Uttam Kumar

Uttam Kumar: ‘মহানায়ক অভিনেতা না তারকা?’ স্মৃতিসভায় প্রশ্ন তুলেছিলেন স্বয়ং সত্যজিৎ

মহানায়কের মূল্যায়ন করতে গিয়ে সত্যজিৎ রায় উপলব্ধি করেছিলেন, ‘নায়ক’ তারকা-অভিনেতার জন্ম দিয়েছিল। 

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৪ জুলাই ২০২১ ১০:২৩
Share:

উত্তম কুমার।

সত্যজিৎ রায় যখন মহানায়ককে চিনতেন তখন উত্তম কুমার বাংলার জনপ্রিয় নায়ক। মহানায়ক নন। সত্যজিতের সঙ্গে ‘নায়ক’ আর ‘চিড়িয়াখানা’ ছবিতে কাজ করছিলেন উত্তম। প্রথম ছবিতে ‘নায়ক’ উত্তম কুমার আর তার আড়ালে থাকা ‘মানুষ’ উত্তম প্রকাশ্যে এসেছিল।

Advertisement

১৯৮০-র ২৪ জুলাই উত্তম কুমার চলে গেলেন। এর পরেই অগষ্টে নিউ থিয়েটার্সে উত্তম স্মরণে একত্রিত হয়েছিলেন তাঁর সঙ্গে কাজ করা সমস্ত তারকা অভিনেতা, প্রযোজক, পরিচালক। সেখানেই কিংবদন্তি পরিচালক উত্তম কুমার সম্পর্কে তাঁর অনুভূতি তুলে ধরেছিলেন সত্যজিৎ।

তাঁর ‘নায়ক’-কে নিয়ে কী বলেছিলেন তিনি? ‘‘উত্তমকে যখন প্রথম পর্দায় দেখি তখনও আমি পরিচালনায় আসিনি। সেই সময় শুনেছিলাম, বাংলা ছবিতে নতুন নায়ক এসেছেন। শুনে তাঁকে দেখার আগ্রহ হয়েছিল। সেই দিনগুলোয় যে সব নায়কেরা ছিলেন তাঁদের মধ্যে দুর্গাদাস বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রমথেশ বড়ুয়া, সায়গল, ধীরাজ ভট্টাচার্য জনপ্রিয়। যদিও তাঁরা পাশ্চাত্যের নায়কদের সমতুল্য জনপ্রিয় ছিলেন না।’’

Advertisement

পরিচালকের দাবি, নিছক আগ্রহ থেকেই ‘‘আমি একটানা উত্তমের তিনটি ছবি দেখেছিলাম। তিনটিরই পরিচালক নির্মল দে। প্রথম দেখাতেই ভাল লেগেছিল উত্তমকে। উত্তমের চেহারা সুন্দর। তাঁর উপস্থিতি যথেষ্ট আকর্ষণীয়। এবং তাঁর অভিনয়ে মঞ্চাভিনয়ের কোনও ছাপ নেই। ফলে, আমি কিন্তু ওঁর উজ্জ্বল ভবিষ্যত সেই সময়েই দেখতে পেয়েছিলাম।’’

উত্তমের সঙ্গে সত্যজিতের কাজ করার সুযোগ অনেক পরে এসেছিল। তত দিনে উত্তম কুমার তারকা। প্রায় প্রতি বাংলা ছবিতে তিনিই নায়ক। সুচিত্রা সেনের সঙ্গে জুটি বেঁধে একের পর এক হিট ছবি উপহার দিচ্ছেন। পরিচালকের কথায়, ‘‘উত্তম তত দিনে হলিউডের ব্যাকরণ মেনে আক্ষরিক অর্থেই তারকা।’’ তার পরেই তাঁর মোক্ষম প্রশ্ন, ‘‘একই সঙ্গে তিনি কি অভিনেতা হয়ে উঠতে পেরেছিলেন?’’

প্রশ্নের উত্তরও সত্যজিৎ নিজেই দিয়েছিলেন। উদাহরণ হিসেবে তিনি নাম নিয়েছিলেন কিংবদন্তি হলিউড তারকা গ্রেগরি পেকের। যাঁর অভিনয় প্রতিভা চাপা পড়ে গিয়েছিল ‘স্টারডম’-এর নীচে। পরিচালকের দাবি, ‘‘গ্রেগরি পেককে কেউ কোনও দিন ভুলবে না। তার পরেও বলব, তারকার খ্যাতি সামলাতে না পারলে এ ভাবেই খ্যাতির বিড়ম্বনায় পড়তে হয়।’’ পাশাপাশি তিনি এও স্বীকার করেন, তারকাসুলভ হয়ে ওঠার পরেও উত্তমের মধ্যে প্রচুর সম্ভাবনা ছিল। যা গ্রেগরি পেক দেখাতে পারেননি।

তাই ‘নায়ক’ পরিচালনার আগে পরিচালক এমন একটি দৃশ্যকল্প ভেবেছিলেন যার সঙ্গে অনায়াসে মহানায়ক নিজেকে মিশিয়ে দিতে পারবেন।

উত্তমের জীবনের কিছুটা নিয়েই তিনি তৈরি করেছিলেন তাঁর ছবি। সত্যজিতের ভাবনা শুনে এক কথায় রাজি হয়েছিলেন উত্তম কুমার। কেবলমাত্র পরিচালককে ভরসা করে নায়কসুলভ সমস্ত আচরণ সরিয়ে স্বাভাবিক অভিনয় করেছিলেন। সেই সময় সদ্য বসন্ত থেকে ভুগে উঠেছেন। মুখে বেশ দাগ। তার পরেও সত্যজিতের কথা মেনে এক ফোঁটাও মেক আপ করেননি তিনি। বাকিটা ইতিহাস। পরিচালক নিজে স্বীকার করেছেন, ‘‘খুব তাড়াতাড়ি চরিত্রে ঢুকে যেতে পারতেন। চরিত্র হয়ে উঠতেন। তার আগে খুঁটিনাটি আলোচনাও সেরে নিতেন। ছবিতে এমন অনেক দৃশ্য আছে যেটা উত্তম মাথা খাটিয়ে বের করেছিলেন। আমি অবাক হয়ে দেখতাম ওঁর সহজাত অভিনয় প্রতিভা।’’

মহানায়কের মূল্যায়ন করতে গিয়ে সত্যজিত রায় উপলব্ধি করেছিলেন, দুই শিল্পীর আন্তরিক প্রচেষ্টা এক তারকা-অভিনেতার জন্ম দিয়েছিল।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement