দ্রষ্টি ধামি ও শক্তি অরোরা
টেলিভিশনের নিয়মিত দর্শকের কাছে তাঁরা শাহরুখ-কাজলের চেয়ে কম কিছু নন। কোঁকড়ানো চুল, দুধে আলতা রং আর মিষ্টি হাসির ‘মধুবালা’র টানে বুঁদ হয়ে থাকতেন কলেজের অষ্টাদশী থেকে গৃহবধূ। আবার রণবীর বঘেলার সোয়্যাগে পাগল হননি এমন মেয়ে কমই আছে। কথা হচ্ছে, দ্রষ্টি ধামি ও শক্তি অরোরার। ছোট পর্দার জনপ্রিয় দুই অভিনেতা এ বার নতুন ধারাবাহিক ‘সিলসিলা বদলতে রিশতো কা’-এ। ধারাবাহিকে তাঁরা জুটি নন। তবে গল্পের স্রোতে নন্দিনী (দ্রষ্টি) ও কুণালের (শক্তি) সম্পর্কও বদলাবে সময়ের সঙ্গে।
দ্রষ্টির ঝুলিতে ধারাবাহিকের সংখ্যা বেশি নয়। তবে সব ক’টি সুপারহিট। নায়িকা বললেন, ‘‘আমি যে খুব বেছে শো করি সেটা নয়। তবে ভগবানের কৃপায় পরপর শো পেয়েছি। কাজ পেতে সে ভাবে কষ্ট করতে হয়নি।’’ অন্য দিকে শক্তির কথায়, ‘‘আমি যে কত প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছি, তার হিসেব নেই। যে চরিত্রের উপর নিজের আস্থা নেই, তা দর্শকের কাছে বিশ্বাসযোগ্য ভাবে তুলে ধরব কী করে?’’
দ্রষ্টি যখন কাজ শুরু করেছিলেন, পরিবারের খুব একটা সমর্থন পাননি তখন। ‘‘আসলে টেলিভিশনে এত ধরনের মানুষের সঙ্গে কাজ করতে হয়, বাড়ির লোকজন একটু বেশি সতর্ক থাকত। তার সঙ্গে কাজের শেডিউলও ছন্নছাড়া। আমার এক আত্মীয় বোঝানোর পরে এখন আর ওদের ভয় নেই। বিরতি নিলে বাড়ির লোকেই বলে, কাজে ফিরবে কবে?’’ হাসতে হাসতে বলছেন তিনি। শক্তির পরিবারে মা, দুই দিদি ডাক্তার। ‘‘আমি বলেছিলাম, ডাক্তার হব না। পর্দায় ডাক্তারের চরিত্রে অভিনয় করব,’’ মুচকি হেসে বলছেন শক্তি। এই ধারাবাহিকে তিনি ডাক্তারের ভূমিকায়।
পর্দায় অনেকের সঙ্গে রোম্যান্স করলেও শক্তি ও দ্রষ্টির পর্দার বাইরের জীবনেও রোম্যান্সের ঘাটতি নেই। গত মাসেই সংবাদমাধ্যমকে না জানিয়ে সহ-অভিনেত্রী নেহা সাক্সেনাকে বিয়ে করেছেন শক্তি। ‘‘আসলে পর্দায় আমি এত বার বিয়ে করেছি, বিয়ে নিয়ে আলাদা করে ফ্যান্টাসি ছিল না। অনেক টাকা খরচ না করে পরিবার ও ঘনিষ্ঠ বন্ধুবান্ধবদের সামনেই বিয়ে করতে চেয়েছিলাম। সেটাই করেছি। ব্যক্তিগত জীবনের চেয়েও কাজ নিয়ে ঢাকঢোল পেটাতে বেশি পছন্দ করি,’’ বলছেন অভিনেতা।
দ্রষ্টির স্বামী নীরজ খেমকা আবার তাঁর ধারাবাহিক দেখেন না! ‘‘আমার শো মা, শ্বশুর-শাশুড়ি দেখেন। ভাল লাগলে আমাকে এসে বলেন। তবে নীরজ সে ভাবে আমার শো দেখেই না। আমি ধারাবাহিকে এত কান্নাকাটি করি, ও সেটার সঙ্গে আমাকে মেলাতে পারে না। বাস্তবে তো আমিই ওকে কাঁদাই,’’ সিগনেচার স্টাইলে হাসতে হাসতে বলছেন নায়িকা।
শক্তির মহিলা অনুরাগীদের সংখ্যা তো নেহাত কম নয়। স্ত্রী সেই চাপ কী ভাবে সামলান? ‘‘কী আর করবে! ভিড় দেখলেই আমার হাতটা চেপে ধরে। এটা বোঝাতে যে, আমি অলরেডি টেকেন। ইন্দোনেশিয়ায় এক বছর কাটালাম। আমার শো ‘মেরি আশিকি তুম সে হি’ ওখানে এতটা জনপ্রিয় হয়েছে যে কী বলব! লোকজন দেখলেই এমন ভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ত, প্রাণটা মনে হতো বেরিয়ে যাবে,’’ বলছেন শক্তি।
ছোট পর্দায় যখন এত জনপ্রিয়তা, বড় পর্দার কথা ভাবছেন না? ‘‘অনেক বড় বড় প্রোডাকশন হাউসের কাছ থেকে আমি প্রস্তাব পাচ্ছি। কিন্তু হয় ছোটখাটো চরিত্র, নয়তো বা সেকেন্ড লিড। আমি আসলে মুখ্য চরিত্রই চাই। সেই জন্যই টেলিভিশন,’’ মন্তব্য শক্তির। এই বিষয়ে দ্রষ্টি একেবারে উল্টো পথে। ‘‘টেলিভিশন করেই আমি ভীষণ খুশি! ভাল ছবির প্রস্তাব পেলে করব কি না সেটা তখন ভাবব। এখন সঞ্জয় লীলা ভন্সালী যদি প্রস্তাব দেন, সেটা আলাদা ব্যাপার,’’ সব পথই খোলা রাখছেন অভিনেত্রী।
এই ধারাবাহিকে শাড়িতেই দেখা যাবে দ্রষ্টিকে। যদিও শাড়িতে একেবারেই স্বচ্ছন্দ নন তিনি। ‘‘এখনও পর্যন্ত করা চরিত্রের মধ্যে এই চরিত্রটি সবচেয়ে পরিণত। দু’টি দম্পতির সম্পর্ক ও বন্ধুত্বের বদলে যাওয়া রং নিয়ে গল্প।’’ অভিনেত্রী এটাও জানিয়ে দিলেন যে, এখনই পর্দায় মা বা বৌদির চরিত্রে কাজ করবেন না।
অভিনেতা শক্তি এক সময়ে ট্যারো কার্ডও পড়তেন। ‘‘এখন সেটা ছেড়ে দিয়েছি। আগে থেকে না জেনে নতুন নতুন চমকের মধ্য দিয়েই জীবনকে চিনে নেওয়া ভাল,’’ উপলব্ধি তাঁর।
শক্তি-দ্রষ্টির এই সফরেও নতুন চমকের অপেক্ষায় রইলেন দর্শক।