sushant singh rajput

জামিন রিয়ার, মাদক যুক্তি নস্যাৎ

রিয়ার বিরুদ্ধে করা মামলা অবশ্য চালিয়ে নিয়ে যাবে এনসিবি। অভিনেত্রীর আইনজীবী সতীশ মানশিন্ডের পাল্টা দাবি, ‘‘রিয়া বাংলার বাঘিনি। তিনি শেষ পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে নিয়ে যাবেন।’’

Advertisement

সংবাদ সংস্থা 

মুম্বই শেষ আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০২০ ০৫:২৭
Share:

জামিন পাওয়ার পরে রিয়া চক্রবর্তী। বুধবার। পিটিআই

অবশেষে রিয়া চক্রবর্তীকে জামিন দিল আদালত। শুধু জামিনই দিল না, তাঁর বিরুদ্ধে নার্কোটিক্স কন্ট্রোল বুরো (এনসিবি)-র আনা গুরুতর মাদক পাচারের অভিযোগ নস্যাৎ করে দিল বম্বে হাইকোর্ট। যার পরে প্রশ্ন উঠছে, সত্যিই কি রিয়াকে গ্রেফতার করে জেলে পুরে দেওয়ার কোনও আইনি যৌক্তিকতা ছিল? রিয়ার বিরুদ্ধে করা মামলা অবশ্য চালিয়ে নিয়ে যাবে এনসিবি। অভিনেত্রীর আইনজীবী সতীশ মানশিন্ডের পাল্টা দাবি, ‘‘রিয়া বাংলার বাঘিনি। তিনি শেষ পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে নিয়ে যাবেন।’’

Advertisement

সুশান্ত সিংহ রাজপুতকে মাদক জোগানোর ‘অপরাধে’ গ্রেফতার হওয়ার ঠিক এক মাস পরে আজ বম্বে হাইকোর্ট এক লক্ষ টাকা বন্ডের বিনিময়ে রিয়ার জামিন মঞ্জুর করেছে। রায় দিতে গিয়ে বিচারপতি সারং ভি কোতোয়াল এ দিন জানান, কোনও মাদকাসক্ত ব্যক্তির নেশার জন্য টাকা খরচ করা মানেই তাঁকে মাদক নিতে উৎসাহ দেওয়া, এ কথা বলা যায় না। এ-ও বলা যায় না যে, সুশান্তের জন্য রিয়া মাদক জোগাড় করতেন মানেই তিনি মাদক চক্রের সক্রিয় সদস্য। মাদক রোধ আইনের যে সব ধারা প্রয়োগ করে রিয়াকে গ্রেফতার করা হয়েছিল, তার কোনওটাই যুক্তিগ্রাহ্য নয় বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্টের বিচারপতি। তবে জামিন পাননি রিয়ার ভাই শৌভিক চক্রবর্তী।

বলিউডের প্রয়াত অভিনেতার জন্য মারিহুয়ানা জোগাড় করা এবং নিজেই টাকা দিয়ে সেই মাদক কেনার ‘অপরাধে’ ৮ সেপ্টেম্বর সুশান্তের বান্ধবী রিয়াকে গ্রেফতার করেছিল এনসিবি। কিন্তু কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাটির আনা সব অভিযোগই আজ নস্যাৎ করে দিয়েছে আদালত। বিচারপতি কোতোয়ালের প্রশ্ন, রিয়ার কাছে কোনও নিষিদ্ধ মাদক পাওয়া যায়নি। তিনি মাদক চক্রের সক্রিয় সদস্যও নন। আর্থিক লাভ বা ব্যবসা করার উদ্দেশ্য নিয়ে তিনি কখনও মাদক কেনা-বেচাও করেননি। তা হলে মাদক-বিরোধী আইনের ১৯ (বেআইনি ভাবে আফিম জোগানো), ২৪ (অন্যকে মাদকের জোগান) ও ২৭-ক (বেআইনি মাদক কেনায় টাকা জোগানো) ধারাগুলি কেন তাঁর উপরে প্রয়োগ করা হল? বিচারপতির এই মন্তব্য রিয়াকে গ্রেফতারের যৌক্তিকতা নিয়েই প্রশ্ন তুলল বলে মত অনেকের।

Advertisement

বিচারপতি বলেন, ‘‘মাদক আইনের বিভিন্ন কঠোর ধারায় শাস্তি পাওয়ার মতো কোনও অপরাধ রিয়া চক্রবর্তী করেছেন, এ রকম প্রমাণ আমি পাইনি। তিনি দাগী অপরাধী নন, এ ধরনের কোনও অভিযোগ তাঁর বিরুদ্ধে আগে ওঠেওনি। তা ছাড়া, তদন্তকারী সংস্থাটি জানিয়েছে, রিয়া তদন্তে তাঁদের সঙ্গে সব রকম সহযোগিতা করছেন। তাই তাঁর জামিনের আবেদন মঞ্জুর না-করার কোনও কারণ নেই।’’ রিয়া এক জন তারকা, তাই তাঁর বিরুদ্ধে আদালতের দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়া উচিত, এনসিবি-র এই দাবিও মানতে চাননি বিচারক। তাঁর কথায়, ‘‘আইনের চোখে সকলেই সমান। কোনও তারকাকে যেমন আইন কোনও বিশেষ সুবিধা দেয় না, তেমন তাঁকে বিশেষ ভাবে শাস্তি দেওয়ারও কোনও যুক্তি নেই।’’

তবে রিয়ার জামিনের জন্য বেশ কয়েকটি শর্তও রেখেছে আদালত। যেমন, আগামী দশ দিন রোজ থানায় হাজিরা দিতে হবে তাঁকে। বৃহণ্মুম্বই এলাকার বাইরে গেলে নিতে হবে পুলিশের অনুমতি। দেশের বাইরে যেতে পারবেন না তিনি, জমা রাখতে হবে পাসপোর্ট। তা ছাড়া, এই মামলায় সংশ্লিষ্ট কোনও ব্যক্তির সঙ্গেও তিনি দেখা করতে পারবেন না বলে রিয়ার আইনজীবী সতীশ মানশিন্ডেকে জানিয়ে দিয়েছেন বিচারপতি।

এ দিন বিকেল সাড়ে ৫টার সময়ে বাইকুল্লা জেল থেকে বেরোন রিয়া। তাঁর জামিন পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই মুম্বই পুলিশ আজ সংবাদ মাধ্যমের উদ্দেশে নির্দেশিকা জারি করে জানায়, কোনও সাংবাদিক গাড়ি নিয়ে রিয়া, তাঁর আইনজীবী বা আত্মীয়-বন্ধুদের গাড়ির পিছনে ধাওয়া করতে পারবেন না। কারণ এতে যে কারও প্রাণসংশয় হতে পারে। আঘাত পেতে পারেন পথচারীরাও। মুম্বই পুলিশের ডেপুটি কমিশনার সংগ্রাম সিংহ নিশান্দার জানান, কোনও সাংবাদিক যদি এই নির্দেশিকা অমান্য করেন তা হলে তিনি, তাঁর গাড়ির চালক এবং তাঁর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে পুলিশ। গ্রেফতার হওয়ার আগে এনসিবির দফতরের বাইরেও রিয়াকে ছেঁকে ধরতেন অসংখ্য সাংবাদিক। তার পরে এই মাদক মামলাতেই দীপিকা পাড়ুকোনকে তলব করার সময়ে তাঁর গাড়ি ধাওয়া করেছিলেন একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের সাংবাদিক। সে ধরনের ঘটনা এড়াতেই আজ মুম্বই পুলিশের এই নির্দেশিকা।

রিয়াকে গ্রেফতারের আগের দিনই এনসিবি গ্রেফতার করেছিল তাঁর ভাই শৌভিককে। আজ কোর্টে এনসিবি জানায়, মাদক চক্রে শৌভিকের যোগসাজশ নিয়ে তাদের তদন্ত শেষ হয়নি। তাই কোনও ভাবেই যেন তাঁকে জামিন দেওয়া না হয়। শৌভিকের জামিনের আর্জি খারিজ করেন বিচারক। তবে জামিন পান রিয়ার আগেই গ্রেফতার হওয়া সুশান্তের হাউস ম্যানেজার স্যামুয়েল মিরান্ডা এবং তাঁর পরিচারক দীপেশ সবন্ত।

রিয়ার জামিনের বিষয়ে মন্তব্য না-করলেও সুশান্তের পারিবারিক আইনজীবী এ দিন সিবিআইয়ের কাছে আবেদন জানিয়েছেন, যাতে নতুন ফরেনসিক টিম গঠন করে ফের অভিনেতার ময়না-তদন্ত রিপোর্ট খতিয়ে দেখা হয়। সুশান্তের মৃত্যু আসলে আত্মহত্যাই, এমসের বিশেষজ্ঞ দল এ কথা জানানোর পর থেকেই তা নিয়ে আপত্তি জানিয়েছেন বিকাশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন