—নিজস্ব চিত্র।
প্রবাসে বসে দেশ আর মাতৃভাষাকে ছুঁয়ে থাকতে নাটককে আঁকড়ে ধরেছেন তাঁরা। সারা দিনের কাজের পরে একসঙ্গে বাংলা নাটকের চর্চা করেই তাঁরা প্রাণে ভরে নেন জীবনযুদ্ধের অক্সিজেন। আর ছুটি পড়লে সেই নাটক সঙ্গে নিয়েই চলে আসেন মাতৃভূমিতে। এ এক অদ্ভুত নেশা। আমেরিকার নিউজার্সিবাসী কয়েক জন বাঙালি মিলে গড়েছেন নাট্য দল ‘একতা।’ এখন দলে নিয়মিত নাট্যকর্মী আট জনের মতো। বাড়ির ছোটরাও নাটকের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন। বিদেশে শো হয়। আর বছরে এক বার সকলে ছুটি নিয়ে দেশে আসেন। দেশে ফিরে তিন-চারটি শো করেন। এ বছর কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার সুদীপ্ত ভৌমিকের লেখা আর নির্দেশনায় ‘নাগরিক’ নাটকটি মঞ্চস্থ হচ্ছে। তার তিনটি শো দেশের মাটিতে করলেন তাঁরা। দুটি শো কলকাতায় হয়ে গিয়েছে। তৃতীয় শো হয়েছে কৃষ্ণনগর রবীন্দ্রভবনে "কৃষ্ণনগর পরম্পরা" আয়োজিত নাটকের মেলায় গত শুক্রবার রাত্রে।
বছর ত্রিশ আগে চাকরি নিয়ে নিউজার্সি যান সুদীপ্ত। সেখানে আলাপ হয় শক্তি সেনগুপ্তের সঙ্গে। দু’জনেই নাটকপাগল। তাঁর সঙ্গেই ১৯৮৯ সালে সুদীপ্তের প্রথম নাটক ‘শব্দ মোহ বন্ধনে’।
সৌমেন্দু ভট্টাচার্য গবেষণার জন্য নিউজার্সিতে যান একই সময়ে। তাঁদের তিন পুরুষের নাট্যচর্চা। সুদীপ্তের সঙ্গে আলাপের থেকে শুরু হয় এক সঙ্গে পথে চলা। প্রথমে নিজেদের দল ছিল না। নিউজার্সিতে ‘এপিক এক্টর ওয়ার্কশপ’ নামে একটি সংস্থা ওখানকার নাট্যকর্মীদের নিয়ে ভারত থেকে পরিচালক আনিয়ে নাটক করতেন। সেখানে যোগ দিলেন। কিছু দিন পরে নিজেরা গড়লেন ‘একতা।’
এক নাট্যকর্মী সুরথ সিংহের আসল বাড়ি জামসেদপুর। ‘নাগরিক’ নাটকে মুকুল নামে এক বাংলাদেশি ব্লগারের ভূমিকায় অভিনয় করছেন তিনি। নাটকের নেশায় দেশে ফিরে আর বাড়িতে থাকা হয়নি, তাই তাঁর কাছেই চলে এসেছেন মা, বাবা। প্রবাসী ছেলের সঙ্গ পেতে নাটক দলের সঙ্গে ঘুরছেন। কৃষ্ণনগরে নাটক শেষে যখন হাততালি পড়ছে তখন সুরথের মায়ের চোখে জল। এটাই তো প্রাপ্তি।