Satyajit Ray

সেঞ্চুরি সত্যজিতের! গুপি-বাঘা, ফেলুরাও বলছে ‘ঘরে থাকুন’

ঘরবন্দি বাঙালির কাছে সত্যজিতের ঘর এবং বিশ্বের ছোঁয়াচ শনিবার যেন ভাইরাসের থেকেও দ্রুতগামী। করোনাতঙ্ক এবং প্রিয় নায়কদের পর পর ইন্দ্রপতনে ধস্ত মনে কিছুটা হলেও প্রলেপ জুগিয়েছে সত্যজিৎ-স্মরণ।

Advertisement

ঋজু বসু

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ মে ২০২০ ০৪:২১
Share:

শিল্পী অনিকেত মিত্র ও মাহফুজ আলির আঁকায় (ডান দিকে) সত্যজিৎ-স্মরণ। ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া

নিজস্বী তুলতে এত ঘেঁষাঘেঁষি এখন কোনও অলীক মহানগরেই সম্ভব।

Advertisement

‘বার্থডে বয়ের’ পাশেই তাঁর প্রথম ছবির সহযোদ্ধা রবিশঙ্কর। গা ঘেঁষে জটায়ু, মন্দার বোস বা পরশপাথরের তুলসী চক্রবর্তীরা থাকলে ভুসভুসিয়ে ওঠা হাসি সামলানো রাশভারী পরিচালকমশাইয়েরও কঠিন। উৎপল দত্ত, উত্তম কুমার, ছবি বিশ্বাসেরা ছাড়াও ফ্রেমের কোণে স্ত্রী বিজয়া কিংবা অকালে হারানো বাবা সুকুমার। আমুদে কিশোরকুমার ছাড়া এমন ‘সেলফি অব দ্য সেঞ্চুরি’ আর কে-ই বা তুলবেন! সৃজনশীল বাঙালির আঁকিবুকিতে, এ ভাবেই জমে উঠেছে সত্যজিৎ রায়ের ১০০তম জন্মদিনের পার্টি। অনিকেত মিত্রের ‘স্কেচ’ মধ্যরাতেই ছড়িয়ে পড়ে পারস্পরিক দূরত্বের দুনিয়ায়।

ঘরবন্দি বাঙালির কাছে সত্যজিতের ঘর এবং বিশ্বের ছোঁয়াচ শনিবার যেন ভাইরাসের থেকেও দ্রুতগামী। করোনাতঙ্ক এবং প্রিয় নায়কদের পর পর ইন্দ্রপতনে ধস্ত মনে কিছুটা হলেও প্রলেপ জুগিয়েছে সত্যজিৎ-স্মরণ। ১০০তম জন্মদিনে অতিথিশূন্য বিশপ লেফ্রয় রোডের বাসভবন। দৃশ্যটা সিনেমার জাদুবাস্তব নয়, কাঠখোট্টা ‘নিউ নর্ম্যাল’। তবে সত্যজিৎপুত্র সন্দীপ রায়ের ফোন বাজায় বিরাম নেই। নানা সাক্ষাৎকার, ফেলুদাকে নিয়ে সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ওয়েবসিরিজের অনুষ্ঠান চলছে। বিকেলে সন্দীপ বলছিলেন, “বাবার জীবনের অনেকটা জুড়ে এ বাড়ি বাবার কাজেরও জগৎ।” প্রাক-ইন্টারনেট যুগে অজস্র চিঠি লিখে বাড়িতে বসেই শঙ্কু-কাহিনি বা নানা রকম লেখালেখির জন্য অজানা পৃথিবীর খবরের মালমশলা জড়ো করতেন সদাব্যস্ত মানুষটি। সন্দীপের কথায়, “আমার কাছে বাবার অফিস বলতে ওই সাবেক চেয়ার, কোলে পাতবার শক্ত কাঠের বোর্ড। ওয়র্ক ফ্রম হোম কথাটা তখন আমরা জানতাম না।” ২ মে বিশপ লেফ্রয় রোডের গত কয়েক দশকের বাঁধাধরা অতিথি সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় সকালে সন্দীপের সঙ্গে ফোনে গল্প করছিলেন। “বাড়ি বা বাইরেটা বড় কথা নয়, মানিকদা সব সময়ে কাজের মধ্যে থাকতেন। বাড়িতে আড্ডা দিতে দিতেও প্রায়ই আঁকতেন,”— বলছিলেন সৌমিত্র।

Advertisement

আরও পড়ুন: সত্যজিতের জন্মদিনে সৃজিতের শ্রদ্ধার্ঘ্য, প্রকাশ্যে ‘ফেলুদা ফেরত’এর টাইটেল সং

লকডাউনে অবশ্য গোড়া থেকেই সত্যজিৎকে সঙ্গী করেই গৃহবন্দি বাঙালি। অতিমারির প্রাবল্যে ফেলুদার ‘নিশ্চিন্তে আর থাকা গেল না তোপসে’ দুশ্চিন্তা বা জলসাঘরের ছবি বিশ্বাসের মতো দিন-মাস গুলিয়ে ফেলার ক্লান্তি এখন নেট-রসিকতার অঙ্গ। ভূতের রাজার মিষ্টিবৃষ্টিতে আকুল গুগাবাবা-র বুভুক্ষু সৈনিক বা দূরবীন হাতে চরম একঘেয়েমি-ধস্ত চারুলতাও যেন লকডাউনেরই চরিত্র। ‘চারুলতা’ মাধবী মুখোপাধ্যায় হাসলেন, “মুম্বইয়ে আমার মেয়ে বলছিল, বারান্দায় দাঁড়িয়ে একটা মানুষও দেখা যায় না। সবাইকে বুঝতে হবে, বাড়িতে থাকা কত জরুরি। আজ মনে পড়ছে বাড়িতে থেকে মানিকদাও কত কাজ করে গিয়েছেন।”

‘সোনার কেল্লা’ অবলম্বনে সাউথ পয়েন্ট প্রাক্তনীদের চিত্রকবিতা বা মিত্র ইনস্টিটিউশনের কিছু প্রাক্তনীর বেতলা সফর নিয়ে ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’— ভিডিয়ো-ছবিতে বুঁদ বাঙালি। জমে কুলপি সাগ্নিক চট্টোপাধ্যায়-শ্রীকান্ত আচার্যের লাইভ আড্ডাও। করোনাকে হারাতে হীরক রাজার দেশের গানের প্যারডিতে পুলিশেরও বার্তা, ‘না না ঘরের বাইরে নয়’! কার্টুনিস্ট মাহফুজ আলির (মালি) ছবিতেও দূরত্ব রেখে বারান্দায় অপু-কাজল, চারুলতা, ফেলু, জটায়ু, শঙ্কু, ভূতের রাজারা।

১০০-য় পা দিয়েও কী তীব্র ভাবে বাঙালিকে ঘিরে সত্যজিৎ।

আরও পড়ুন: এই কঠিন সময়েও মানিকদা আশা হারাতেন বলে মনে হয় না

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন