না’, ‘ডিনার করে যেও’। আর এ সবের মাঝেই মাল্টিটাস্কিং অভিনেত্রীর সঙ্গে এগোতে লাগল কথোপকথন।

Advertisement

‘ভালবাসার বাড়ি’, ‘গুডনাইট সিটি’, ‘রং বেরঙের কড়ি’, ‘ধারাস্নান’, ‘নীলাচলে কিরীটি’, ‘আমার লবঙ্গলতা’, ‘বসু পরিবার’... আপনার মুক্তির অপেক্ষায় থাকা ছবির লিস্ট তো যে কোনও নায়িকাকে লজ্জা দেবে! হাসলেন ঋতুপর্ণা, চোখে আত্মবিশ্বাস। ‘‘আমি মস্তিষ্কে এনার্জি ইঞ্জেকশন দিই। আসলে অর্থ রোজগারের চেয়েও আমার কাছে অর্থপূর্ণ জীবনটা বেশি গুরুত্ব রাখে। তাই বেঁচে থাকুক আমার অভিনীত চরিত্রগুলো— রোমিতা (‘দহন’), পারমিতা (‘পারমিতার একদিন’), আলো (‘আলো’), নীহারিকা (‘মুক্তধারা’)... আবার কমার্শিয়াল ছবিগুলোর মধ্য দিয়েও আমি ভীষণ ভাবে বেঁচে। আর হেলায় জীবনটা কাটাতে আমি পারব না।’’ এত বছর পরও সৃষ্টির তাগিদ, কাজের খিদেটা নিজের মধ্যে বাঁচিয়ে রাখা কঠিন বইকী! তিন তলা থেকে ভেসে আসা সরোদের সুর বোধহয় অন্যমনস্ক করে দিল তাঁকে। একটু চুপ করে থেকে বললেন, ‘‘জীবনটাকে পারপাসফুল বানাতে চেয়েছি, অন্যদের জন্যও। পরিশ্রম করাটাকে আমি এনজয় করি। কারও উপকারে লাগলে, যতটা না তার ভাল লাগে, তার চেয়ে বেশি লাগে আমার। চেনা গতে দেখা মানুষদের চেয়ে আমি তাই অনেকটাই আলাদা।’’

প্রাইভেট অ্যাকুইটি ইনভেস্টর সঞ্জয় না কি আপনি, ব্যস্ততা নিয়ে আপনাদের কম্পিটিশন চলে? হা-হা করে হেসে বললেন, ‘‘ভাল বলেছেন! ও-ও খুবই ব্যস্ত। ছেলের পড়াশোনা, ট্র্যাভেলিং। তেরোই ডিসেম্বর আমাদের বিবাহবার্ষিকী গেল। তখন কৌশিকদা’র (গঙ্গোপাধ্যায়) ছবি ‘দৃষ্টিকোণ’-এর শ্যুটিং চলছিল। শ্যুটিংয়ে যখন শিফটিং হচ্ছে, তখন ওর সঙ্গে একটা কুইক লাঞ্চ খেয়ে চট করে ফিরে গেলাম সেটে। এখনও বরের সঙ্গে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখা করছি। ক’ বছর আগেও এই সময়টায় ‘রাজকাহিনি’র শ্যুটিং চলছিল। আমি আর সঞ্জয় মিট করেছিলাম ব্যাঙ্ককে। সারাটা দিন ওখানে বসে ছিল। রাগারাগি করল।’’ তার মানে অপেক্ষা করানোর যে ‘সুনাম’ আছে, সে ব্যাপারে আপনার স্বামীও ভুক্তভোগী! ‘‘এটা আমার সম্পর্কে বেশি বলা হয়, অত দেরি আমি করি না।’’

Advertisement

আরও পড়ুন: দেড় ঘণ্টার ‘সার্কাস’

সপরিবার ঋতুপর্ণা

বাড়িতে ক্রমশ অতিথিদের ভিড় বাড়ছে। তাঁদের সঙ্গে একটু দেখা করে অবাধ্য চুল ক্লাচারের শাসনে বেঁধে আবার এসে বসলেন। পরিবারকে সময় দেন কী ভাবে? ‘‘কেরিয়ারের টপে থাকতেই আমি বিয়ে করেছি। দুই সন্তান বড় হচ্ছে। ওদের সমস্যা নিয়ে আমিও যে চিন্তিত, সেই নিশ্চয়তাটা আমি সন্তানদের দিই। তবে এ ব্যাপারে সঞ্জয়ের ভূমিকা বেশি। অঙ্কনের পড়াশোনা থেকে সব কিছু ও দেখে। গাজুও বাবার সঙ্গে খুব অ্যাটাচড। আমিও মেয়েকে অনেক জায়গায় নিয়ে যাই। ওর মা কেন এত ব্যস্ত, সেটা বোঝানোর চেষ্টা করি।’’

মেয়ের বায়না সামলান কী ভাবে? ‘‘ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি আমাকে শিখিয়েছে পেশেন্স। সেই কারণেই হয়তো ওকে সামলাতে পারি। প্রচণ্ড ক্লান্ত হয়ে বাড়ি ফেরার পরও যখন গাজু কোনও কিছু নিয়ে জেদ করে বা কিছু বলতে চায়, আমি মন দিয়ে শুনি। ওর সময়টুকুতে ওকে হস্তক্ষেপ না করা, সেটা আমাকে শিখতে হয়েছে। আমি বেরোনোর সময় মেয়ে যখন কাঁদে, এক সময় ছেলেও কাঁদত, খুব কষ্ট হয়। ছেলে বলে, মা ওই সময়টা আমিও তোমাকে খুব মিস করেছি। এখন এ সবের গুরুত্ব বুঝতে শিখেছি,’’ মেয়ের চুল ঘেঁটে দিতে-দিতে উত্তর দিলেন ঋষণার মা।

এ তো গেল ছেলেমেয়ের কথা। স্বামীর সঙ্গে দীর্ঘ আঠেরো বছর ধরে লং ডিসট্যান্স ম্যারেজ মেনটেন করছেন কী ভাবে? হাতের হিরের আংটি নাড়াচাড়া করতে-করতে বললেন, ‘‘আমার হাজব্যান্ডের বরাবরই অভিযোগ যে, আমি ওকে যথেষ্ট সময় দিই না। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আমার ডেডিকেশন, ইনটেনশন দেখে ও বুঝেছে, আমার সঙ্গে আরও অনেক মানুষ জড়িয়ে। এখন তো অনেক কো-আর্টিস্ট, পরিচালক ওর বন্ধু হয়ে গিয়েছে, ফলে সমস্যাটা বোঝে। সে সময় তো এটা ছিল না। শুধু বর নয়, মায়ের কাছ থেকেও আমি কমপ্লেন শুনি। কিন্তু শ্যুটিং থেকে বেরিয়ে আমিই মাকে ডাক্তার দেখাতে নিয়ে যাই।’’

দোতলার ড্রয়িংরুমে আমাদের আড্ডা চলছিল। সেখানেই একটা ঘরে ছিল অঙ্কন আর তার বন্ধুরা। ঋতুপর্ণা ছেলেকে কিছু একটা বলে এসে, আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘‘অঙ্কন ক্লাস নাইনে পড়ে। বড্ড লম্বা হয়ে গিয়েছে, না!’’ রোগা, লম্বা, চশমা পরা অঙ্কনের মিল বোধহয় বাবার সঙ্গেই বেশি। ছেলে মেয়ের মধ্যে কে বেশি বাবার আর কে মায়ের কাছের? ‘‘ছেলে-বাবার মধ্যে একটা দুর্দান্ত ইকুয়েশন আছে। গাড়ি দেখা, ফর্মুলা ওয়ান, স্টার ওয়র্স জাতীয় সিনেমা দেখা... মেয়ে তো বাবা এলে আর আর কিছু জানে না। বিবাহবার্ষিকীতে ওরা সব সময় আমাদের একটা আঁকা গিফ্‌ট করে। আমার মতো মেয়েও খুব আবেগপ্রবণ। ওর মধ্যেও একটা আর্টিস্টিক দিক আছে। কিন্তু আমাকে সব দিকগুলো সামলাতে হয়। আজ তিনটে মিটিং করলাম। গেস্টদের অ্যাটেন্ড করেছি, সঞ্জয় এ বার রাগ করবে ওর সরোদ শুনতে না বসলে। আমার কাজের সঙ্গে ওর রেষারেষি চলে। যেটা এত বছরেও বদলায়নি।’’

কিন্তু তা সত্ত্বেও আবেগপ্রবণ এক শিল্পী ও প্র্যাকটিক্যাল কর্পোরেট এক মানুষ কোনও এক জায়গায় জুড়ে যান। একটা সংসার। একটা যোগ। সেই যোগটাকে তাঁরা বিয়োগ হতে দেন না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন