শ্রাবন্তী মজুমদার আর উজ্জয়িনী মুখোপাধ্যায়ের পুজো। ছবি: ফেসবুক।
সত্তরের দশক। বিজ্ঞাপনী গান আর আকাশবাণীর বিশেষ অনুষ্ঠানের সুবাদে শ্রাবন্তী মজুমদার সকলের চেনা। জনপ্রিয়তা আরও ঊর্ধ্বমুখী হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে ‘আয় খুকু আয়’ কিংবা সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে ‘তুমি আমার মা’ গানের সুবাদে।
এই গান, এই কণ্ঠের কারণেই আর পাঁচজনের মতো করে তিনি কিন্তু পুজোর আনন্দ উপভোগ করতে পারতেন না! বাংলা জুড়ে গানের জলসা কিংবা অষ্টমীর সকালে আকাশবাণী-তে একা রেকর্ডিং রুমে— শ্রাবন্তীর পুজো ছিল এ রকমই। অর্থাৎ, তিনি পুজোতেও ব্যস্ত থাকতেন? গায়িকা এই মুহূর্তে সুদূর আইরিশ সাগরের এক দ্বীপবাসিনী। আনন্দবাজার ডট কম প্রশ্ন করতেই তাঁর গলায় স্মৃতির ছায়া। শ্রাবন্তী বললেন, “ওটাই আমার পুজো ছিল। ওগুলোই উপভোগ করতাম। আমার রেকর্ডিং স্টুডিয়ো তখন হো চি মিন সরণিতে। যেতে আসতে ঠাকুর দেখা হত। হয়তো বাকিদের ছুটি। আমি একা রেকর্ডিং রুমে বসে অনুষ্ঠান রেকর্ড করছি।”
যে দিন তুলনায় কাজের চাপ কম সে দিন তিনি মণ্ডপে আড্ডা দিতেন। নতুন পোশাকে সেজে পংক্তিভোজনে বসতেন। কিংবা, “আরও একটা ব্যাপার ছিল। দুটো অনুষ্ঠানের বিরতিতে কখনও দৌড়ে বাড়ি গিয়ে অঞ্জলি দিয়েছি। কখনও পাত পেড়ে খেয়ে এসেছি বাড়ির সকলের সঙ্গে।” রেকর্ডিং ফুরোলে যখন বাড়ি ফিরতেন তখন হয়তো সাদার্ন অ্যাভিনিউয়ের সাবেকি প্রতিমার মণ্ডপে সন্ধিপুজোর আয়োজন চলছে! আর ছিল পুজোর গান, জলসা। এটাও তাঁর কাছে মস্ত পাওনা।
যে দিন তুলনায় কাজের চাপ কম সে দিন তিনি মণ্ডপে আড্ডা দিতেন। নতুন পোশাকে সেজে পঙক্তিভোজনে বসতেন। তাঁর কথায়, “আরও একটা ব্যাপার ছিল। দুটো অনুষ্ঠানের বিরতিতে কখনও দৌড়ে বাড়ি গিয়ে অঞ্জলি দিয়েছি। কখনও পাত পেড়ে খেয়ে এসেছি বাড়ির সকলের সঙ্গে।”
রেকর্ডিং ফুরোলে যখন বাড়ি ফিরতেন তখন হয়তো সাদার্ন অ্যাভিনিউয়ের সাবেকি প্রতিমার মণ্ডপে সন্ধিপুজোর আয়োজন চলছে! আর ছিল পুজোর গান, জলসা। এটাও তাঁর কাছে মস্ত পাওনা।
দিন বদলেছে। এখন না হয় পুজোর গান, না জমে আড্ডা। আগের মতো পাড়ায় পাড়ায় গানের জলসার সংখ্যা কমেছে। দুর্গাপ্রতিমার সাজেও বদল। শ্রাবন্তী নিজের শহর ছেড়ে দূর-দ্বীপবাসিনী। এই বদল মানিয়ে নিতে কষ্ট হয়? “দেশে না থাকলেও কলকাতার সব খবর রাখি। এ বছরেও আমার এক পাড়াতুতো ভাই প্রতিমার ছবি পাঠিয়ে দিয়েছেন। আমাদের পাড়ার পুজো একই আছে, এটা দেখে শান্তি। কিন্তু বাকি জায়গায় থিমের পুজো! দেবী দুর্গার এই ভোলবদল মেনে নিতে যে বড্ড কষ্ট!” তাঁর আরও কষ্ট, শরতে আইরিশ দ্বীপের আকাশ কলকাতার মতোই ঝকঝকে। কিন্তু একটাও পুজো হয় না!
দুর্গাপুজোর এই ‘বদল’ কি তাঁর চোখকেও পীড়া দেয়? জানতে যোগাযোগ করা হয়েছিল এই প্রজন্মের শিল্পী উজ্জয়িনী মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে। তিনিও এখন বিদেশে, পুজোর গানের জলসায় যোগ দিতে গিয়েছেন। সেখান থেকেই ফোনে বললেন, “আমার সাবেকি এবং থিম— দুটো পুজোই ভাল লাগে। ভাল লাগে এই কারণে, সাবেকি প্রতিমার গায়ে ‘মা মা’ গন্ধ। খুব আপন মনে হয়। আবার থিমের পুজোর কল্যাণে পুজোর আগে অনেকে কাজ পান। উপার্জন বাড়ে অনেকের। এরও প্রয়োজন আছে।”
এই জায়গা থেকেই তিনি মেনে নিয়েছেন পুজোর মিউজ়িক ভিডিয়োর চল। “আমি এ বছরেও পুজোর গান করেছি। শ্রোতারা শুনছেন। হয়তো মণ্ডপে বাজছে না। কিন্তু ইউটিউবে শেয়ার বা লাইক-সংখ্যা বাড়ছে। যখন যেমন তখন তেমন চলতেই হবে”, যুক্তি উজ্জয়িনীর। এই যে তিনি বিদেশে গাইতে যান, সেখানে কিন্তু তাঁর গাওয়া ‘চুপি চুপি রাত নেমে আসে আকাশে’ বা ‘আমি আকাশ খোলা’— গানগুলোই শুনতে চান প্রবাসী বাঙালি। তবে আগের থেকে অবসর কমেছে সবার, এটা মেনে নিয়েছেন তিনি। তাই আগের মতো পুজোয় আড্ডা জমে না।
সাবেকি দুর্গাপ্রতিমার মতো পুজোর গান না হওয়াটাও মনখারাপ করে দেয় শ্রাবন্তীর। তাঁর কথায়, “এখন তো গান দেখার। কেউ আর গান শোনেন না। সারা বছরই গান হচ্ছে। ফলে, পুজোয় এখনও হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, আরতি মুখোপাধ্যায়, মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়, শ্যামল মিত্রের রমরমা।”