পারফরম্যান্সই শেষ কথা

অনেক বাংলা সিনেমাতেই সংবাদজগতের অন্দরমহল উঠে এসেছে। কিন্তু বেশির ভাগেরই অ্যামেচারিশ দৃষ্টিভঙ্গি। দীর্ঘ দিন সাংবাদিকতা করার সুবাদে প্রতিম ডি গুপ্তর ছবি এ দোষে দুষ্ট নয়।

Advertisement

দীপান্বিতা মুখোপাধ্যায় ঘোষ

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ অগস্ট ২০১৯ ০০:০১
Share:

একটা মুহূর্ত আসছে, যেখানে শিরদাঁড়া টানটান করে বসতে হচ্ছে। আবার একটা মুহূর্ত নেহাতই পানসে। পৌনে দু’ঘণ্টা এ ভাবেই চড়াই-উতরাইয়ের আবর্তে বাঁধা। এ বার টানটান মুহূর্ত বেশি না কি ঢিলেঢালা অংশ, সেটাই আসল রহস্য। ছবির নাম যখন ‘শান্তিলাল ও প্রজাপতি রহস্য’, তখন সমালোচনাতেও না হয় একটু রহস্য রইল!

Advertisement

অনেক বাংলা সিনেমাতেই সংবাদজগতের অন্দরমহল উঠে এসেছে। কিন্তু বেশির ভাগেরই অ্যামেচারিশ দৃষ্টিভঙ্গি। দীর্ঘ দিন সাংবাদিকতা করার সুবাদে প্রতিম ডি গুপ্তর ছবি এ দোষে দুষ্ট নয়। শান্তিলাল (ঋত্বিক চক্রবর্তী) একজন সাংবাদিক। তবে ড্যাশিং রিপোর্টার বলতে যা বোঝায়, তা একেবারেই নয়। কেমন যেন ন্যাতানো হাবভাব। অফিসেও কেউ আমল দেয় না তাকে। পাতা ভরানোর জন্য ওয়েদার রিপোর্টিংয়ের বরাত দেওয়া রয়েছে, ব্যস ওইটুকুই। বাড়িতে ঝোল-ভাত খায় আর রাতের বেলা নিষিদ্ধ ছবি দেখে। এই হল শান্তিলালের দিনযাপন। উল্টো দিকে রুপোলি জগতের নায়িকা নন্দিতা (পাওলি দাম)। ইন্ডাস্ট্রির এক নম্বর হিরোইন এ বার রাজনীতির ময়দানেও নামতে চলেছে।

সব মানুষেরই দিন আসে, শান্তিলালেরও অচ্ছে দিন এল। সে প্রজাপতি (সংবাদমাধ্যমের ভাষায় স্কুপ) দেখতে পেল! তার পরে শুরু হল প্রজাপতির পিছনে ধাওয়া করা... যার রং কখনও নীল, কখনও রুপোলি।

Advertisement

শান্তিলাল ও প্রজাপতি রহস্য
পরিচালনা: প্রতিম ডি গুপ্ত
অভিনয়: ঋত্বিক, পাওলি, গৌতম
৫.৫/১০

ছবির প্রথম মিনিট কুড়ির মধ্যে রহস্যের ঘেরাটোপটা তৈরি করে দেন পরিচালক। সেটা শেষমেশ ধরে রাখা যায়নি। অথচ বেশ জোরালো সম্ভাবনা ছিল। কারণ প্রতিম বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে বিষয় নির্বাচন করেছিলেন। তাঁর গল্প বলার ভঙ্গিও মনোগ্রাহী। কিছু বিষয় আরও একটু বিস্তারে বলা যেত। নীল ছবির জগতের হদিশ পেতে শান্তিলাল দক্ষিণ ভারত পাড়ি দেয়, সেখান থেকে সিঙ্গাপুর। সব কিছুই যেন বড্ড সহজে হয়ে যায়। সাহায্যকারী হিসেবে রকেট রঞ্জনের (অম্বরীশ ভট্টাচার্য) আবির্ভাবেরও তল পাওয়া যায় না। দু’ঘণ্টার কমে ছবির দৈর্ঘ্য বেঁধে রাখার চাপেই কি কাঁচির অতিরিক্ত ব্যবহার হয়ে গেল?

তবে এ ছবির শেষ কথা হল পারফরম্যান্স। প্রতিম তাঁর অন্যতম দুই পছন্দের অভিনেতাকে দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন হাল ধরতে। কাহিনির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ঋত্বিক। ছাপোষা, আটপৌরে অথচ হার না মানা একটা মানুষ। চরিত্রে ছোট ছোট ন্যুয়ান্স যোগ করতে ঋত্বিকের জুড়ি নেই। পাওলির স্ক্রিন প্রেজ়েন্স হয়তো খানিক কম। কিন্তু শেষ পনেরো মিনিটে একেবারে ঝোড়ো ইনিংস খেলেছেন। ছোট চরিত্রে গৌতম ঘোষ, শঙ্কর চক্রবর্তীরাও ভাল।

পরিচালক বেশ কিছু ইন্টারেস্টিং উপাদান নিয়ে এসেছিলেন ছবিতে। ব্লু ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি, বাংলা ছবির জগৎ, তার সঙ্গে সংবাদমাধ্যম। সব মিলিয়ে রহস্য আরও ঘনীভূত হতে পারত, প্রজাপতিও আরও দুষ্টু হতে পারত। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সবাই শান্তশিষ্ট হয়ে গেল!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন