বাকি আর কয়েকটা দিন। ভোট-দামামার আওয়াজ শোনা যাচ্ছে সর্বত্র। সেই দামামার আওয়াজ পৌঁছেছে টলিউডেও। যে আওয়াজে দলে দলে তারকা নাম লেখাচ্ছেন বিভিন্ন শিবিরে। কেউ যাচ্ছেন ঘাসফুলে, কারও পছন্দ গেরুয়া শিবির, কেউ বা ভরসা রাখছেন বাম জোটে। ভোটের শেষে কোন শিবিরের হাসি চওড়া হবে, সে উত্তর তো সময় দেবে। কিন্তু তার আগে দেখে নেওয়া যাক টলিউডি গ্ল্যামারের নিরিখে কোন দল এগিয়ে থাকল।
রাজ চক্রবর্তী- বরাবরই ইন্ডাস্ট্রিতে তৃণমূল ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত রাজ। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিক ভাবে দলের পতাকা হতে তুলে নিয়েছেন বাংলা ছবির প্রথম সারির এই পরিচালক। ‘চ্যালেঞ্জ’, ‘পরিণীতা’, ‘প্রলয়’ ইত্যাদি ছবিতে তাঁর ফিল্মোগ্রাফি উজ্জ্বল। এর আগে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রীর পাশে দেখা গিয়েছে তাঁকে।
যশ দাশগুপ্ত- রাজনৈতিক মঞ্চে খুব একটা দেখা যেত না যশ দাশগুপ্তকে। তবে পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা ভোটের আগে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি বিজেপি-তে নাম লিখিয়েছেন অভিনেতা। রাজনীতিতে পা দেওয়ার আগেই তৃণমূল সাংসদ ও অভিনেত্রী নুসরত জাহানের সঙ্গে তাঁর ‘বিশেষ বন্ধুত্ব’ নিয়ে অনেক জলঘোলা হয়েছে টলি-পাড়ায়। তার পরে দেখা গেল তিনি গেরুয়া ঝাণ্ডা হাতে নিয়েছেন। তাই তাঁদের সম্পর্কের সমীকরণ নিয়ে কৌতূহল বেড়েছে।
সৌরভ দাস- ওয়েব সিরিজের সুবাদে সৌরভ দাস পরিচিত ‘মন্টু পাইলট’ নামে। গত ২২ জানুয়ারি ঘাসফুল শিবিরে আনুষ্ঠানিক ভেবে নাম লেখান সৌরভ। তিনি তৃণমূলে যোগদানের পরেই একটি ভিডিয়ো ভাইরাল হয় নেটমাধ্যমে। সেখানে অভিনেতা তাঁর বোনের সঙ্গে ‘নোংরামি’ করছেন বলে দাবি করেন নেটাগরিকদের একাংশ। এর পরেই কুরুচিকর মন্তব্য, মিম, ট্রোল ধেয়ে আসে অভিনেতার দিকে।
শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায়- তৃণমূল ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায় গত ১ মার্চ হাতে তুলে নিয়েছেন গেরুয়া পতাকা। ‘রাজ্য এবং দেশের মঙ্গল সাধনের জন্য’ই এই সিদ্ধান্ত বলে জানিয়েছেন শ্রাবন্তী। অভিনেত্রীর মতে, তাঁকে যোগ্য মনে করা হয়েছে বলেই দলের অংশ হওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
রণিতা দাস- টেলিভিশন জগতে ‘বাহামনি’ নামে বিখ্যাত তিনি। বরাবরই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ। বিধানসভা নির্বাচনের আগে গত ৬ ফেব্রুয়ারি তৃণমূলের পতাকা হাতে তুলে নিয়েছেন অভিনেত্রী।
হিরণ চট্টোপাধ্যায়- রাজনীতর ময়দানে তিনি নতুন নন। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে তৃণমূল যুব কংগ্রেসের পদাধিকারী ছিলেন অভিনেতা। যশের বিজেপি-তে যাওয়ার একদিন পর অর্থাৎ ১৮ ফেব্রুয়ারি বাংলা থেকে ‘অলক্ষ্মী’ দূর করার লক্ষ্য নিয়ে পদ্মশিবিরে নাম লিখিয়েছেন অভিনেতা।
কৌশিক রায়- বরাবরই রাজনীতিতে আসার ইচ্ছা ছিল অভিনেতার। এক সময়ে বামপন্থী হিসেবে পরিচিত অভিনেতা নিজের জেলা, নিজের শহরের জন্য কাজ করতে গেরুয়া শিবিরকে বেছে নিয়েছেন এ বারে। গত ২৯ জানুয়ারি বিজেপি-র পতাকা হতে তুলে নেন তিনি। অভিনেতা যে একজন ভাল নেতাও হতে পারেন, সেটাই প্রমাণ করে দিতে চান ‘খড়কুটো’-র সৌজন্য।
মানালী দে- রাজনৈতিক এবং ব্যক্তিগত, দুই ক্ষেত্রেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপর ভরসা রাখেন অভিনেত্রী। হুগলির সাহাগঞ্জে রাজ চক্রবর্তী, সুদেষ্ণা রায়-সহ আরও কিছু টলি তারকার সঙ্গে তৃণমূলে নাম লিখিয়েছেন তিনি। কোনও পরিস্থিতিতেই যে ‘দিদি’-র সঙ্গ তিনি ছাড়বেন না, সে কথা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন তিনি।
সৌপ্তিক চক্রবর্তী- টেলিভিশনের ‘লোকনাথ’ তিনি। তাঁর প্রেমিকা অভিনেত্রী রণিতা দাসও যোগ দিয়েছেন তৃণমূলে। তাঁরই সঙ্গে সৌপ্তিকও ভরসা রেখেছেন সে দলে।
কাঞ্চন মল্লিক- অভিনেতার ৩ পুরুষের বাস কালীঘাটে। ছোট থেকেই মুখ্যমন্ত্রী এবং তাঁর পরিবারকে চেনেন কাঞ্চন। তিনি মনে করেন, অনেকেই নিজের ভবিষ্যৎ গুছিয়ে নিয়ে প্রকৃত কাজের সময় মুখ্যমন্ত্রীর পাশ থেকে সরে গিয়েছেন। তাই এমন সময়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন অভিনেতা।
সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়- বুধবার তৃণমূল ভবনে গিয়ে দলে যোগ দিয়েছেন অভিনেত্রী সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়। “পাকাপাকি ভাবে দিদির পাশে থাকতে পারব বলেই এই সিদ্ধান্ত”, আনন্দবাজার ডিজিটালকে জানিয়েছেন তিনি।
পাপিয়া অধিকারী- নয়ের দশকের জনপ্রিয় অভিনেত্রী পাপিয়া অধিকারী ১৭ ফেব্রুয়ারি গেরুয়া দলে যোগ দিয়েছেন। খাতায় কলমে যোগ দেওয়ার আগে তাঁকে বিজেপি-র বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যেতে দেখা গিয়েছে। এক সময়ে তিনি বামদলের ঘনিষ্ঠ ছিলেন বলে শোনা যেত। কিন্তু এ বারে ‘টলিউড ইন্ডাস্ট্রির উন্নয়নের জন্য’ বিজেপি-তে যোগ দিলেন বলে জানালেন অভিনেত্রী।
সৌমিলি বিশ্বাস- ‘জয় বাবা লোকনাথ’ ধারাবাহিকের নায়িকা সৌমিলি ১৭ ফেব্রুয়ারি বিজেপি-তে নাম লিখেয়েছেন। পাপিয়া অধিকারী, যশ দাশগুপ্তের সঙ্গে একই দিনে গেরুয়া পতাকা হাতে তুলে নিয়েছেন অভিনেত্রী।
ত্রমিলা ভট্টাচার্য- ‘পটল কুমার গানওয়ালা’ ধারাবাহিকের খলনায়িকা কৈলাস বিজয়বর্গীয়, দিলীপ ঘোষের হাত ধরে বিজেপিতে নাম লিখিয়েছেন ১৭ ফেব্রুয়ারি। সে দিন তাঁর সঙ্গে ছিলেন পাপিয়া অধিকারী, যশ দাশগুপ্ত, সৌমিলি বিশ্বাস-সহ আরও অনেকে।
রুদ্রনীল ঘোষ- ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে সারি বেঁধে রাজনৈতিক দলে যোগের এই যে প্রবণতা দেখা গিয়েছে টলিউডে, তা প্রথম শুরু হয় রুদ্রনীলকে দিয়েই। এক কালে বামপন্থী হিসেবে পরিচিত রুদ্রনীল তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন। এ বারে গেরুয়া শিবিরে নাম লেখালেন তিনি।
কৌশানী মুখোপাধ্যায়- ‘পারব না আমি ছাড়তে তোকে’ খ্যাত অভিনেত্রী গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ঘাসফুলে নাম লিখিয়েছেন। ছোট থেকেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভক্ত বলে জানিয়েছেন নায়িকা। এর আগে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা যেত তাঁকে। এ বার আনুষ্ঠানিক ভাবে তৃণমূলে যোগ দিলেন তিনি।
পিয়া সেনগুপ্ত- অভিনেতা সুখেন দাসের মেয়ে পিয়া এত দিন কেবল ‘ইম্পা’-র সদস্য ছিলেন। এ বার খাতায় কলমে তৃণমূলের কর্মী হলেন অভিনেত্রী। মুখ্যমন্ত্রীর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়েই রাজনীতিতে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানান পিয়া।
পায়েল সরকার- বিজেপি-র পতাকা হাতে নিয়েই ‘লে ছক্কা’-র অভিনেত্রী জানিয়েছেন, তাঁর প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছে রয়েছে। ২৫ ফেব্রুয়ারি গেরুয়া শিবিরে যোগ দিয়ে তিনি জানালেন, ‘বাংলার হারিয়ে যাওয়া গৌরব’ ফিরিয়ে আনতে চান তিনি।
ভরত কল- ৫ ফেব্রুয়ারি ব্রাত্য বসুর হাত ধরে তৃণমূলে নাম লেখালেন বর্ষীয়ান অভিনেতা ভরত কল। ‘খাদ’, ‘বাদশাহি আংটি’-সহ একাধিক ছবি এবং বিভিন্ন ধারাবাহিকে অভিনয় করেছেন কাশ্মীরি পণ্ডিত ভরত। কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা তুলে নেওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানানোর পর তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় তাঁকে নিয়ে কম চর্চা হয়নি।
জুন মাল্য- রাজ চক্রবর্তী-সহ আরও বেশ কয়েক জন টলিউডের শিল্পীর সঙ্গে সাহাগঞ্জে গিয়ে তৃণমূলে যোগ দেন অভিনেত্রী জুন মাল্য। ধারাবাহিক এবং বাংলা ছবির জনপ্রিয় মুখ জুন। রাজ্যের মহিলা কমিশনের সদস্য তিনি।
দীপঙ্কর দে- ভরত কলের সঙ্গে একই দিনে ঘাসফুলে যোগ দিয়েছেন প্রবীণ এই অভিনেতা। ‘বঙ্গভূষণ’ ও ‘বঙ্গবিভূষণ’ সম্মান দেওয়ার জন্য মুখ্যমন্ত্রীর প্রতি ‘দায়বদ্ধতা ও কৃতজ্ঞতা’ প্রকাশ করেছেন তিনি। জানিয়েছেন, সবসময় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশেই ছিলেন। কিন্তু শারীরিক অসুস্থতার কারণে আনুষ্ঠানিক ভাবে যোগ দিতে পারেননি।
সুদেষ্ণা রায়- টলিউডের প্রথম সারির পরিচালক জুটি সুদেষ্ণা রায় ও অভিজিৎ গুহ। ‘ক্রস কানেকশন’, ‘দেখ কেমন লাগে’-সহ একাধিক জনপ্রিয় ছবি বানিয়েছেন তাঁরা। রাজ চক্রবর্তীর সঙ্গে একই দিনে সাহাগঞ্জে গিয়ে ঘাসফুলের পতাকা হাতে নিয়েছেন তিনি।
লাভলি মৈত্র- ‘মোহর’ এবং ‘জলনূপূর’ ধারাবাহিকে অভিনয় করেছেন লাভলি। টেলিপাড়ায় জনপ্রিয় মুখ দীপঙ্কর দে ও ভরত কলের সঙ্গেই তৃণমূলে নাম লেখালেন তিনি। তৃণমূল ভবনে রাজ্যের মন্ত্রী ব্রাত্য বসু ও অভিনেতা সোহম চক্রবর্তীর হাত থেকে দলীয় পতাকা নেন তিনি।
শ্রীতমা ভট্টাচার্য- ‘মা’ ধারাবাহিকের ‘ঝিলিক’ নামে পরিচিত তিনি। অভিনয় করেছেন ‘ইচ্ছেনদী’ ধারাবাহিকেও। ছোট পর্দার সহকর্মী সৌপ্তিক এবং রণিতার সঙ্গে একই দিনে তৃণমূলে নাম লিখিয়েছিলেন অভিনেত্রী।