Actual Scenario Of Bengali Puja Release Movie

‘আমিই শ্রেষ্ঠ’! এই ভুয়ো স্তুতিই কি বাংলা ছবির কাল হল? নিজের পিঠ নিজে চাপড়ানোর ফলাফল কী?

সবাই দাবি করছেন, “আমিই সেরা।” “আমার নতুন ছবি আগের সব ছবির সাফল্যের রেকর্ড ভেঙে দেবে।” কোটি ক্লাবের পরিচালক বা অভিনেতাই যদি হবেন তবে নিজেদের প্রচারে তাঁদের এত চিৎকার কেন?

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৫ অক্টোবর ২০২৫ ০৮:৫২
Share:

পুজোর ছবির এ পিঠ-ও পিঠ। গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।

যা নেই রিলে তা আছে আনন্দবাজার ডট কম-এ। বিনোদনের ঝলমলে জগতে রাতদিন সবই এখন হাতের মুঠোয়। তার বাইরেও ঘটছে অনেক কিছু। যা ধরা পড়ছে না রিল দুনিয়ায়। ধরা না পড়া ঘটনা নিয়েই আমাদের নতুন বিভাগ ‘রিলে যা নেই’।

Advertisement

একটা কিনলে একটা ফ্রি! জামা নয়। পুজোর নতুন জুতোও নয়। নয় কোনও খাদ্যবস্তু। একেবারে বাংলা ছবির টাটকা টিকিট! একটা কাটলে সেই ছবিরই আর একটা টিকিট ফ্রি মিলেছে!

ঘটেছে আরও ঘটনা। বিভিন্ন এলাকার বিধায়ক এবং পুরপ্রতিনিধিরা অনেকেই স্কুলের শিক্ষকদের পুজোয় মুক্তিপ্রাপ্ত একটি বিশেষ বাংলা ছবি দেখতে যাওয়ার নির্দেশ দিচ্ছেন! আবার অন্য একটি ছবি উত্তর কলকাতার একটি প্রেক্ষাগৃহে প্রথম দিনের প্রথম প্রদর্শন নাকি ‘লোক’ দিয়ে ভরিয়েছে। ওই দর্শকেরা নাকি শাসকদলের মুখপাত্রের ‘লোকজন’!

Advertisement

ছবি দেখার জন্য এত পীড়াপিড়ি কেন? তবে কি বাংলা ছবি ‘বেশি’ পড়িয়াছে? না কি, বিনা পয়সায় যত লোক তত বাংলা ছবির ঘরে ধনবৃদ্ধি!

পুজোয় মুক্তি পাওয়া বেশির ভাগ ছবিতে খুনোখুনি, রক্তের বন্যা। বাস্তবে পরিচালক বা প্রযোজকই পেলেন খুনের হুমকি! চালু হল নতুন শব্দ, ‘মাফিয়া কার্ড’, ‘ভিক্টিম কার্ড’। বাংলা ছবি হেনস্থার শিকার।

ইন্ডাস্ট্রির নতুন ক্লাইম্যাক্স, পরিচালক হোন বা প্রযোজক কিংবা অভিনেতা— সবাই দাবি করছেন, “আমিই সেরা।” “আমার নতুন ছবি আগের সব ছবির সাফল্যের রেকর্ড ভেঙে দেবে।” কোটি ক্লাবের পরিচালক বা অভিনেতাই যদি হবেন তবে নিজেদের প্রচারে তাঁদের এত চিৎকার কেন?

সিনেমায় যুদ্ধ দেখাতে গিয়ে এই প্রথম দুর্গাপুজোয় মুক্তি পাওয়া বাংলা ছবি দর্শকের সামনে পারস্পরিক যুদ্ধের প্রচার করে ফেলল। প্রতিযোগিতা বা প্রতিদ্বন্দ্বিতা আগেও ছিল, নতুন নয়। কিন্তু এ বার সরাসরি রক্তাক্ত তলোয়ার চলল। তা-ও সিনেমার বাইরে।

ছবিমুক্তির দিন দুই আগের রাত থেকে প্রেক্ষাগৃহে প্রদর্শন নিয়ে শুরু কলহ। আগে ফোনে বা ব্যক্তিগত সাক্ষাতে এই কলহ বহু বার মিটিয়েছে টলিউড। এখন সব কিছুই লোকদেখানো। প্রস্তুত হল এক একটা ছবির হয়ে কথা বলার ‘মুখপাত্র’। প্রকাশক্ষেত্র সমাজমাধ্যম। দর্শক এত দিন যে অভিনেতা, পরিচালকদের কাজ দেখে মুগ্ধ হয়েছে, হৃদয়ে স্থান দিয়েছে, ছবি নিয়ে এই লড়াইয়ে ইন্ডাস্ট্রির ভিতরের কলহের যে ভাষা তারা শুনল— তাতে বাংলা ছবির কর্মীদের প্রতি সম্মান বলে আর কিছুই রইল কি?

চার পক্ষের লড়াইয়ে এগিয়ে রইল ‘ডাকাত’ আর ‘অসুর’। মুক্তির প্রথম সপ্তাহে সমান সংখ্যক প্রেক্ষাগৃহ কেন পেল না চারটি ছবিই? এই প্রশ্নবাণ ছুড়েই সূচনা যুদ্ধের। কে ‘মাফিয়া’, কে ‘ভিক্টিম’? এ বলে আমায় দেখ ও বলে আমায়!

মুক্তির আগেই এক দিনে দুই ছবির উদ্‌যাপন হয়ে গেল। মু্ম্বইয়ে একই দিনে দুটো বড় বাজেটের ছবিমুক্তির সম্ভাবনা দেখা দিলে সাধারণত আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে যে কোনও একটি ছবি মুক্তির দিন পিছিয়ে দেওয়াই রীতি। বাংলায় যুদ্ধ লেগেছে। আলাপ-আলোচনার প্রশ্ন নেই।

কী ভাবমূর্তি তৈরি হচ্ছে বাংলা ইন্ডাস্ট্রির?

চুপ বাংলার তথাকথিত ‘ইন্ডাস্ট্রি’ও। এক সময় ইন্ডাস্ট্রির যাবতীয় অন্দরের সমস্যা নিজের বাড়িতে সকলকে ডেকে এনে তিনি মিটিয়ে দিতেন। দর্শক পর্যন্ত কোনও দিনই সে-খবর পৌঁছোত না। কিন্তু আজ ক্ষত যত ক্ষতি তত! পুজোর বাংলা ছবির বিষয় নিয়ে কেউ আর কথা বলছেন না। কথা শুধু, অমুকে অমুককে কী ভাষায় আক্রমণ করল!

এই আক্রমণের বীজ বোনা হয়েছিল আগেই। সাল ২০২৪। পুজোর ছবি ‘বহুরূপী’, ‘টেক্কা’, ‘শাস্ত্রী’। রাজত্ব করেছিল প্রথম ছবিটি। হুমকি পেয়েছিল তারা, পরের পুজোয় যেন ছবি আনার সাহস না দেখান। তা হলেই...। পুজোর ছবিমুক্তির কথা এ বছর বৈঠক ডেকে আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘোষণা করা হয়েছিল। ঘোষণা করেছিল রাজ্য সরকারের ঠিক করে দেওয়া বিশেষ ‘স্ক্রিনিং কমিটি’। দিব্যি সব ঠিক চলছিল। যুদ্ধ শুরুর আগের সন্ধ্যায় নবীনা প্রেক্ষাগৃহের মালিক নবীন চৌখানির অফিসে ঝালমুড়ির বাটি হাতে আড্ডায় মগ্ন ‘রঘু ডাকাত’-এর প্রযোজক জুটির অন্যতম শ্রীকান্ত মোহতা, ‘রক্তবীজ ২’-এর অন্যতম পরিচালক-প্রযোজক শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়! ভাবটা আসলে বন্ধুত্বের। সঙ্গে সুস্থ প্রতিযোগিতা।

সমাজমাধ্যমে যাহাই ভাইরাল তাহাই যে সত্যি হয় না, প্রমাণ করে দিল পরবর্তী দিনের ঘটনাগুলো। পরের দিন রাত থেকে ‘মাফিয়া’ বনাম ‘ভিক্টিম’ কার্ডের খেলা চালু। দ্বিতীয় দলের দাবি, প্রথম দলের হর্তা-কর্তা-বিধাতা শাসকদলের অন্যতম সদস্য হওয়ার দৌলতে ভরপুর ফয়দা তুলেছেন। তিনি প্রেক্ষাগৃহে প্রদর্শনের সময় দখল করে নিয়েছেন! ফলে, বাকি তিনটি ছবি নাকি ভাল প্রেক্ষাগৃহ, প্রদর্শন সময় কিচ্ছু পায়নি।

এ বার পারস্পরিক আক্রমণের পালা। অশ্লীল শব্দ, রাজনীতির মারপ্যাঁচ। একটি ছবিকে সমর্থন জানাতে গিয়ে শাসকদল-ঘনিষ্ঠ মুখপাত্র সমাজমাধ্যমে কু-বাক্যে বিরোধী আক্রমণের দায়িত্ব নিলেন। বিরোধীপক্ষও কম যান না। হাজার হোক, শাসকপক্ষের সাংসদ। তাঁর সমর্থনে দাঁড়িয়ে গেলেন এক প্রযোজক। তাঁর ‘দেবস্তুতি’ অবাক করেছে।

এত চেষ্টার ফলাফল কী? ‘আমিই বেস্টো আমিই শ্রেষ্ঠ’ বলতে বলতে গলাব্যথা করেও কাঙ্ক্ষিত সাফল্য মিলল?

না, মিলল না। নিজের ঢাক নিজে পেটানোর পরেও ছবির ব্যবসার ভুয়ো পরিসংখ্যান দিয়ে মুখরক্ষা করতে হল প্রযোজকদের। সম্মিলিত ভাবে যা হয়তো হতে পারত ১৬ কোটির ব্যবসা, তা মেরেকেটে ৮ কোটি হল কি না সন্দেহ। বাংলা ছবির কোনও প্রযোজক যদি দাবি করেন, তাঁর ছবি ২০ বা ২৬ কোটি ব্যবসা করেছে, সেটা মোটেই বিশ্বাসযোগ্য নয়। কারণ, ওঁরা যে পন্থায় প্রেক্ষাগৃহ ভরান, তাতে বাংলা ছবির এত ব্যবসা করা সম্ভব নয়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement