উৎপলেন্দু চক্রবর্তী। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য
আশির দশকে তাঁর ‘ময়নাতদন্ত’, ‘চোখ’, ‘দেবশিশু’ দেখে ছিটকে যাননি, এমন সিনেমাপ্রেমীর সংখ্যা নেহাত কম নয়। ঝুলিতে রাষ্ট্রপতি পুরস্কার, এনএফডিসি-র স্বর্ণপদক। ২০১৭-য় সেই চিত্র পরিচালক উৎপলেন্দু চক্রবর্তীর বাস দশ ফুট বাই দশ ফুট ভাড়ার ঘরে। যে ঘরের দেওয়াল জোড়া স্মৃতির পাহাড়। মাটিতে তক্তপোশ। জলের কুঁজো। মলিন ফ্লাস্ক। ডাঁই করা খবরের কাগজ। খানকতক বই। চরম অর্থাভাব আর অসুস্থতার সঙ্গেই এখন তাঁর দিনমানের সহবাস। সদ্য অপারেশনের পর ছিলেন দাদার কাছে। সেখান থেকে পঞ্চসায়রের হোম। তার পর এই ডেরা। শরীর শুকিয়ে কাঠ। হাঁটায় শম্বুকের গতি। চামড়ায় ভুখা পেটের ছাপ। স্পন্ডিলোসিস। প্রস্টেটের সমস্যা। চোখের অপারেশন হয়েছে চারবার। তবু একলার সংসার সামাল দিতে হয় তাঁকেই। কাপড়কাচা, ঘরমোছা, হাত পুড়িয়ে রান্না। দুই বন্ধু, এক ডাক্তারবাবু সাহায্য করেন, এই যা! একটি সংস্থা মাস গেলে এক হাজার টাকা দেয়। ওষুধের খরচাটাও। তার পর জমানো টাকা ভরসা। বলছিলেন, ‘‘আত্মহত্যা করাটা আমার কাছে ঘৃণার, নইলে কবেই মরে যেতাম!’’ দু’মিনিট কথা বললেও প্রাক্তন স্ত্রী শতরূপা সান্যাল আর দুই অভিনেত্রী মেয়ের কথা পাড়েন, ‘‘বড় চিত্রাঙ্গদা আমার ভালবাসা, আর ছোট ঋতাভরী আমার মায়া, দুর্বলতা। কেন যে ওরা বাপের সঙ্গে যোগাযোগটা রাখে না!’’ তবে আজও ছবি তৈরির স্বপ্ন দেখেন। স্ক্রিপ্ট লিখেছেন, একটি হাসির। অন্যটি ভ্রুণহত্যা নিয়ে। লিখছেন প্রবন্ধও। তার একটি ‘স্মৃতিটুকু থাক’, নানা বিখ্যাত জনকে কাছ থেকে দেখার কথা। অন্যটি ‘আমার চলচ্চিত্রের অভিযান অসম্পূর্ণ’! ‘‘মরে যাওয়ার আগে প্রমাণ করতে চাই, আমি ফুরিয়ে যাইনি,’’ এই প্রথমবার বিদ্যুৎ খেলে গেলে সত্তরোর্ধ্ব বৃদ্ধর চোখে।