Birthday Of Mithun Chakraborty

“মিঠুনদার প্রচুর প্রেম! শ্রীদেবী সেই তালিকায়, ভালবেসেছেন একমাত্র যোগিতাজিকে”

“খ্যাতি যখন আসে তখন সে গন্ডারের চামড়া সঙ্গে নিয়ে আসে। নইলে খ্যাতনামী খ্যাতির বিড়ম্বনা সইবেন কী করে? মিঠুনদাও এ ভাবেই সব সামলান।”

Advertisement

এন কে সলিল

শেষ আপডেট: ১৬ জুন ২০২৫ ১৩:৪৯
Share:

‘ব্যক্তি’ মিঠুন চক্রবর্তী কেমন? গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

মিঠুন চক্রবর্তী মাত্র ৭৫। কী এমন বয়স? এখনও যে কোনও আড্ডা, শুটিং সেটে মধ্যমণি। সারা ক্ষণ এনার্জিতে টগবগিয়ে ফুটছেন। ধরুন, কোনও সেট ঝিমিয়ে আছে। মিঠুনদা এলেন। চারপাশ দেখলেন। পিছনে লাগার জন্য কাউকে না কাউকে বেছে নিলেন। ফ্লোর চাঙ্গা। আমরা বলতাম, ২৪ ঘণ্টার ‘এন্টারটেনমেন্ট চ্যানেল’! হাসি-ঠাট্টা, হইহই, শোরগোল... সকলকে জাগিয়ে দিয়ে ধাঁ। পেশাদারও বটে। সকলের অলক্ষ্যে ব্যস্ত হয়ে পড়তেন রূপসজ্জায়। ডুব দিতেন নিজের চরিত্রে। ‘অ্যাকশন’ কানে গেলেই মিঠুনদা অন্য জগতের বাসিন্দা। কম সময় তো দেখলাম না দাদাকে, বদলালেন না। এই তালিকায় প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ও রয়েছেন। বুম্বাদা তুলনায় কম কথার মানুষ। মিঠুনদা অনর্গল। এক মিনিট থামতেন না। জিৎ, কোয়েল, ভরত কল— যাঁকে পেতেন তাঁকে নিয়েই রসিকতা! কেউ ছাড় পাননি মিঠুনদার থেকে।

Advertisement

আর ছিল রাতের আড্ডা। প্যাকআপের পরে মিঠুনদার ঘরে যেতেই হত। নিজে রান্না করে খাওয়াতেন। নানা বিষয় নিয়ে কথা হত। ওঁর সঙ্গে আড্ডা দেওয়ার এই মস্ত সুবিধা। দাদার সঙ্গে যে কোনও বিষয় নিয়ে মন খুলে কথা বলা যায়। শুধুই ছবি বা বিনোদন দুনিয়া নয়। আমি যে সময়ের কথা বলছি তখনও মিঠুনদা রাজনীতিতে আসেননি। ওই একটি বিষয় বাদ দিয়ে প্রেম, খেলা— সব বিষয়ে অগাধ জ্ঞান। সঙ্গে দার্শনিক বিশ্লেষণ। দাদার মধ্যে কোথাও যেন এক দার্শনিক মন লুকিয়ে। যখন শুধু আমি আর মিঠুনদা বসতাম তখন পরের দিনের দৃশ্য নিয়ে চুলচেরা বিচার চলত। রাত ২টো-৩টে বেজে গিয়েছে। সারা ইউনিট শুয়ে পড়েছে। আমরা পরের দিনের দৃশ্য নিয়ে ঘষামাজা করছি। মিঠুনদা তো শেষ দিন পর্যন্ত ছবির সঙ্গে থাকতেন। সেই জন্যই এত সফল।

বছর পাঁচেক ছায়াসঙ্গী ছিলাম ওঁর। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত খুঁটিয়ে দেখেছি। মিঠুনদা বাংলা ছবি নিয়ে, পশ্চিমবঙ্গ নিয়ে ভীষণ উতলা। উনি যদি সুযোগ পেতেন তা হলে গোটা বাংলাকে বুক দিয়ে আগলে রাখতেন। আস্তে আস্তে দাদার ছবির ধারা বদলাল। লম্বা বিরতির পর নতুন মিঠুনদা ফিরলেন ‘প্রজাপতি’ নিয়ে। এখন আর তাঁকে ‘এমএলএ ফাটাকেষ্ট’ রূপে দেখা যায় না।কাজ করতে গিয়ে বুঝেছি, দাদার কিন্তু ওটাই ঘরানা। গরিবের ‘মসিহা’, বাংলার মুখ, প্রতিবাদী চরিত্র। দাদা নিজের ঘরানা থেকে সরে এসেছেন। ‘প্রজাপতি’ ছাড়া আর কোনও ছবি তাই হিট নেই।

Advertisement

যোগিতা বালি কি মিঠুন চক্রবর্তীর অভ্যাস? গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

প্রেমেই যাপন তাঁর...

মিঠুন চক্রবর্তী এমনই মানুষ, আট থেকে ৮০— সকলের সঙ্গে সমান ভাবে মেশেন। দুর্দান্ত ফ্লার্ট করেন। এই প্রজন্মের ছেলেরাও ওঁর মতো করে ফ্লার্ট করতে পারে না! কেবল নায়িকা নন, চরিত্রাভিনেত্রীর সঙ্গেও চুটিয়ে ফ্লার্ট করেছেন! যাঁর সঙ্গে ফ্লার্ট করবেন সেই মহিলা ওঁর প্রেমে হাবুডুবু। ধরে নেন, তিনিই একমাত্র মিঠুনের কাছের মানুষ। পরমপ্রিয় কেউ। আমরা বুঝতে পারছি, ওটা নিতান্তই মিঠুনদার দুষ্টুমি। ওই সব প্রেম প্রেম খেলার সময় আমরা অবশ্য পরে মেয়েটিকে বুঝিয়ে দিতাম, ওটা দাদার দুষ্টুমি। যেন বিষয়টি নিয়ে বেশি মাথা না ঘামান। তখন টানা ৩২ দিন কি ৪০ দিন আমরা শুটিং করতাম। একঘেয়েমি কাটাতেই এ সব করতেন। যতই ফ্লার্ট করুন না কেন, মিঠুন চক্রবর্তী কিন্তু ভীষণ প্রেমিক পুরুষ। যেন, ‘হাম জঁহা খড়া হোঙ্গে লড়কিও কা লাইন ওহি সে শুরু হোতা হ্যায়।’

প্রচুর প্রেম ওঁর। গুণে শেষ হবে না। কিন্তু স্ত্রী হলেন যোগিতা বালি। তা হলে কি যোগিতা মিঠুনের অভ্যাস? আমার উপলব্ধি, প্রেম করেছেন বহু জনের সঙ্গে। শ্রীদেবী ওঁর অন্যতম প্রেমিকা। ভালবেসেছেন শুধুই যোগিতাকে। শুধুই অভ্যাস হলে বিয়ে, সম্পর্ক বছরের পর বছর টিকত না। অভ্যাস বদলাতে বেশি ক্ষণ লাগে না। ভালবাসা থাকলে মানুষ বাঁধা পড়ে। কত দিন দেখেছি, মিঠুনদা শুটিংয়ে। রোজ ফোন আসে বৌদির। নানা কথা হত ওঁদের। কখনও সাংসারিক কখনও সংসারের বাইরে। কথোপকথনের সুর বলে দিত, ওঁদের মধ্যে আলাদা রসায়ন কাজ করে। যা বাকিদের সঙ্গে নয়।

ছেলেকে নিয়ে বাবা মিঠুনের স্বপ্ন। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

কেউ যদি আমার দায়িত্ব নিত...

দুর্দান্ত প্রেমিকের মতোই মিঠুনদা দায়িত্ববান মানুষ। সব বোনের বিয়ে দিয়েছেন। যখনই কেউ তাঁর কাছে এসে দাঁড়িয়েছেন, খালি হাতে ফেরেননি। বন্ধু থেকে দুঃস্থ— সকলের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছেন। এখনও করেন। চার সন্তানের দায়িত্ব আজও পালন করে চলেছেন। দায়িত্ব পালন করতে করতে কখনও কি তিনিও ক্লান্ত হয়েছেন? নিশ্চয়ই হয়েছেন। সেই কবে থেকে পরিশ্রম করছেন বলুন তো! ক্লান্তি এড়িয়ে কাজের মধ্যে দিয়ে বাঁচেন মিঠুনদা।

সন্ন্যাসী হওয়ার যোগ ছিল

এ কথা মিঠুনদাই একবার আড্ডাচ্ছলে বলেছিলেন। একাধিক জ্যোতিষী তাঁর কোষ্ঠী, রাশিফল বিচার করে বলেছিলেন, মিঠুন চক্রবর্তী সন্ন্যাসী হবেন। একটা সময় ভোর চারটেয় উঠে বাড়ির সমস্ত ঠাকুর-দেবতার পুজো নিজের হাতে সারতেন দাদা। এত উঁচুতে ওঠার নাকি কথাই ছিল না। কী সব যোগ থাকে বলে না, ওই বিশেষ যোগই মিঠুন চক্রবর্তীকে পথ থেকে রাজপ্রাসাদে তুলে এনেছে।

স্বপ্ন দেখতেন মিমোকে নিয়ে...

চার সন্তানের মধ্যে ‘মহাগুরু’র সবচেয়ে প্রিয় দিশানি, ওঁর মেয়ে। এমনও হয়েছে, সাত দিন তিন ছেলের সঙ্গে কথা বলেননি। মেয়ের সঙ্গে রোজ একবার কথা বলতেই হবে তাঁকে। তিন ছেলের মধ্যে মিমোকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতেন দাদা। মিমো ভাল অভিনেতা, বাবার মতো নাচতেও পারে। কিন্তু...। ছোট ছেলে নমাশি আবার বাবা বসানো। ওকে কথায় কথায় বলেছি, মিঠুনদার জীবনীছবি হলে তুমি বাবার অল্প বয়সের চরিত্রে অভিনয় কোরো।

রাজনীতি নিয়ে অনর্গল মিঠুন চক্রবর্তী। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

রাজনীতি মিঠুনদার জন্য নয়

এটা যদি মিঠুনদা বুঝতেন। ওঁর ধারণা, রাজনীতিতে এলে মানুষের সেবা করা যায়। আমার উপলব্ধি, মানবসেবার আদর্শ প্রতিষ্ঠান ভারত সেবাশ্রম সংঘ। রাজনীতি নয়। প্রথমে শাসকদলে যোগ দিলেন। জানতাম, বেশি দিন থাকবেন না। স্বার্থান্বেষী কোনও কাজ মিঠুনদাকে আকৃষ্ট করে না। ঠিক তাই-ই ঘটল। দাদা দল বদলালেন। এই দলেও যে কত দিন থাকবেন, কে জানে।

রাজনীতিতে আসার কারণেই এত কটাক্ষের শিকার দাদা। বিরোধী পক্ষ তাঁর পদক্ষেপ মেনে নিতে পারে না। মিঠুন চক্রবর্তী অবশ্য কটাক্ষকে থোড়াই কেয়ার করেন! আসলে, সাফল্য যখন আসে তখন সে সঙ্গে করে গন্ডারের চামড়ায় তৈরি একটা জ্যাকেট নিয়ে আসে। ওই সফল মানুষটির জন্য। নইলে তিনি খ্যাতির বিড়ম্বনা সইবেন কী করে? নিষ্ফলা গাছকে কেউ ঢিল মারে? লোকে ঢিল মারে সেই গাছকে যে গাছ ফল দেয়। মিঠুনদাও সাফল্যের থেকে ওই রকম একটি জ্যাকেট উপহার পেয়েছেন। সেটা যত্ন করে রক্ষা করেন। ওই বর্মই তাঁকে কটাক্ষের হাত থেকে রক্ষা করে।

দাদার অনুরাগীরাও চান না, তিনি রাজনীতিতে থাকুন। আমিও সহমত। রাজনীতি ওঁর অনেকটা গিলে নিয়েছে। ওঁর আরও অনেক কিছু দেওয়ার আছে, করার আছে। করতে পারছেন না রাজনীতিতে ব্যস্ত থাকার কারণে।

মিঠুন চক্রবর্তী এবং দেবশ্রী রায়। ছবি: আনন্দবাজার ডট কম।

বুঝলি সলিল, একবার হলেও ফিরব...

মিঠুন চক্রবর্তী নিজেও উপলব্ধি করেন, ওঁকে অন্তত আর একবার ‘ফাটাকেষ্ট’র জুতোয় পা গলাতে হবে। ওতেই ওঁর মোক্ষ। মিঠুনদা বাণিজ্যিক ঘরানার নায়ক। আর বাণিজ্যসফল ছবি মানেই এই ঘরানার। এত ‘অন্য রকম’ ছবি তৈরি হচ্ছে। তাতে বাংলা বিনোদন দুনিয়ার যা হাল— সেটা সকলেই দেখতে পাচ্ছেন। দক্ষিণী বিনোদন দুনিয়া বার বার প্রমাণ করে দিয়েছে, বাণিজ্যিক ছবিই সাফল্যের শেষ কথা। দাদাও বুঝছেন। দাদা মনেপ্রাণে বাঙালি। বাংলাকে অন্তর দিয়ে ভালবাসেন। অনেক সময় কম পারিশ্রমিকেও বহু কাজ করেছেন, শুধু বাংলায় থাকবেন, বাঙালি অভিনেতাদের সঙ্গে কাজ করবেন বলে। আবার সেই সময় ফিরে পেতে চান তিনি। তাই কথা হলেই বলেন, ‘বুঝলি সলিল, ফিরতে আমায় হবেই। অন্তত একবার হলেও ফিরব।’

কিন্তু আগের মতো ঝুঁকি নেওয়া সাহসী প্রযোজকেরা এখন কই?

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement