সিঙ্গলস্ক্রিন-মাল্টিপ্লেক্সে প্রাইম টাইমে বাংলা ছবির একটি শো বাধ্যতামূলক!

টালিগঞ্জের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে এমন একটা দাবি উঠছিল অনেক দিনই। শনিবার বিকেলে রাজ্য সরকারের তথ্য-সংস্কৃতি সচিবের জারি করা নোটিসে, এ রাজ্যের প্রতিটা সিনেমা হল— সিঙ্গলস্ক্রিন ও মাল্টিপ্লেক্সে— বছরে অন্তত ১২০ দিন ধরে প্রাইম টাইমে কমপক্ষে একটি করে বাংলা ছবির শো রাখা বাধ্যতামূলক হয়ে গেল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৪:০৯
Share:

—নিজস্ব চিত্র।

টালিগঞ্জের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে এমন একটা দাবি উঠছিল অনেক দিনই। শনিবার বিকেলে রাজ্য সরকারের তথ্য-সংস্কৃতি সচিবের জারি করা নোটিসে, এ রাজ্যের প্রতিটা সিনেমা হল— সিঙ্গলস্ক্রিন ও মাল্টিপ্লেক্সে— বছরে অন্তত ১২০ দিন ধরে প্রাইম টাইমে কমপক্ষে একটি করে বাংলা ছবির শো রাখা বাধ্যতামূলক হয়ে গেল। জিটিএ-র আওতাধীন এলাকা তথা উত্তরবঙ্গের কিছু অংশকে এই নির্দেশের বাইরে রাখা হয়েছে।

Advertisement

তথ্য-সংস্কৃতি সচিব বিবেক কুমারের মতে, ‘‘বাংলা ছবির প্রসার ও পুনরুজ্জীবনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অনেক দিনই পদক্ষেপ করার কথা ভাবছিলেন। এটা তাঁরই সদিচ্ছার ফসল। মহারাষ্ট্র মডেলকে সামনে রেখে এগোনো হয়েছে এখানেও।’’ এর আগে বাংলা ছবির প্রধান প্রদর্শক, সিঙ্গল স্ক্রিনগুলিতে রাজ্য সরকার তার ভাগের জিএসটি-র টাকায় ৭% ছাড় ঘোষণা করেছিল।

টালিগঞ্জের অভিভাবকপ্রতিম তারকা প্রসেনজিৎ এ দিন রাজ্য সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলছেন, ‘‘এটা বাংলা ছবির জন্য খুবই দরকার ছিল। মহারাষ্ট্র, তামিলনাডুতেও এমন নিয়ম চালু আছে।’’ তবে সমস্ত সিনেমা হল-এ বাংলা ছবি দেখানোর নিদান কতটা সহনীয় হবে, তা নিয়ে হল-মালিকদের একাংশের মধ্যে প্রশ্ন আছে। এমন বহু হলই আছে, যারা কোনও দিনই সে ভাবে বাংলা ছবি দেখায়নি। সেখানে বাংলা ছবির দর্শক মিলবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন থাকছে।

Advertisement

উত্তর কলকাতায় ‘মিত্রা’র কর্ণধার দীপেন্দ্র মিত্রের মনে পড়ছে, কংগ্রেস জমানায় সুব্রত মুখোপাধ্যায় তথ্য-সংস্কৃতি মন্ত্রী থাকাকালীন একবার সব হলেই ১২ সপ্তাহ বাংলা ছবি দেখানোর নির্দেশিকা জারি হয়েছিল। সে-যুগে সিনেমা হলের কারবার ঢের সম্পন্ন ছিল। বাংলা ছবির অবস্থাও ভাল ছিল। তবু এই বন্দোবস্ত টেকেনি।

এখন টালিগঞ্জের স্বল্প বাজেটের ছবির অধিকাংশ শহরের মাল্টিপ্লেক্সের দিকে তাকিয়ে থাকে। একটি পরিচিত মাল্টিপ্লেক্স সংস্থার আধিকারিক পঙ্কজ লাডিয়া বলছেন, ‘‘বাংলা ছবির ১২০টা প্রাইম টাইম শোয়ে সমস্যা নেই। আমরা সরকারের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাচ্ছি।’’ অনেকের অবশ্য প্রশ্ন, যে সব মাল্টিপ্লেক্স এবং সিঙ্গল স্ক্রিন এখন বছরে ১২০ দিনের বেশি এবং ১২০টার বেশি প্রাইম টাইম শো বাংলা ছবিকে দিত, তারা কি ১২০-তে নেমে আসবে? পরিবেশকদের কেউ কেউ উত্তরে বলছেন, বছরে গড়ে ১০০-রও বেশি বাংলা ছবি মুক্তি পায়। বাণিজ্যিক সাফল্য পেলে কেউই শো কমাতে চাইবে না। নতুন নিয়মের ফলে যারা বাংলা ছবি দেখাতেন না, তাঁরাও দেখাতে বাধ্য হবেন।

২০১৫-র এপ্রিলে মহারাষ্ট্রে প্রাইম টাইমে যে কোনও হল-এ মরাঠি ছবির প্রদর্শন বাধ্যতামূলক করা হলে বেশ টানাপড়েন সৃষ্টি হয়েছিল। প্রথমে ঠিক হয়েছিল, ফি-সন্ধ্যায় ছ’টা থেকে ন’টার মধ্যে মাল্টিপ্লেক্সের একটি স্ক্রিন মরাঠি ছবির জন্য বরাদ্দ থাকবে। বিষয়টি নিয়ে মামলা বম্বে হাইকোর্টে গড়ায়। পরে ঠিক হয়, বেলা ১২টা থেকে রাত ন’টার মধ্যে কমপক্ষে ১২০টি শো চালাতে হবে। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের নির্দেশনামাতেও ‘প্রাইম টাইম’ বলতে বেলা ১২টা থেকে রাত ন’টা ধরা হয়েছে। বিবেক কুমার অবশ্য বলছেন, ‘‘এ রাজ্যের নির্দেশটা আরও কড়া। একটা সুপারহিট ছবির তিন-চারটি শো দেখিয়ে ১২০-র কোটা এক মাসেই পূরণ করে ফেললে চলবে না। বছরে বাংলা ছবির ১২০টি শো অন্তত ১২০ দিনের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে।’’

তবে মহারাষ্ট্রে কম-বেশি ৩৫০টি মাল্টিপ্লেক্স, বাংলায় ৩৩টি। অতএব এখানে সমান সুফল মিলবে কি না, তা নিয়ে কেউ কেউ সন্দিহান। তবু এমন নির্দেশকে স্বাগতই জানাচ্ছে টালিগঞ্জ। তবে পরিচালক-প্রযোজক শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় মনে করালেন, ‘‘সরকারকে ধন্যবাদ। কিন্তু মুষ্টিমেয় প্রযোজকের ছবি বাড়তি শো পেলে ইন্ডাস্ট্রির জন্য সুফল মিলবে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন