Tv Serials

TV Serial: ছোট পর্দায় বন্ধের পথে কূটকচালি, থাকবে না খলনায়িকা! দর্শক ধারাবাহিক দেখবেন কি?

মমতার প্রশ্ন ছিল, ‘‘এক জনের কেন তিন জন বৌ থাকবে? এত কূটকচালিরই বা কী দরকার?’’

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০২১ ১৭:৩৬
Share:

ছোট পর্দায় আর খলনায়িকা চরিত্র দেখানো হবে না।

বিনোদনের জগতে জোরদার পরিবর্তনের হাওয়া। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রকের ঘোষণা, ছোট পর্দায় আর কূটকচালি, খলনায়িকা চরিত্র দেখানো হবে না। এতে নারী এবং সমাজের কাছে নেতিবাচক বার্তা যাচ্ছে। যা একুশ শতকে দাঁড়িয়ে মোটেই কাম্য নয়। সেই অনুযায়ী, ১৯৯৪ সালের কেবল টেলিভিশন নেটওয়র্ক আইনে বদল আসতে চলেছে। ১ নভেম্বর এই মর্মে নোটিশ দিয়েছেন কেন্দ্রীয় সরকারের আন্ডার সেক্রেটারি সোনিকা খট্টর।

কেন্দ্রীয় মন্ত্রকের এই ভাবনা বহু আগেই শোনা গিয়েছিল বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়। তিনি এক ভাষণে প্রশ্ন তুলেছিলেন, ‘‘এক জনের কেন তিন জন বৌ থাকবে? এত কূটকচালিরই বা কী দরকার? এ যেন কৈকেয়ী-মন্থরার যুগ! যাঁরা জানেন না, তাঁরাও ধারাবাহিক দেখে অনেক কিছু জেনে বা শিখে যাচ্ছেন।’’ অথচ এই মোচড়গুলোই ধারাবাহিকের প্রাণভোমরা। যেমন, ‘শ্রীময়ী’ ধারাবাহিকে ‘জুন আন্টি’র কীর্তির অনুরাগী বহু জন! তাঁরা যেমন রোহিত সেন ওরফে টোটা রায়চৌধুরীকেও চান, তেমনই ঊষসী চক্রবর্তী ওরফে জুনকে বেশি দিন না দেখতে পেলে ফ্যানপেজে হাঁকডাক শুরু করেন। প্রতি সপ্তাহে রেটিং চার্টে নম্বর বাড়ে এ সব দেখিয়েই। চিত্রনাট্যের মোচড় হিসেবে বৌমার সঙ্গে ননদিনী শত্রুতা না করলে দর্শক কি দেখবেন ধারাবাহিক? ছোট পর্দা থেকে কি বাদ যাবে 'নুন-মশলা-পাঁচফোড়ন'? জানতে আনন্দবাজার অনলাইন যোগাযোগ করেছিল ছোট পর্দার স্নেহাশিস চক্রবর্তী, স্বাগতা মুখোপাধ্যায়, অম্বরীশ ভট্টাচার্য, ইন্দ্রাণী দত্তের সঙ্গে। কী বলছেন তাঁরা?

স্বাগতা বর্তমানে স্নেহাশিসেরই ‘সর্বজয়া’ ধারাবাহিকে জাঁদরেল ননদিনীর ভূমিকায়। তাঁর বক্তব্য, ‘‘উপন্যাস, ছবি, ধারাবাহিক সমাজের অবক্ষয়ের কারণ হবে কী করে! বরং সমাজের আয়না এরা। সমাজে যা যা ঘটছে তাই সাধারণের কাছে পৌঁছচ্ছে এ্রর মাধ্যমে।’’ অভিনেত্রীর প্রশ্ন, সমাজেই অগুন্তি খল চরিত্র। আইন করে তাদের কোনও ভাবে মুছে ফেলা যাবে? তা হলে ছোট পর্দার খলনায়িকারা কী দোষ করল!

Advertisement

প্রায় একই সুর শোনা গেল ব্লুজ প্রযোজনা সংস্থার কর্ণধার-পরিচালক স্নেহাশিসের কথাতেও। তিনি জানালেন, নারী-পুরুষ নির্বিশেষ সবার মধ্যেই কিছু ইতিবাচক আর কিছু নেতিবাচক বৈশিষ্ট্য থাকে। নেতিবাচক দিককে অস্বীকার করে শুধুই ইতিবাচক দিক দেখালে জীবনের চরম সত্যকে অস্বীকার করা হবে। তাঁর দাবি, এতে ধারাবাহিকের গল্পও আকর্ষণ হারাবে। পুরোটাই হয়ে উঠবে অবাস্তব।

‘জীবন সাথী’ ধারাবাহিকে সালঙ্কারা বন্দ্যোপাধ্যায়ের চরিত্রে অভিনয় করছেন ইন্দ্রাণী দত্ত। ধারাবাহিকের শুরুতে তাঁর চরিত্রে যথেষ্ট নেতিবাচক স্তর ছিল। সময়ের সঙ্গে বদলেছেন তিনিও। এখন চরিত্রটি সম্পূর্ণ ইতিবাচক। কেন্দ্রীয় মন্ত্রকের ঘোষণা তিনি প্রথম জেনেছেন আনন্দবাজার অনলাইন থেকেই। তিনি কি এই বদলের স্বপক্ষে? অভিনেত্রী কিন্তু ব্যতিক্রমী জবাব দিলেন। তাঁর স্পষ্ট কথা, ‘‘এখনও সমাজে মেয়েরাই শত্রুতা করে। পরনিন্দা পরচর্চা করে। কূটকচালিও করে। সেগুলিই উঠে আসে ধারাবাহিকে।’’ প্রশ্ন রাখেন, তা হলে ভুল কী দেখানো হচ্ছে? কেন বদলানো হবে কাহিনির ধারা?

এ দিকে, কেন্দ্রীয় মন্ত্রকের উপরে কোনও কথা বলতে নারাজ অভিনেতা অম্বরীশ ভট্টাচার্য। তাঁর কথায়, কেন্দ্র থেকে আইন হলে তা সবাই মানতে বাধ্য। পাশাপাশি এও বলেছেন, অভিনেতারা ধারাবাহিকের কাহিনি নির্মাণের সঙ্গে কোনও ভাবেই যুক্ত নন। এই দায়িত্বে রয়েছেন গল্পকার বা লেখক। তাই তাঁরা বিষয়টি আরও ভাল বলতে পারবেন। ‘‘শুধুই ভাল দিক দেখিয়ে যদি কোনও ধারাবাহিক তৈরি সম্ভব হয়। সেটি যদি সবার পক্ষে মঙ্গলজনক হয়, তা হলে সে ভাবেই দেখানো বাঞ্ছনীয়’’, বলেছেন ছোট পর্দার ‘পটকা’।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন