সুস্মিতা সেন
শরীর দেখানো পোশাক পরা এখন নতুন ট্রেন্ড। কী পুরুষ কী নারী সকলেই এখন শরীর প্রদর্শন করতে চাইছেন।
না, শরীর দেখানো কথাটাকে কিছুতেই অশ্লীল মনে করবেন না। আসল কথা ওয়ার্ক আউট করে এখন শরীর এত সুন্দর হয়ে উঠছে যে স্বচ্ছ পোশাকের ভেতর দিয়ে শরীর দেখা গেলেও কেউ অস্বস্তি বোধ করছেন না।
কিন্তু বছর খানেক আগে সুপার মডেল লিজা হেডেন যখন এই রকম স্বচ্ছ পোশাক পরে একটি পুরস্কার অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন তখন অনেকেই তাঁর সাজ দেখে বিরূপ সমালোচনা করেছিল। ‘‘আমি আমার সময়ের থেকে এগিয়ে ফ্যাশন করেছিলাম। সেই জন্যই অমন নিন্দে শুনতে হয়েছিল। কিন্তু এখন তো সবাই ওই ধরনের পোশাকই পরছে,’’ হেসে বললেন লিজা হেডেন।
‘পিকু’র সাকসেস পার্টিতে দীপিকা পাড়ুকোনও একটা খোলামেলা পোশাক পরেছিলেন। শরীর দেখা যাচ্ছিল বটে, কিন্তু সকলেই সেই পোশাকের প্রশংসাও করেছিল। পৃথিবীর অন্যতম সেরা ফ্যাশন ইভেন্ট—মেট গালা অ্যাওয়ার্ডসের রেড কার্পেটে সেলিব্রিটিদের স্বচ্ছ পোশাক নিয়ে প্রচুর আলোচনা হয়েছে। ওই রেড কার্পেটে যে ধরনের হঠকে ফ্যাশন দেখা যায় তা ফ্যাশন দুনিয়াকে প্রভাবিত করে।
ডিজাইনার কিরণ উত্তম ঘোষ বলছেন, ‘‘এই ধরনের জামাকাপড়ের ব্যাপারই আলাদা। শরীর দেখা গেলেও মেয়েদের অশ্লীল দেখায় না। বরং একটা রহস্যময় লুক তৈরি করে। পুরো শরীরটা দেখা যায় না অথচ একটা আভাস থাকে।’’
বর্ষীয়ান ডিজাইনার ঋতুকুমারও স্বচ্ছ ফ্যাব্রিক ব্যবহার করতে ভালবাসেন। তাঁর মতে এই ধরনের কাপড় ভারতের গ্রীষ্মপ্রধান দেশে খুব আরামদায়ক। ওজনে হালকা বলে সকাল থেকে বিকেল অবধি পরা যায়।
স্বচ্ছ কাপড়ের মধ্যে এক ধরনের সাবেকি সৌন্দর্য আছে। পরলে সেক্সিলুকটাও বেরিয়ে আসে। স্বচ্ছ কাপড় দিয়ে ডিজাইনার ওয়েন্ডেল রডরিকস সাদা রঙের একটা শাড়ি বানিয়েছিলেন কয়েক বছর আগে। সেই শাড়ি নিয়ে এখনও আলোচনা হয়। সে শাড়িতে কোনও স্টাইলিং ছিল না। ছিল না কোনও অলঙ্কারের ব্যবহার। শুধু একটা ডিজাইন করা আঁচল ছিল—তা সত্ত্বেও একটা সাদা শাড়ি এত সুন্দর লাগতে পারে, না দেখলে বিশ্বাস করা যাবে না। কিন্তু কী করে একজন সাধারণ মেয়ে এই ধরনের কাপড় পরবেন? ডিজাইনার ওয়েন্ডেল বলছে্ন ‘‘একটা কথা খেয়াল রাখা দরকার। নিউ ইয়র্কের মেট গালা রেড কার্পেট মূলত তারকাদের জন্য। পৃথিবীর কোনও প্রান্তের সাধারণ মেয়েদের জন্যই ওই ফ্যাশন নয়।’’ কিন্তু স্বচ্ছ কাপড় ঠিকঠাক ভাবে পরলে মহিলাদের যে সম্ভ্রান্ত দেখায় এটা স্বীকার করছেন ওয়েন্ডেল। তিনি বলছেন এই ধরনের পোশাকে মেয়েদের লাস্যময়ী দেখায় কিন্তু অশালীন দেখায় না।
ফ্যাশন বিশেষজ্ঞেরা বলছেন ভারতে অনেক দি ন ধরেই সি থ্রু পোশাকের ব্যবহার আছে। তার কারণ সুতির কাপড়ের মধ্যে এক ধরনের স্বচ্ছতা থাকে। তাতে শরীর অনেকটাই দেখা যায়। সেটাই এখন আরও সাহসী হয়ে উঠেছে।
ওয়ার্ড্রোবে স্বচ্ছ পোশাক
ফুলিয়ার স্বচ্ছ সিল্কের কাপড় এক সময় শুধু শাড়িতেই ব্যবহার হত। এখন তা দিয়ে কুর্তা, স্কার্ফ, শাল, ওড়না, পঞ্চো জাতীয় পোশাক ইত্যাদি অনেক কিছুই বানানো যায়।
মনে রাখবেন দিনের বেলা সেমি ট্রান্সপারেন্ট লুকটা ভাল যায়। তাই ফুলিয়ার সিল্কের সঙ্গে পাটের সুতো মেশানো থাকলে ভাল হয়।
নেট কাপড় ব্যবহার করে খোলামেলা লুক তৈরির চেষ্টা করবেন না। ওটা ভাল দেখায় না।
স্বচ্ছ কাপড়ের পোশাক পরতে হলে ভেতরে আর একটা পাতলা কিছু পরবেন। যাঁদের কোমর চওড়া এবং পা সরু তাঁরা হেমলাইনের কাছে যদি স্বচ্ছ কাপড় ব্যবহার করেন তা হলে সামগ্রিক এফেক্টটা ভাল হয়।
একটা সাধারণ কাপড়ের পোশাকের ওপর যদি স্বচ্ছ ওড়না, শাল বা পঞ্চো ব্যবহার করা হয় তা হলে সাধারণ পোশাকটা আর সাধারণ থাকে না।
অকারণে সেক্সি সাজের চেষ্টা করবেন না। স্বচ্ছ কাপড়ের রঙেরই অন্তর্বাস পরুন। তার ওপর পরুন সেই রঙেরই একটা সেমিজ। তার ওপর পরুন আপনার পছন্দের স্বচ্ছ পোশাকটি।
সন্ধ্যা সাজে
সারা দিন যদি কোনও স্বচ্ছ পোশাক পরে থাকেন এবং সেই ভাবেই যদি কোনও সান্ধ্য অনুষ্ঠান বা নৈশভোজে যাবার থাকে তা হলে ওই স্বচ্ছ কাপড়ের ওপর একটা উজ্জ্বল স্টোল বা দোপাট্টা জড়িয়ে নিন। আর যদি সাধারণ অফিসওয়্যারে থাকেন তা হলে স্বচ্ছ একটা শাল বা দোপাট্টা আপনার ক্লান্ত অফিসওয়্যার লুকটাকে চনমনে করে তুলতে পারে। এই কাপড়ের সান্ধ্য পোশাকের সঙ্গে উজ্জ্বল রঙের মেক আপ ভাল লাগে।
কী গয়না পরবেন
স্বচ্ছ কাপড়ের সঙ্গে মুক্তো হল সবচেয়ে সুন্দর ম্যাচ। চুলে জড়াতে পারেন টাটকা ফুলের মালা।
সোনা, রুপো, ক্রিস্টাল, তামা, হিরে —সব কিছুর গয়নাই স্বচ্ছ কাপড়ের সঙ্গে ভাল মানায়।
কিন্তু এটা মনে রাখবেন যে স্বচ্ছ কাপড়ের সঙ্গে ‘সিম্পল লুক’ টাই সব চেয়ে ভাল যায়।
স্টাইলিং টিপস দিয়েছেন
ঋতু কুমার, ওয়েন্ডেল রডরিকস, আর কিরণ উত্তম ঘোষ।