A Book On Aparna Sen

এখনও মহিলা পরিচালকের ছবিতে কাজ হল না! ইচ্ছে, সিরিজ়ে কঙ্কনা আমায় পরিচালনা করবে: অপর্ণা

সুমন ঘোষের মতে, “কারও মৃত্যু হলে বাঙালি তাঁকে স্বীকৃতি দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। বেঁচে থাকতে তাঁর কথা মনেও পড়ে না।”

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০২৫ ১৪:৫৭
Share:

এ বার দুই মলাটে অপর্ণা সেন। ছবি: ফেসবুক।

৪০ বছরেরও বেশি সময় ধরে পরিচালনায়। ১৯৮১ সালে ‘৩৬ চৌরঙ্গী লেন’ দিয়ে পরিচালক অপর্ণা সেনের যাত্রা শুরু। একে একে ‘পরমা’, ‘সতী’, ‘যুগান্ত’, ‘দ্য জাপানিজ় ওয়াইফ’, ‘গয়নার বাক্স’ বা ‘দ্য রেপিস্ট’— বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ছবি বানিয়েছেন। সে সবের স্বীকৃতি কই?

Advertisement

বৃহস্পতিবার পরিচালক সুমন ঘোষের লেখা ‘দ্য ওয়ার্ল্ড অফ অপর্ণা সেন’ বইপ্রকাশে এসে আক্ষেপ করলেন পরিচালক-অভিনেত্রী। এই আক্ষেপ যদিও তাঁর আজকের নয়। এর আগেও কথাপ্রসঙ্গে উঠে এসেছে। এ দিন তিনি আরও একবার বললেন, “এখনও আমার পরিচয় দিতে গিয়ে সকলে বলেন, ‘স্বনামধন্য অভিনেত্রী’। ৪০ বছর পরেও কেউ আমার পরিচালনার কথা সে ভাবে উল্লেখ করেন না!”

যিনি তাঁকে দুই মলাটে ধরে রাখার চেষ্টা করেছেন, সেই লেখকও সায় দিয়েছেন এই বক্তব্যে।

Advertisement

এই একটি নয়, আরও একটি অনুযোগ রয়েছে অপর্ণা সেনের। আগের তুলনায় দেশে মহিলা পরিচালকের সংখ্যা বেড়েছে। অথচ এখনও পর্যন্ত কোনও মহিলা পরিচালক তাঁকে নিয়ে কোনও ছবি বা সিরিজ় করলেন না! অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পরিচালক সুদেষ্ণা রায়। অপর্ণা সেন তাঁর উদ্দেশেও একই কথা বলেন। তাঁর কথায়, “আমার ছোট মেয়ে কঙ্কনা পরিচালনা করছে। খুব ইচ্ছে, ওর পরিচালনায় সিরিজ়ে অভিনয় করব।”

বইপ্রকাশ অনুষ্ঠানের মঞ্চে লেখক সায়ন্তন ঘোষ, অপর্ণা সেন, সুমন ঘোষ, অঞ্জন দত্ত। নিজস্ব ছবি।

পিতৃতান্ত্রিক সমাজের প্রভাব কি এই ঘটনার নেপথ্য কারণ? আনন্দবাজার ডট কম প্রশ্ন করেছিল সুমনকে। তিনি বলেছেন, “জানি না, পিতৃতান্ত্রিক সমাজের প্রভাব কি না। তবে এটা জানি, কারও মৃত্যু হলে বাঙালি তাঁকে স্বীকৃতি দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। বেঁচে থাকতে তাঁর কথা মনেও পড়ে না।” উদাহরণ হিসাবে তিনি নাম নিয়েছেন প্রয়াত পরিচালক মৃণাল সেনের। “মৃণালদা বেঁচে থাকতে তাঁকে নিয়ে কী হয়েছে? শতবর্ষে মৃণালদাকে কেন্দ্রে রেখে তিনটি বাংলা ছবি তৈরি হল!”

বইপ্রকাশ অনুষ্ঠানের পাশাপাশি এ দিনের সন্ধ্যায় অপর্ণা সেনকে নিয়ে সুমনের সঙ্গে আড্ডা জমিয়েছিলেন আর এক অভিনেতা-পরিচালক অঞ্জন দত্ত। কথায় কথায় উঠে এসেছে পরিচালক-অভিনেত্রীর জীবনের গল্প — সেটে গিয়ে নিখুঁত দৃশ্য ক্যামেরাবন্দির জন্য পরিচালক অপর্ণার পাগলামি, তৎকালীন বাংলা অভিনয় ধারায় তিনি কী কী পালাবদল ঘটিয়েছেন ইত্যাদি। যদিও খোদ অভিনেত্রী মানতে নারাজ, বাংলা ছবির অভিনয় দুনিয়ায় তিনি সচেতন ভাবে আদৌ কোনও পালাবদল ঘটিয়েছেন।

বই লেখার আগে অপর্ণা সেনকে নিয়ে একটি তথ্যচিত্র, নাম ‘পরমা: এ জার্নি উইথ অপর্ণা সেন’ বানিয়েছিলেন সুমন। গত বছর ৩০তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে সেটি দেখানো হয়েছে। তার পরেও কেন একই ব্যক্তিকে নিয়ে বই লেখার তাগিদ অনুভব করলেন?

জবাবে পরিচালক-লেখকের যুক্তি, “৮০ মিনিটে রিনাদিকে পুরোপুরি দেখানো সম্ভব নয়। এমন অনেক শট, মন্তাজ আমার কাছে রয়েছে, যা দৈর্ঘ্যের কারণে ছবিতে জুড়তে পারিনি। সেই সব গল্প এখানে থাকবে। প্রজন্মের পর প্রজন্মের কাছে অপর্ণা সেনকে ছড়িয়ে দিতেই ছবি তৈরির পর বই লিখলাম।” কথাপ্রসঙ্গে জানিয়েছেন, মেয়ে, স্ত্রী, মা— এই তিন ভূমিকায় পরিচালক-অভিনেত্রী কেমন, সে কথাও তিনি তুলে ধরেছেন। পাশাপাশি, ছবি তৈরির নেপথ্যের অনেক অজানা গল্প পাঠক জানতে পারবেন তাঁর বই থেকে।

যাঁর পরিচয়লিপিতে এখনও পরিচালকসত্তার উল্লেখ কম, তাঁকে নিয়ে বই লেখার ভাবনাও কি অনেক দেরিতেই হল? অস্বীকার করেননি সুমন। মেনে নিয়েছেন, অপর্ণা সেনের মতো ব্যক্তিত্বের জীবন আরও আগে দুই মলাটে বন্দি হওয়া উচিত ছিল।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement