দু’দশক আগে খানিকটা এমনই ছিল শাহরুখ খানের লড়াই।
জার্মানির একটি হল-এ তাঁর ‘অশোক’-এর মুক্তির আশায় তখন মরিয়া ছিলেন বাদশা। সেই জার্মানিতে এখন কিন্তু বলিউডের কোটি টাকার বাজার। এই বাজারটা ধরতে এ বার টালিগঞ্জেও নড়াচড়া শুরু হয়েছে। পয়লা বৈশাখ মুক্তির অপেক্ষায় থাকা একটি বাংলা ছবি ইউরোপ-আমেরিকা-অস্ট্রেলিয়া-পশ্চিম এশিয়ার ৩৫টি শহরেও মুক্তি পাকা করে ফেলেছে। গত বছর বলিউডের পরিবেশক ইরোজ ফিল্মস-এর উদ্যোগে শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়-নন্দিতা রায়ের ‘প্রাক্তন’ দেশের ২৪টি শহরের সঙ্গে আমেরিকা-কানাডার সাতটি শহরে মুক্তি পায়। সন্দীপ রায়ের ‘ডবল ফেলুদা’ও তারা আমেরিকায় দেখানোর ব্যবস্থা করে। এ যাত্রা টালিগঞ্জের রেডারে আমেরিকা-কানাডার ন’টি শহর ছাড়া প্যারিস-লন্ডন-সহ ইউরোপের ১৬টি, অস্ট্রেলিয়ার পাঁচটি এবং পশ্চিম এশিয়ার পাঁচটি শহর।
কী রকম? বলিউডে আশুতোষ গোয়ারিকরের ইউনিটে একদা ক্রিয়েটিভ অ্যাডভাইজার ছিলেন সৌরভ চক্রবর্তী। তাঁর প্রথম ছবি ‘অরণি তখন’ নিয়ে মাঠে নামছে ফিল্ম পরিবেশক সংস্থা ‘বেঙ্গল সম্ভার’। তাদের কর্তা শুভজিৎ রায়ের কথায়, ‘‘দুবাই থেকে রোমের অনাবাসী বাঙালির কাছে পৌঁছতে চাই। ছবি ভাল হলে অবাঙালিরাও দেখবেন।’’ পাওলি-সৌমিত্র-ইন্দ্রনীল-প্রতীক বব্বর অভিনীত ‘অরণি তখন’ বাবরি মসজিদ-কাণ্ডের পটভূমিতে প্রেমকাহিনি! সৌরভের কথায়, ‘‘এমন বিষয় শুধু কলকাতা আর শহরতলির মাল্টিপ্লেক্সমুখী দর্শকের মধ্যে আটকে রাখতে চাইনি।’’ আন্তর্জাতিক রিলিজের নিয়ম মেনে দেশে দেশে আলাদা সেন্সর করাতে হয়েছে। ইংরেজি-সহ ফরাসি, স্প্যানিশ, আরবি সাবটাইটেলও তৈরি। কলকাতার পরিবেশকেরা স্থানীয় পরিবেশকদের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধেছেন।
আরও পড়ুন: শুটিংয়ে গাড়ি দুর্ঘটনায় আহত জিত্, দেখুন ভিডিও
পরিবেশকদের মতে, ইউরোপের বাজারে রিলিজ করা গেলে বিদেশি চ্যানেলেও বাংলা ছবির টিভি স্বত্ব বিক্রি হতে পারে। এর আগে হুমায়ুন আহমেদের গল্প় নিয়ে বাংলাদেশি ছবি ‘অনিল বাগচীর একদিন’-এর টিভি স্বত্ব ইউরোপে বিক্রি হয়েছে। অ্যান্টি-পাইরেসি সফ্টওয়্যার দিয়ে ডিজিটাল মাধ্যমে ছবি ফাঁস হওয়া ঠেকিয়ে রাখা গেলে কিছু পুরনো ছবিরও সম্ভাবনা রয়েছে। শুভজিৎবাবুরা যেমন দেবেশ চট্টোপাধ্যায়ের ‘নাটকের মতো’কে ইউরোপের বাজারে নিয়ে যাচ্ছেন। ওই ছবির প্রযোজক ফিরদৌসুল হাসান তাঁর পরের ছবি অনীক দত্তের ‘মেঘনাদবধ রহস্য’ বিদেশে রিলিজ করানোর কথা ভাবছেন। মে মাসে শিবপ্রসাদদের পরের ছবি ‘পোস্ত’র জন্য আমেরিকার কয়েকটি হল-এ বুকিং চলছে। ব্রিটেন, ফ্রান্স বা চিনেও খুলতে পারে দরজা।
তবে গ্লোবাল রিলিজ হলেও সাফল্য তুড়ি মেরে আসে না! ইউরোপ-অস্ট্রেলিয়ার পরিবেশকেরা ছবির মান নিয়ে খুঁতখুঁতে। বিভিন্ন অঞ্চলে ছবি রিলিজের খরচও ২-৩ থেকে ১০-১২ লক্ষ টাকা। হলের সিকি ভাগ না-ভরলে পড়তায় পোষাবে না। পরিচালক কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় মনে করাচ্ছেন, সব দিক ভেবে তবেই এগোতে হবে। কৌশিকও তাঁর নতুন ছবি ‘বিসর্জন’ নিয়ে বিদেশের মাঠে পৌঁছতে চান। কিন্তু তাঁর আশঙ্কা, দক্ষ পরিবেশকেরা সঙ্গে না-থাকলে হিতে বিপরীত হবে!