WB Election 2021

ব্রিগেডে মিঠুনের মুখে তাঁর ‘এক ছোবলে ছবি’ সংলাপ, আপ্লুত সলিল

ব্রিগেডে মিঠুন চক্রবর্তীর ‘এক ছোবলে ছবি’ থেকে প্রচারে সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘মার গুড় দিয়ে রুটি...’ ছড়িয়ে পড়ছে শহর থেকে গ্রাম বাংলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ মার্চ ২০২১ ১৯:৫৪
Share:

নির্বাচনের প্রাক্কালে জনপ্রিয় হওয়া সংলাপের স্রষ্টা এল কে সলিল। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ

ছিল ‘মার গুড় দিয়ে রুটি, চিনি দিয়ে চা, ফুঁ দিয়ে খা’। হয়ে গেল ‘মার গুড় দিয়ে রুটি, চিনি দিয়ে চা, বিজেপি তাড়াতাড়ি এখান থেকে পত্তর গুটিয়ে পালা’। বিধানসভা নির্বাচনের আগে এ ভাবে বদলে যাচ্ছে বাংলা ছবির জনপ্রিয় সংলাপ। ফিরে আসছে ভোটযুদ্ধের মাঠে।যার লেখক একজনই। সলিলকুমার নস্কর।

Advertisement

আসল নামে প্রায় কেউ তাঁকে চেনেন না। চেনেন অন্য এক নামে। এনকে সলিল। লেখক-চিত্রনাট্যকার।

ব্রিগেডে মিঠুন চক্রবর্তীর ‘এক ছোবলে ছবি’ থেকে প্রচারে সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘মার গুড় দিয়ে রুটি...’ ছড়িয়ে পড়ছে শহর থেকে গ্রাম বাংলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে।

Advertisement

শুনছেন কি সলিল? টলি-পাড়ার ব্যস্ত লেখকের সঙ্গে আনন্দবাজার ডিজিটাল কথা বললে তিনি জানালেন, তিনি শুধু শুনছেনই না, রীতিমতো গর্ব বোধ করছেন। ‘‘গত ৫ বছর ধরেই এ সব সংলাপ চলছিল। এ বার ব্রিগেডে মিঠুনদা অত বড় মঞ্চে ‘এক ছোবলে ছবি’ বলায়, সংলাপটা একটু বেশিই জনপ্রিয়তা পেয়েছে’’, বলছেন তিনি।

২০০৬ সালে মুক্তি পেয়েছিল ‘অভিমন্যু’। তার ১৫ বছর পরে ব্রিগেডে আবার ফিরে এল সেই ছবির জনপ্রিয় ‘ছোবল’-এর সংলাপ। ‘‘পর্দায় একটা সংলাপ আমরা শুনি চরিত্রের মুখে। কিন্তু মাঠে সকলের সামনে যে মানুষটা সেই সংলাপটা বলছেন, তিনি কোনও কাল্পনিক চরিত্র নন। তিনি রক্তমাংসের একটা মানুষ। তাই অন্যদের মনে সেই সংলাপের প্রভাব বেশি পড়ে।’’

এমনটাই মত চিত্রনাট্যকারের।

এ বারের নির্বাচনী প্রচারে তাঁর লেখা সংলাপ এ ভাবে বারে বারে ফিরে আসার কারণ কী? সলিল বলছেন, ‘‘সিনেমার জগত থেকে যে ক’জন শিল্পী রাজনীতিতে আসছেন, তাঁদের কত জনের রাজনৈতিক জ্ঞান আছে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। তাঁদের ইমেজকে প্রচারের কাজে লাগানোটাই আসল উদ্দেশ্য। ফলে জনপ্রিয় সংলাপগুলি যে উঠে আসবে, সেটাই স্বাভাবিক।’’

ভোটের প্রচারে তাঁর লেখা সংলাপই এত জনপ্রিয় হচ্ছে কেন? এরও একটা উত্তর আছে সলিলের কাছে। ‘‘আমি যে দর্শকদের জন্য সংলাপ লিখতাম, তাঁরা সবাই খেটে খাওয়া গরিব মানুষ। প্রান্তিক মানুষ। পাওয়ার চেয়ে না-পাওয়ার জায়াগাটাই তাঁদের কাছে ভীষণ ভাবে বড়। এই সব সংলাপগুলো তাঁদের ভিতরের প্রতিবাদী সত্তাকে জাগিয়ে দেয়। আর ওঁরাই তো ভোটের লাইনের পুরোভাগে দাঁড়াবেন।’’ ফলে ওই ‘প্রান্তিক’ মানুষের মন পেতেই নির্বাচনের মাঠে ময়দানে জনপ্রিয় সংলাপের ফিরে আসা বলেই মত ‘তুলকালাম’ ছবির চিত্রনাট্যকারের।

আরও কোন সংলাপ এ বারের ভোটে জনপ্রিয় হতে পারে? ‘‘মদন মিত্র ইতিমধ্যেই ‘ফাটাকেষ্ট’-র সংলাপে নিজের নাম বসিয়ে তাকে আবার জনপ্রিয় করেছেন। ‘ফাটাকেষ্ট খবর দেখে না’ বদলে হয়ে গিয়েছে ‘মদন মিত্র খবর দেখে না’। ‘আওয়ারা’ ছবিতে জিতের বলা ‘মার গুড় দিয়ে রুটি’ও জনপ্রিয় হয়েছে সায়ন্তিকার কারণে। ভবিষ্যতে কী হবে জানি না, তবে আরও সংলাপ উঠে আসতেই পারে।’’ বলছেন সলিল।

কিন্তু তিনি এন কে সলিল হয়ে রইলেন কেন? এ প্রসঙ্গে কী সংলাপ বললেন সলিল?

তিনি জানালেন স্কুলে পড়ার সময় আকাশবাণীর জন্য লুকিয়ে গল্প লিখতেন। বাড়ির কেউ যাতে জানতে না পারে, তাই নাম নিয়েছিলেন এন কে সলিল। উল্টে দিয়েছিলেন পিতৃদত্ত নাম। এ বারের নির্বাচনেও নাকি পরিস্থিতি উল্টে গিয়েছে। তথাকথিত শিক্ষিত মানুষের থেকে দামি হয়ে উঠেছেন গ্রামের খেটে খাওয়া গরিব ‘প্রান্তিক’ মানুষ। তাই ফিরে আসছে তাঁর লেখা সংলাপ। মানুষের ভাষা হয়েই। এমনই ভাবছেন টলিপাড়ার অতি পরিচিত চিত্রনাট্যকার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন