নাচের মঞ্চ থেকে কবিতার স্তবকে তনুশ্রীশঙ্কর। কাণ্ডটা ঘটল কী করে?
‘‘রবীন্দ্রনাথ বিভিন্ন ছন্দে গান লিখেছেন। সেগুলো গাওয়াও হয়। কিন্তু গানের মতো কবিতারও যে নানা ছন্দ আছে সেটা ভুলতে বসেছে বাঙালি। সেই ছন্দকেই ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেছি ‘রিদমস অব টেগোর’ অ্যালবামে,’’ বললেন আবৃত্তিকার শোভনসুন্দর বসু। ছন্দই এই অ্যালবামের ইউএসপি। তাই তনুশ্রীশঙ্করের মতো এক নৃত্যশিল্পী ‘ভারতবিধাতা’, ‘ভারততীর্থ’, ‘আমরা দুজন’ কবিতা পড়েছেন। তনুশ্রীশঙ্কর বললেন, ‘‘খুব টেনশনে ছিলাম যখন এই কবিতা পড়ার প্রস্তাবটা পাই। এটা বলায় কোনও গর্ব নেই, কিন্তু এটা সত্যি যে বাংলা কবিতা পড়ার অভ্যেস আমার কোনও কালেই ছিল না। বাংলা শব্দ উচ্চারণ নিয়েও আমার প্রচুর দ্বিধা ছিল। তবে এই প্রস্তাবটা একটা চ্যালেঞ্জের মতো আমার জীবনে আসে। আমি বরাবর চ্যালেঞ্জ নিতে ভালবাসি। তাই কিছু না ভেবেই অ্যালবামটা করতে রাজি হয়ে গিয়েছিলাম।’’
মেয়ে শ্রীনন্দাও বেশ টেনশনে ছিলেন মা-র এই নতুন ভূমিকা নিয়ে। কিন্তু অবশেষে ছন্দের সহজ উচ্চারণে তনুশ্রী পালকিওয়ালার মেঠো সুরে বলে উঠেছেন ‘আমরা দু’জন একটি গাঁয়ে থাকি। সেই আমাদের একটিমাত্র সুখ।’ এই কাজের মধ্যে দিয়ে যেতে গিয়ে তিনি নতুন কিছু শিখেছেন। এটাই তাঁর পাওয়া, জানালেন তিনি।
বাংলা কবিতা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে নতুন প্রজন্ম। ছন্দের মাধ্যমে এই প্রজন্মকে বাংলা ভাষা, বাংলা কবিতার দিকে ফিরিয়ে আনা যায়। সেই কথা মাথায় রেখেই রবীন্দ্রনাথের কবিতায় ড্রাম থেকে খট্টমের মতো যন্ত্র ব্যবহার করে আরও গতিময় করেছেন অ্যালবামের সঙ্গীত-আয়োজক বিক্রম ঘোষ। কবিতায় বিভিন্ন হাইম, নানা রকম তান, বোল ব্যবহার করা হয়েছে— শুধুই তথাকথিত কবিতাপাঠ বা আবৃত্তি নয়, এই অ্যালবামে ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকের মাধ্যমে গুরুত্ব পেয়েছে কবিতা-নির্ভর পারফর্ম্যান্স। ১৯০৬-এ লেখা ‘ভারত বিধাতা’ কবিতা ১৯১১-য় জাতীয় সঙ্গীতের মর্যাদা পায়। ‘‘এই ‘জনগণমন’ আমি পুরোটা কোনও দিন শুনিনি। এখানে ছন্দের মধ্যে দিয়ে, ব্যাকগ্রাউন্ডে তানের ব্যবহার করে পুরো কবিতাটা যে ভাবে পারফর্ম করা হয়েছে, তা এককথায় অসাধারণ,’’ বললেন তনুশ্রী। দেড় বছর ধরে রেকর্ডিং হয়েছে অ্যালবামের। কবিতার জন্য এত বড় বাজেটের কাজ কলকাতায় এই প্রথম। পাশ্চাত্য আর প্রাচ্যের স্বরে রবীন্দ্রনাথের কবিতা নতুন সুরে বেজে উঠেছে। অথচ কবিতার অনুভব কোথাও ম্লান হয়নি।