হিন্দি ছবির আগে এসেছে শৌচালয়ের গুরুত্ব নিয়ে তাঁর নাটক, লাগানো হয়নি প্রচারে

গেঁয়ো যোগী ভিখ পায় না, আক্ষেপ

সেটা চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে; ‘টয়লেট: এক প্রেম কথা’ মুক্তি পাওয়ার আগের কথা। বোরো থানার ‘শাসনগোড়া পিঞ্চার সমিতি’ অভিনয় করেছিল নাটকটি। সমিতির প্রধান কর্তা, নাট্যকার এবং অভিনেতা নরেন্দ্রনাথ সোরেন।

Advertisement

সমীর দত্ত

বোরো শেষ আপডেট: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০০:০০
Share:

মগ্ন: নরেন্দ্রনাথ সোরেন। নিজস্ব চিত্র

দেশ জুড়ে রমরম করে চলছে ‘টয়লেট: এক প্রেম কথা’। রূপালি পর্দায় বড় বাজেটের হিন্দি ছবি। কিন্তু ‘ব্যাঞ্চা ডহর’ নাটকের সোনালী আর মনসারাম টুডুর প্রেমের গল্প ক’জনই বা জানেন? নাট্যকার নরেন্দ্রনাথ সোরেন আজকাল আক্ষেপ করে বলেন, ‘‘গেঁয়ো যোগী ভিখ পায় না।’’

Advertisement

‘ব্যাঞ্চা ডহর’। বাংলায় মানেটা হল— বাঁচার পথ। নাটকের মূল গল্পটা অক্ষয় কুমার অভিনীত হিন্দি ছবির সঙ্গে একই। সেই ছবিতে কেশব তাঁর স্ত্রী জয়ার জন্য তৈরি করেছিলেন শৌচালয়। সাঁওতালি ভাষার নাটকটিতেও তাই। বিয়ের পরে শ্বশুরবাড়িতে এসে সোনালী টুডু দেখতে পান, সেখানে শৌচালয় নেই। তা নিয়েই শুরু হয় বাগবিতন্ডা। সোনালী চলে যান বাপের বাড়ি। কিছু দিন পরে সেখানে হাজির মনসারাম। স্ত্রীকে অনুরোধ করেন, অন্তত একটা দিনের জন্য শ্বশুরবাড়ি ফিরে যেতে। সোনালী যান। দেখেন, পরিবারের সবাই সারা মাস ধরে মজুরির টাকা বাঁচিয়ে নতুন বউয়ের জন্য তৈরি করেছেন ঝকঝকে একটা শৌচালয়। নরেন্দ্রনাথের মতে, মেহনত, ভালবাসা আর আন্তরিকতার পুঁজিতে তৈরি সেই শৌচালয় আসলে হিন্দি ছবির বড় পর্দার থেকেও ঝকঝকে। কিন্তু প্রচারের আলোয় না আসায় ক্রমশ ফিকে হয়ে যাচ্ছে।

অথচ, কয়েক মাস আগে তফশিলি উন্নয়ন দফতর এবং অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দফতর আয়োজিত আদিবাসী ভাষায় রচিত একাঙ্ক নাটক প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়েছিল ‘ব্যাঞ্চা ডহর’। সেটা চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে; ‘টয়লেট: এক প্রেম কথা’ মুক্তি পাওয়ার আগের কথা। বোরো থানার ‘শাসনগোড়া পিঞ্চার সমিতি’ অভিনয় করেছিল নাটকটি। সমিতির প্রধান কর্তা, নাট্যকার এবং অভিনেতা নরেন্দ্রনাথ সোরেন। তিনি জানান, রাজ্যের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা সাড়ে তিনশোটি দলের মধ্যে প্রথম হয়ে তাঁরা পেয়েছিলেন ৪০ হাজার টাকা পুরস্কার। সঙ্গে স্মারক আর শংসাপত্র। কিন্তু নরেন্দ্রনাথের স্ত্রী তথা ওই নাটকের অভিনেত্রী সাবিত্রী সোরেন বলেন, ‘‘রাজ্য সরকার শৌচালয় বানানোর গুরুত্ব বোঝাতে কত টাকা খরচ করছে। এ দিকে আমারা অভিনয়ের জন্য এক বারও ডাক পেলাম না। সেটা হলে হয়তো আরও বেশি করে আদিবাসী মানুষজনের কাছে বার্তাটা নিয়ে যাওয়া সম্ভব হত।’’ তাঁদের মতে, পথ নাটিকা হিসেবে অভিনয় বা তথ্যচিত্র বানিয়ে এটি নিয়ে পৌঁছে যাওয়া যায় প্রত্যন্ত বিভিন্ন এলাকায়। সেখানকার মাটির ভাষায়, মাটির মানুষের কথা বলে সচেতন করা যেতে পারে সাধারণ মানুষকে।

Advertisement

‘টয়লেট: এক প্রেম কথা’-কে জিএসটি-র বাজারে করমুক্ত করেছে উত্তরপ্রদেশ সরকার। হরিয়ানায় সরপঞ্চ এবং সরকারি আধিকারিকদের ছবিটি দেখানোর জন্য নির্দেশিকা দেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে কোনও উদ্যোগ নেই কেন? বিডিও (মানবাজার ২) তারাশঙ্কর প্রামাণিক বলেন, ‘‘পথ নাটিকা হিসেবে হাটে বাজারে নরেন্দ্রনাথবাবুর নাটকটি দেখানোর পরিকল্পনা নিয়েছি আমরা।’’ তিনি জানান, ব্লকে তথ্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক প্রচারের জন্য একটি ফান্ড থাকে। এ ছাড়া ‘মিশন নির্মল বাংলা’-তেও নাটকটি কাজে লাগানোর চেষ্টা করা হবে। কবে? বিডিও বলেন, ‘‘খুব তাড়াতাড়ি এই ব্যাপারে পদক্ষেপ করা হবে। নাট্যকারের সঙ্গে আমরা একপ্রস্ত কথাবার্তা বলেছি।’’

এই ব্যাপারের আশ্বাস দিয়েছেন পুরুলিয়া জেলাশাসক অলকেশপ্রসাদ রায়ও। তিনি বলেন, ‘‘আমি এই জেলায় যোগ দেওয়ার আগেই ওই নাটক প্রতিযোগিতা হয়েছিল। তাই ব্যাপারটা জানতাম না। শৌচালয় প্রকল্পের প্রচারে এত বড় হাতিয়ার আমাদের হাতে রয়েছে! জেলার তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগের সঙ্গে কথা বলে প্রচারের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন