নীরবতার নেপথ্য কাহিনি
Sharukh Khan

প্রতিবাদে কেন নীরব শাহরুখ-আমিররা? উত্তর লুকিয়ে সময়ের গর্ভেই

কেন তাঁরা মুখ খুলছেন না? প্রতিবাদের আগুন ধিকধিক করে জ্বলতে জ্বলতে যখন লেলিহান শিখার রূপ নিয়েছে, তখনও তাঁরা চুপ কেন?

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ জানুয়ারি ২০২০ ০০:১২
Share:

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে শাহরুখের সেলফি,ধর্না মঞ্চে আমির।

কেন তাঁরা মুখ খুলছেন না? প্রতিবাদের আগুন ধিকধিক করে জ্বলতে জ্বলতে যখন লেলিহান শিখার রূপ নিয়েছে, তখনও তাঁরা চুপ কেন? এনআরসি এবং সিএএ-র বিরোধিতায় প্রতিবাদ চলছিলই দেশজুড়ে। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ছাত্র নির্যাতনের ঘটনাও। প্রথমে জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয় আর দিন কয়েক আগে জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে। জামিয়া মিলিয়ার প্রাক্তনী হিসেবে কি শাহরুখ খানের অনেক আগেই মুখ খোলা উচিত ছিল? নর্মদা বাঁচাও আন্দোলনের ধর্না মঞ্চে যে ভাবে আমির খান হাজির হয়েছিলেন, এ বার তাঁর দেখা নেই কেন?

Advertisement

প্রতিটি ‘কেন’র উত্তর জমা রয়েছে ইতিহাসের গর্ভে। সালটা ২০১৫। মোদী সরকারের দাপট আস্তে আস্তে প্রকট হয়ে উঠছে তখন। এম এম কালবুর্গী, গোবিন্দ পানসারের হত্যার পরে বিশিষ্টজনেদের একাংশ রাষ্ট্রীয় সম্মান ফেরত দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সেই আবহে টুইটার আয়োজিত এক সভায় শাহরুখ বলেছিলেন, ‘‘দেশে অসহিষ্ণুতা বাড়ছে। মাংস খাওয়া নিয়ে আমরা একটা ইসু তৈরি করে ফেলেছি। কিন্তু সেটা ইসু নয়। ধর্মনিরপেক্ষ এই দেশে দেশপ্রেমের নামে ধর্মীয় ভাবে অসহিষ্ণু হয়ে ওঠা অপরাধের শামিল...’’ দ্ব্যর্থহীন ভাষায় এর চেয়ে স্পষ্ট ভাবে আর কি প্রতিবাদ হতে পারে? কিন্তু এর ফল কী হয়েছিল?

সোশ্যাল মিডিয়ায় শাহরুখের মন্তব্য নিয়ে জলঘোলা, বিজেপি নেতাদের শাহরুখকে ‘পাকিস্তানি এজেন্ট’ বলে কটাক্ষ...’’ ঘটনাপ্রবাহ এমন মোড় নেয় যে, তাঁর মন্তব্যকে বিকৃত করা হয়েছে বলে শাহরুখকে বিবৃতি দিতে হয়।

Advertisement

প্রায় সমসময়েই এক বিতর্কসভায় ‘অসহিষ্ণুতা’ প্রসঙ্গে বক্তব্য রেখেছিলেন আমির খান, ‘‘কিরণ (আমিরের স্ত্রী) প্রায়ই আমাকে বলে, দেশে যে ভাবে অসহিষ্ণুতা বেড়ে চলেছে, তাতে কি আমাদের দেশ ছেড়ে চলে যাওয়া উচিত? বাচ্চাদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে ও ভয় পায়...’’ এর পরেও আমিরের বিরুদ্ধে গর্জে ওঠেন ক্ষমতায় থাকা কয়েক জন নেতা।

গত কয়েক দিনে শাহরুখ-আমিরের ‘অসহিষ্ণুতা’ প্রসঙ্গে এই মন্তব্য মনে করিয়ে দিয়েছেন পরিচালক অনুভব সিংহ। খানেদের নীরবতার পিছনের কাহিনি বোঝানোর চেষ্টা করছেন ‘আর্টিকল ফিফটিন’-এর পরিচালক। একটি টুইটে তিনি লিখেছেন, ‘‘যখন অসহিষ্ণুতা প্রসঙ্গে মুখ খোলায় গুজরাতে শাহরুখের গাড়ি লক্ষ্য করে পাথর ছোড়া হয়েছিল, তখন সরকার কী করেছিল? মিস্টার মোদীকে জিজ্ঞেস করুন, উনি জেএনইউ নিয়ে কী ভাবছেন...’’ খানেদের পাশে দাঁড়িয়েছেন পরিচালক কবীর খানও।

শাহরুখ-আমির আগে প্রতিবাদ করলেও, সলমন খান এই ধরনের বিষয়ে মন্তব্য করা থেকে সচেতন দূরত্ব বজায় রেখেছেন। গত বছর মহারাষ্ট্রে বিধানসভা নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে শাহরুখ-আমির এক ফ্রেমে ধরা দিলেও, সেই অনুষ্ঠানে দেখা যায়নি সলমনকে।

দেশের সবচেয়ে বড় সুপারস্টারের ট্যাগ থাকায় যে কোনও বিষয়ে তিন খানের প্রতিক্রিয়ার গুরুত্ব অপরিসীম। তাঁরা সেটা জানেন, বোঝেনও। কিন্তু মন্তব্য করার পরেও তাঁদের যে ঝক্কি পোহাতে হয়েছে, তাতে বোধহয় নীরবতাকেই অস্ত্র বানাতে বাধ্য হয়েছেন তাঁরা। শাহরুখই এক বার বলেছিলেন, ‘‘বাক্‌স্বাধীনতায় নীরব থাকার অধিকারও রয়েছে। আমি এর পর নীরবই থাকব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন