Sholay

‘অমিতাভ-জয়ার মিল হলেই বেশ হত’, ‘শোলে’র পঞ্চাশ বছরে এখনও উচ্ছ্বসিত টলি-অভিনেতারা

দেখতে দেখতে ৫০ বছর ‘শোলে’র। ভারতের চলচ্চিত্রের ইতিহাসে রমেশ সিপ্পি পরিচালিত এই ছবি বার বার উঠে আসে আলোচনায়। কেমন স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে এই ছবিকে নিয়ে, খোঁজ নিল আনন্দবাজার ডট কম।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০২ জুলাই ২০২৫ ০৯:০০
Share:

‘শোলে’ নিয়ে স্মৃতিচারণ কৌশিক, ঊষসী, বিদীপ্তা ও সাহেবের। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

দেখতে দেখতে ৫০ বছর ‘শোলে’র। ভারতের চলচ্চিত্রের ইতিহাসে রমেশ সিপ্পি পরিচালিত এই ছবি বার বার উঠে আসে আলোচনায়। ১৯৭৫ সালের ১৫ অগস্ট মুক্তি পেয়েছিল এই ছবি। আলোড়ন ফেলেছিল বক্স অফিসে। ৫০ বছর পরে ঠিক ১৫ অগস্টেই নাকি ফের মুক্তি পাবে এই ছবি। ইতিমধ্যেই ইটালির চলচ্চিত্র উৎসবে দেখানো হয়েছে ‘শোলে’। এই ছবি নিয়ে এখনও উচ্ছ্বসিত টলিপাড়ার অভিনেতারা। কিন্তু বর্তমান সময়ে এই ছবি কি আদৌ প্রাসঙ্গিক? কেমন স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে এই ছবিকে নিয়ে, খোঁজ নিল আনন্দবাজার ডট কম।

Advertisement

‘শোলে’ আবার প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেলেও, নতুন করে দেখতে যাবেন না কৌশিক সেন। বর্তমানে এই ছবিকে খুব একটা প্রাসঙ্গিক বলেও মনে করেন না তিনি। কিন্তু একটা সময়ে এই ছবিকে নিয়ে তৈরি হওয়া আবেগ অনুভূতি কম ছিল না তাঁর। অভিনেতা বলেন, “প্রাসঙ্গিক বলব না। বরং এই ছবি নিয়ে নস্টালজিয়া রয়েছে বহু। অদ্ভুত মুগ্ধতা ছিল ‘শোলে’ নিয়ে।”

বলিউডের এই ছবিতে সেই সময়েই হলিউডের ছবির ছাপ ছিল। বিশেষ করে ‘কাউবয় ফিল্মস’ ঘরানার প্রভাব ছিল ‘শোলে’র উপরে। কৌশিক বলেন, “ছোটবেলা থেকেই হলিউডের ছবি দেখার অভ্যাস। তেমনই একটি ছবি হিন্দিতে হচ্ছে। তাই সেই ছবি দেখে হাঁ হয়ে গিয়েছিলাম। ভারতীয় ছবিতে ডাকাতি, মারপিট, প্রেম— সব একসঙ্গে দেখে খুব গর্ব হয়েছিল।”

Advertisement

‘শোলে’ ছবিতে কৌশিকের মনে সবচেয়ে বেশি প্রভাব বিস্তার করেছিলেন গব্বর সিং অর্থাৎ আমজ়াদ খান। বড় হয়ে অভিনেতা হবেন, তখনও ঠিক করেননি কৌশিক। তিনি বলেছেন, “তখনও স্কুলে পড়ি। বাড়িতে অভিনয় নিয়ে চর্চা হত। ওই সময়েই আমার কিন্তু ধর্মেন্দ্রের চেয়ে অমিতাভের অভিনয় অনেক বেশি ভাল লেগেছিল। ধর্মেন্দ্র সেই সময়ে প্রবল জনপ্রিয়, নায়কোচিত ভাবমূর্তি তাঁর। কিন্তু সেই সময়েই বুঝেছিলাম, অমিতাভ স্বতন্ত্র। একে হাঙ্গলের একটি দৃশ্যও অসাধারণ লেগেছিল। অবশ্যই জয়া ভাদুড়িকে অসাধারণ লেগেছিল। কিন্তু হেমা মালিনীকে একদম ভাল লাগেনি। খুব জোর করে অভিনয় মনে হয়েছিল। পরে দেখেও তাই মনে হয়েছে। কোনও কালেই তিনি ভাল অভিনেত্রী নন। সবার মধ্যে সবচেয়ে দুর্বল তিনি।”

সেই সময়ে বাঙালি মধ্যবিত্ত পরিবারের শিশুদের জন্য অলিখিত শাসন থাকত— হিন্দি ছবি দেখা যাবে না। নির্দিষ্ট বয়স পেরোলে তবেই দেখা যাবে। কিন্তু ‘শোলে’ এই নিয়ম ভেঙেছিল। জানান কৌশিক। একই অভিজ্ঞতা ঊষসী চক্রবর্তীরও। হিন্দি ছবি দেখার উপরে ছিল নিষেধাজ্ঞা। কিন্তু ছোটবেলায় ‘শোলে’ দেখার ব্যবস্থা নিজেই করে দিয়েছিলেন তাঁর বাবা। ভিসিআর এনে ছবির দেখার ব্যবস্থা করেছিলেন তিনি। সেই প্রথম বাবার সঙ্গে হিন্দি ছবি দেখা ঊষসীর।

স্মৃতিতে ডুব দিয়ে ঊষসী বলেন, “রবিবার হিন্দি ছবি হত টিভিতে। ওই দিন তাই টিভির ঘরে ঢোকাই আমাদের নিষেধ ছিল। কিন্তু বাবা নিজেই বলেছিল, ‘শোলে’ দেখতে হবে। তখন ছবিটার গুরুত্ব বুঝিনি। পরে বড় হয়ে বার বার ছবিটা দেখে বুঝেছি, কেন এই ছবি কালজয়ী। এই ছবির প্রভাব কেন আজও এত জীবন্ত, তা সত্যিই বলে বোঝানো যায় না। আসলে ম্যাজিকের কোনও ব্যাখ্যা হয় না।”

তবে দর্শক হিসেবে ছবিতে একটি অপূর্ণ চাওয়া রয়েছে ঊষসীর। অভিনেত্রীর স্বীকারোক্তি, “আমার মনে হয়, জয়া বচ্চনের সঙ্গে অমিতাভ বচ্চনের মিল দেখানো হলেই ভাল হত। আসলে তখনকার দিনে বিধবা মহিলা আবার প্রেম বা বিয়ে করবে সেটা দেখানো যায়নি। মন্ত্রবলে সেটা বদলে গেলে দারুণ হত। আর ব্যক্তিগত জীবনে সব সময়ে জয়-বীরুর মতো বন্ধুত্ব চেয়েছি। অবশ্যই এই ছবির একটা প্রভাব আমার উপর আছে।”

ছবিতে জয়া ভাদুড়ির অভিনয় দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন বিদীপ্তা চক্রবর্তীও। অভিনয়ে প্রশিক্ষণের মধ্যে ‘শোলে’ ছবির ‘রাধা’ তাঁর জীবনে অন্যতম। এই ছবিকে এখনও প্রাসঙ্গিক বলেই মনে করেন অভিনেত্রী। বিদীপ্তা বলেন, “এই ছবি কালজয়ী। ছবিতে প্রেম, বন্ধুত্ব, প্রতিহিংসা দেখানো হয়েছিল— এই সব তো আজও প্রাসঙ্গিক। এই ছবি কালজয়ী। কারণ, অত্যন্ত সততার সঙ্গে তৈরি হয়েছিল ছবিটি। অভিনয়, সংলাপ, চিত্রগ্রহণ— সব মিলিয়ে নিখুঁত একটি ছবি।”

বড় পর্দায় দেখার সুযোগ হয়নি। কিন্তু পরে ভিসিআর, সিডি, ডিভিডিতে এই ছবি দেখেছেন বিদীপ্তা। থ্রিডি-তে মুক্তি পেয়েছিল ‘শোলে’। কন্যাদের নিয়ে প্রেক্ষাগৃহে দেখতে গিয়েছিলেন। আর বার বার মুগ্ধ হয়েছিলেন জয়া ভাদুড়িকে দেখে। অভিনেত্রীর কথায়, “জয়ার সেই নীরবতা কী অদ্ভুত ছিল! কত কম সংলাপ ছিল। কিন্তু তাও চরিত্রটা দাগ কেটে গিয়েছিল মনে। ছোটবেলাতেই মনে হয়েছিল, এমন চরিত্রে জয়া ভাদুড়ির মতো যেন অভিনয় করতে পারি।”

‘শোলে’ ছবির কয়েক প্রজন্ম পরে প্রজন্ম। কিন্তু তাও সাহেব ভট্টাচার্যের উন্মাদনাও এই ছবি নিয়ে কম নয়। ‘শোলে’র প্রসঙ্গ শুনেই অভিনেতা বলেন, “এই ছবি মুক্তির সময় আমার জন্ম হয়নি। পরে দেখেছি ছবিটা। ছোটবেলায় এক ভাবে দেখেছি। পরে বড় হয়ে অভিনেতা হওয়ার পরে আর এক রকমের অনুভূতি। আমি এই ছবিকে পথপ্রদর্শক বলে মনে করি। তার আগে বলিউডে ছবি সংক্রান্ত তথাকথিত যা যা নিয়ম ছিল, তা কিন্তু সব ভেঙে দিয়েছিল ‘শোলে’।”

ছবি ঘিরে উন্মাদনা এতটাই তুঙ্গে উঠেছিল, রমেশ সিপ্পি নতুন করে শুটিং-এর পরিকল্পনা করছিলেন। সাহেব বলেন, “সেই সময়ে জয়ের (অমিতাভ) মৃত্যু কেউ মেনে নিতে পারছিলেন না। অদ্ভুত ভাবে প্রধান নায়কের বন্ধুর চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন অমিতাভ। নায়িকার সঙ্গে কোনও গান বা রোম্যান্টিক দৃশ্য নেই। সেই সময়ে হিন্দি ছবির ক্ষেত্রে এটা বিরাট ব্যতিক্রম। তার আগে ‘জঞ্জির’ মুক্তি পেয়ে গিয়েছে। অর্থাৎ তত দিনে অমিতাভও জনপ্রিয়। তার পরেও বন্ধুর চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন তিনি।”

‘শোলে’ তৈরি হয়েছিল ৩ কোটি টাকায়। ভারতে সেই সময়ে ১৫ কোটি টাকার ব্যবসা করেছিল। সারা বিশ্বে ৩৫ কোটি টাকার ব্যবসা করে। সাহেবের মতে, আজকের নিরিখে এই পরিমাণ বক্স অফিস সংগ্রহ বড় বাজেটের হিন্দি ছবিকে অনায়াসে টেক্কা দেবে। অভিনেতার কথায়, “এই ছবি সব নিয়ম ভেঙে তৈরি হয়েছিল। স্রোতের বিপরীতে তৈরি হওয়া একটি ছবি। এই ছবি থেকে এই শিক্ষাটাই পেয়েছিলাম।”

প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেলে ছবি দেখতে যেতে আগ্রহী বিদীপ্তা, ঊষসী ও সাহেব তিন জনই। তবে কৌশিকের মত, “ছোটবেলায় একটা ম্যাজিক দেখেছিলাম। হাঁ হয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু এখন আমার পরিণত মনটা অনেক অপ্রয়োজনীয় ত্রুটি খুঁজতে চাইবে। তার চেয়ে ছোটবেলার অনুভূতিটাই কৌটোয় বন্দি হয়ে থাকুক।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement