তিনি অভিনেত্রী। নায়ক-নায়িকার কনসেপ্টেই বিশ্বাসী নন। কাজ করেন নিজের শর্তে। নতুন পরিচালক হলেও চরিত্র পছন্দ হলে রাজি, আবার নামজাদা কেউ ডাকলেও চরিত্র অপছন্দ হলেও চলে যাবেন, এমনটা নয়। আগামিকাল মুক্তি পাচ্ছে তাঁর অভিনীত ‘বিবাহ ডায়েরিজ’। তার আগে প্রেম, কেরিয়ার, কাস্টিং কাউচ নিয়ে খোলামেলা সোহিনী সরকার। খোলামেলা অরিন্দম শীলকে নিয়েও।
আপনি নাকি অরিন্দম শীলের নায়িকা?
এটা আবার কে বলল?
ইন্ডাস্ট্রি বলছে।
কেন বলুন তো?
অরিন্দম শীল ছবি করলেই তো সেখানে আপনি। এমনকী ব্যোমকেশের মূল গল্পে সত্যবতী না থাকলেও ছবিতে আপনি থাকলেন পরিচালকের ইচ্ছেতেই।
এ বাবা! এটা ঠিক নয়। শুধু পরিচালক কেন, প্রযোজকেরও তো ইচ্ছে বলে একটা ব্যাপার আছে। আর তা ছাড়া আমি কি অভিনয়টা একদমই পারি না? দর্শক কি আমাকে পছন্দ করেন না? এই পয়েন্টটা বাদ দিলে চলবে?
তা হলে আপনার এই নতুন অ্যা়ডজেক্টিভটা মানছেন না?
অরিন্দমদার প্রচুর নায়কও তো রয়েছে। কিন্তু অরিন্দমদা যেহেতু স্ট্রেট অন্তত ওর প্রেম-ট্রেম দেখলে সেটাই বোঝা যায়, সে জন্য নায়িকাদের নিয়ে কথা, তাই তো? (হাসি)
তাই কি?
এ সব শুনে এখন আর কিছু ভাবি না আমি। ইন্ডাস্ট্রিতে ১০ বছর হয়ে গেল তো। অরিন্দমদা কিন্তু পরের ছবি ‘ধনঞ্জয়’-এ এখনও কাস্ট করেনি আমায়। ওটাতে নিলে তাও এটা বলতে পারি।
ও আচ্ছা। পরের ছবিতে কাস্ট করলে এটা মেনে নেবেন?
যা রটে তার কিছু তো বটে। সত্যিই অরিন্দমদা আমাকে খুব ভালবাসে। কোনও গসিপ শুনলেও আমি প্রথম অরিন্দমদাকেই জিজ্ঞেস করি।
আগামিকাল ‘বিবাহ ডায়েরিজ’ রিলিজ করছে। এই ছবির স্ক্রিপ্ট নাকি পরিচালক মৈনাক ভৌমিক তাঁরই আগের একটা রিলিজ না হওয়া ছবি ‘আমি ভার্সেস তুমি’ থেকে টুকেছেন। সত্যি?
আমি আগের ছবিটার স্ক্রিপ্ট পড়িনি। বলতে পারব না। কিন্তু আমাদের ছবিতে কিছু সোশ্যাল মিডিয়ার কথা রয়েছে। যেটা ২০১১-১২-তে অ্যাক্টিভ ছিলই না। তা হলে কপি কোথায় হল? আর যদি কপি করেও থাকে, মৈনাকদা মৈনাকদারই ছবি কপি করেছে, সৃজিতদার ছবি তো কপি করেনি। দেখুন, একই দিনে যদি দুটো ছবি মুক্তি পায় তাতেও আমার কোনও সমস্যা নেই। কিন্তু আগের ছবির প্রোডিউসারেরই বোধহয় ছবি রিলিজ করাতে কিছু সমস্যা আছে।
বিষয়টা সমর্থন করেন?
এটা সমর্থন বা অসমর্থনের কথা নয়। একটা ছবি তিন বছর তৈরি হয়ে পড়ে রয়েছে, রিলিজ হচ্ছে না, এটাও তো একজন ডিরেক্টরের জন্য ভাল নয়। আর তা ছাড়া কপি করে তো ছবি হতেই পারে। মানে সব প্রেমের গল্পই তো বিচ্ছেদের পর মিলনে শেষ হয়। সেটা কি কপি বলা হবে?
রিলিজ হওয়ার পর এই কন্ট্রোভার্সির কোনও এফেক্ট পড়বে?
মনে হয় না। আর ট্রেলারটা কিন্তু অনেক নাক উঁচু লোকেরই ভাল লেগেছে। সেখান থেকে ভাল এক্সপেক্টেশন রয়েছে। খুব মজা করে কাজ করেছি আমরা। হয়তো এক পাতার ঝগড়ার সিন রয়েছে। সেটা টেনে তিন পাতাতে নিয়ে গিয়েছি আমি আর ঋত্বিকদা। কারও বিয়ে হলে সে ছবিটা রিলেট করতে পারবে, বাকিরা পারবে না, এমনটা নয়।
আরও পড়ুন, ‘পোশাক কোনও কোনও ক্ষেত্রে উত্তেজনা তৈরি করে, এটা মেয়েরাও জানে’
‘বিবাহ ডায়েরিজ’ তো হল, ব্যক্তি সোহিনীর বিয়ে কবে?
আসলে আমার এখন ওই ফেজটা চলছে, যেখানে বিয়ের পর রাতে কোনও বন্ধুকে ফোন করে কাঁদতে চাই না। আশেপাশে যাদের দেখেছি, তাদের প্রবলেম সলভ করতে করতে তো হাফ লাড্ডু খেয়েই ফেলছি।
আপনার এখনকার স্টেটাস তা হলে কী?
ফেসবুকে সিঙ্গল।
মানে ভ্যাকেন্সি চলছে?
না, না। দেখুন, একাই থাকি আমি। এটা লেখার পর বাড়ির বাইরে গাড়ির লাইন লেগে গেলে পাড়ার লোকের কাছে কি আমার ইমেজটা ঠিক থাকবে? (মুচকি হাসি)
প্রেম করছেন তো?
হ্যাঁ, একটা প্রেম আছে আমার। কিন্তু সেটাতে এখন খুব বেশি কনসেনট্রেট করছি না। এখন একটা অদ্ভুত ফেজ চলছে। পুরুষদের ঠিক সহ্য করতে পারছি না।
সেকি! হঠাত্ পুরুষ বিদ্বেষী হয়ে উঠলেন কেন?
ঠিক তা নয়। আসলে ধরুন যে পুরুষের সঙ্গে রাতে অলিপাবে যাওয়া যাবে, শুটিংয়ের পর অনেকের মাঝে বসে তার সঙ্গেও আড্ডা দেওয়া যাবে, এমনটা হলে ঠিক আছে। ওই তুমি-আমি, টেবিলের এপার-ওপার এখন ঠিক ভাল লাগছে না।
হঠাত্?
এটা বিবাহ ডায়েরিজের এফেক্ট হতে পারে।
‘দুর্গা সহায়’-এর শুটিং কেমন হল?
অরিন্দমদার ইউনিট খুব ভাল। আর ক্যাপ্টেন ভাল হলে কাজ ভাল তো হবেই। সম্পূর্ণা আর তনুশ্রী বাদে সকলের সঙ্গেই আগে কাজ করেছি আমি। ফলে আনকমফর্টেবল ব্যাপারটা একেবারেই ছিল না। স্ক্রিপ্ট খুব ভাল। চ্যালেঞ্জিং ক্যারেক্টার। স্ক্রিনে আমাকে সুন্দর দেখানোর কোনও ব্যাপার নেই। ওইটা মাথায় থাকলে অভিনেতাদের কোথাও একটা লিমিটেশন তৈরি হয়ে যায়। কিন্তু এখানে খারাপ দেখতে লাগলেও সেটাই তোমার ক্যারেক্টার।
আরও পড়ুন, জয়ার কাঁধে ঐশ্বর্যার মাথা, সুসম্পর্কের ইঙ্গিত?
উত্তরটা একটু অন্য ভাবে দিই। ক’দিন আগেই আমাকে একজন সিনিয়র অভিনেতা বলছিলেন, ডিগ্ল্যামারাইজড চরিত্র করতে কিন্তু ধক লাগে। আসলে দেখতে সুন্দর লাগুক, সেটা তো সবাই চায়। কিন্তু সেটাই তো সব সময় চরিত্র নয়। চোখে পিচুটি এলে, বা নাক দিয়ে সর্দি গড়ালে সেটাই কখনও চরিত্র। ‘দুর্গা সহায়’-এ একটু তেলতেলে ভাব, চুলটা জটপাকানো সব মিলিয়ে তৈরি হয়েছে আমার চরিত্র।
কর্মাশিয়াল ছবিতে আপনাকে প্রায় দেখাই যায় না। কেন? অফার পান না?
অফার যে একটা-দুটো পাইনি এমন নয়। রাজ চক্রবর্তীর ‘চ্যাম্প’-এ একটা অফার পেয়েছিলাম। সেটা অবশ্য এখন অন্য এক নায়িকা করছেন।
রাজি হলেন না কেন?
রাজি না হওয়ার পিছনে একশোটা কারণ আছে। কিন্তু সব তো বলা যায় না। কিছুটা ডিপ্লোম্যাটিক হতেই হয়। তবে রাজদাই বোধহয় একমাত্র পরিচালক যিনি সাউথের ছবিগুলোতে বাঙালিয়ানা বজায় রেখে পশ্চিমবঙ্গের দর্শকদের জন্য তৈরি করেন। কিন্তু আমি এই পেশায় এসেছি নিজের মতো করে কাজ করব বলে। ফলে আমাকে বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত ডাকলেও যে লেজ উঠিয়ে চলে যেতে হবে, তার তো কোনও মানে নেই। আমাকেও তো নিজের জায়গাটা দেখতে হবে। কারণ আমার এই চার দেওয়ালের মধ্যে তো আমিই শ্রেষ্ঠ। তাই আমার যেটা ভাল মনে হবে, যে কাজটা আমাকে কিক দেবে মনে হবে, সেটাই করব। আর এখন যে সব কর্মাশিয়াল ছবি হচ্ছে, তার গান ছাড়া কিছুই ভাল লাগে না আমার।
কেন?
দেখুন, এখনকার ছবিগুলো পুরোটা বসে দেখতে পারি না। মানে টিভিতেও নয়। খারাপ, ভাল সব কিছুর ঊর্ধ্বে গিয়ে যেন একটা কিছু তৈরি হচ্ছে। গল্পের কোনও সামঞ্জস্য নেই। দেখতে গিয়ে মনে হয় মাঝে যেন কিছু সিন ফেলে দেওয়া হয়েছে। আমি ঠিক বুঝতে পারি না। একটা ভাল কর্মাশিয়াল ছবি দেখার জন্য সত্যি অপেক্ষা করে আছি।
আরও পড়ুন, কাজল আর আমার জীবনে ফিরবে না, বললেন কর্ণ
টেলিভিশনের একজন ডিরেক্টর খুব গায়ে হাত দিতেন। আমি তখন খড়দহ থেকে ট্যাক্সি করে যাতায়াত করতাম। আরও ছোট ছিলাম। শটে উনি অদ্ভুত খারাপ ব্যবহার করতেন। পরে আমি রিয়্যালাইজ করি আমি ওঁর ব্যবহারে সাড়া দিচ্ছিলাম না বলে উনি অমন করছিলেন। আমি প্রোডিউসারকে ফোন করে বলেছিলাম আমি কাজ করতে পারব না। পরে আর একটা ভাল অফার পেয়ে ওই কাজটা ছেড়েও দিয়েছিলাম। তবে এটা ঠিক কাস্টিং কাউচ নয়। খুব বাজে একটা সিচুয়েশন হ্যান্ডেল করতে হয়েছিল। কিন্তু টাচ উ়ড আমি সব সময়ই খুব ভাল লোকেদের সঙ্গে কাজ করেছি।
ছবি: অনির্বাণ সাহা।