সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রতিবাদে নীরব কেন টলিউড?

বলিউডের প্রথম সারি সেলেব্রিটিরা কাঠুয়া বা আলিগড় নিয়ে যে ভাবে সরব, টলিউড ইন্ডাস্ট্রি কি সেই তুলনায় অনেকটাই পিছিয়ে? বলিউডের প্রথম সারি সেলেব্রিটিরা কাঠুয়া বা আলিগড় নিয়ে যে ভাবে সরব, টলিউড ইন্ডাস্ট্রি কি সেই তুলনায় অনেকটাই পিছিয়ে?

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ জুন ২০১৯ ০০:৫৮
Share:

দেব।

সোমবার তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার সাক্ষী ছিল দেশ। বিখ্যাত নাট্যব্যক্তিত্ব ও লেখক গিরিশ কারনাড মারা গিয়েছেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর ঘোষণা করেছেন যুবরাজ সিংহ। আর কাঠুয়া গণধর্ষণ ও খুনের মামলায় রায় দিয়েছে পঠানকোটের স্পেশ্যাল ফার্স্ট ট্র্যাক আদালত। প্রথম দু’টি বিষয়ে টলিউডের অনেকে সেলেবই টুইটারে পোস্ট করেছেন। কিন্তু আশ্চর্যজনক ভাবে নজর কেড়েছে তৃতীয় বিষয়ে টলিউডের নীরবতা। এই দৃষ্টান্ত অবশ্য প্রথম নয়। এর আগেও যে সংবেদনশীল বিষয়গুলির প্রতিবাদে পুরো দেশ গর্জে উঠেছে, সেখানে টলিউডের প্রথম সারির অনেককেই চুপ থাকতে দেখা গিয়েছে।

Advertisement

এ দিকে জন্মদিনে শুভেচ্ছাবার্তা পাঠানো, ছবির প্রচার, ভক্তদের প্রশংসাসূচক টুইট শেয়ার, ভার্চুয়াল হাসি-ঠাট্টায় পিছিয়ে নেই টলিউডের এক জনও। সেখানে প্রথম-দ্বিতীয়-তৃতীয় সব সারিই মিলে যায়। তা হলে নাবালিকা ধর্ষণ ও খুনের মতো নিন্দনীয় ঘটনা নিয়ে যেখানে সারা দেশ প্রতিবাদে শামিল, সেখানে তাঁরা নীরব কেন? সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রতিবাদই একমাত্র পথ নয়, এটা সত্যি। আবার এটাও সত্যি, আজকের দুনিয়ায় তারকার জন্য বৃহত্তর দর্শকের কাছে পৌঁছনোর সবচেয়ে সহজ পথ সোশ্যাল মিডিয়া। সেই সোশ্যাল মিডিয়ায় মত না দিলে আর কোন পথে তাঁরা মতামত দিতে চাইছেন? কোন বিষয়ে তারকা মতামত ব্যক্ত করবেন, সেই ব্যক্তিস্বাধীনতা যেমন তাঁর আছে, তেমন তারকা হওয়ার সুবাদে সামাজিক দায়কেও উপেক্ষা করতে পারেন না তাঁরা। আর পাঁচ জন সাধারণ মানুষের চেয়ে তারকার মতামতের আলাদা ওজন আছে। তাই চুপ থাকলে অনেকে ভাবতে পারেন, হয়তো তাঁরা এই ধরনের বিষয়ে উদাসীন। আদৌ কি তা-ই?

সোশ্যাল মিডিয়ায় অ্যাক্টিভ আবীর চট্টোপাধ্যায়ের টুইটার জুড়ে শুধুই ছবির প্রচার। এই প্রশ্ন রাখতে তিনি বললেন, ‘‘এক, টুইটারে সব বিষয় নিয়ে মত দিতে হবে, এটা আমি মনে করি না। একটা টুইটে ছবির প্রচার করলাম। পরের টুইটে প্রতিবাদ করলাম। দুটোর গুরুত্ব এক নয়। কিন্তু টুইটের ভিড়ে দ্বিতীয় বিষয়টি যেন হারিয়ে না যায়, এই ভয় আমার মধ্যে কাজ করে। এমন স্পর্শকাতর বিষয়কে তার প্রাপ্য গুরুত্ব কি দিতে পারছি? এই প্রশ্ন আমাকে ভাবায়। দ্বিতীয়ত, অনেক সময়ে তারকার মতামতকে রাজনীতির রং দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। আমি জানি, কাঠুয়া বা আলিগড়ের ক্ষেত্রে সেটা হবে না। কিন্তু এই নেগেটিভিটিকেও বেশি প্রচার দিতে চাই না।’’

Advertisement

টলিউডের জনপ্রিয় তারকা দেব শুধু অভিনেতা নন, সাংসদও। তাই তাঁর কাছ থেকে ইন্ডাস্ট্রি ও অনুরাগী সকলের প্রত্যাশা একটু বেশি। টুইটে ছবির ঢালাও প্রচার করলেও, এই ধরনের সংবেদনশীল বিষয়ে মতামত দেননি তিনি। প্রশ্নের জবাবে দেব বললেন, ‘‘সোশ্যাল মিডিয়ায় বক্তব্য রাখলেই কি আমাদের দায়িত্ব শেষ হয়ে যায়? ক’টা লাইক পড়ল, কমেন্ট পড়ল তার হিসেব করে? একটা টুইটে কিছু হবে না। সিস্টেমটাকে বদলাতে হবে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিচার দ্রুত হওয়া উচিত। কিছু লাইক বা শেয়ার পাওয়ার জন্য আমি প্রতিবাদ করব না। কিন্তু যেখানে আমি বলার সুযোগ পাব, সেখানেই প্রতিবাদ করব। আজ সংবাদপত্রে যা বেরোবে, সেটা অনেক বড় প্রতিবাদ। অনেক বেশি মানুষের কাছে পৌঁছবে। সত্যি বলতে, আমি কী লিখব? দশ হাজার টাকার জন্য এ রকম কেউ করতে পারে! লিখতে গেলে তো ভাবতে হবে। ভাবতে গেলে ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। আমার টুইট ওই ছোট্ট প্রাণটা তো ফিরিয়ে আনতে পারবে না!’’

পরিচালক অরিন্দম শীল বললেন, ‘‘আমি সব সময়েই নিজের মতো করে প্রতিবাদ করি। সেটা যে শুধু সোশ্যাল মিডিয়ায় সীমাবদ্ধ তা নয়। এমনিতে আমি সোশ্যাল মিডিয়া নিয়ে একটু বীতশ্রদ্ধ। এত আত্মপ্রচার দেখতে আর ভাল লাগে না। তবে এই বিষয়ে হয়তো লিখব। কারণ এটা মানুষের কাছে পৌঁছনোর অন্যতম মাধ্যম।’’ তার পরেই তিনি টুইঙ্কল শর্মাকে নিয়ে টুইট করেন। অভিনেত্রী ঋতাভরী চক্রবর্তীও মনে করেন, ‘‘যখন কাঠুয়ার ঘটনাটা প্রকাশ্যে আসে, আমি পোস্ট দিয়েছিলাম। আজ রায় বেরোনোর পরে দিইনি ঠিকই। কিন্তু তাতে এটা প্রমাণ হয় না, আমি সচেতন নই। আর সেলেব্রিটি হওয়ার সমস্যা, আমরা এই ধরনের বিষয়ে লিখি বা ছবির প্রচার করি, বেশির ভাগ লোকের মতে, ‘সবটাই তো শো-অফ’।’’

টলিউডের বহমান ধারায় উজ্জ্বল ব্যতিক্রম স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়। তাঁর শরীর নিয়ে ট্রোলের আক্রমণে স্পষ্ট জবাব দেওয়া হোক বা দেশের যে কোনও প্রান্তের অন্যায়-অবিচার, সব ক্ষেত্রেই তিনি ভার্চুয়ালি সরব। শেষ কয়েক দিনে অবশ্য টুইঙ্কলের জন্য পোস্ট করেছেন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, মিমি চক্রবর্তী, জিৎ।

এর পাশে বলিউডের ছবিটা কিন্তু একেবারে অন্য রকম। প্রিয়ঙ্কা চোপড়া থেকে করিনা কপূর, অনুষ্কা শর্মা থেকে স্বরা ভাস্কর, কর্ণ জোহর থেকে সোনম কপূর... কখনও আসিফার জন্য, কখনও বা টুইঙ্কলের জন্য ন্যায়বিচার চেয়ে সরব হয়েছেন প্রথম সারির অনেকেই। অবশ্য আবীরের মতে, ‘‘বলিউড করছে বলেই আমাদের করতে হবে, এটা কিন্তু মাপকাঠি হতে পারে না।’’

তবে শেষে একটা কথাই বলার, যে সমারোহে ছবির প্রচার হয়, টলিউডবাহিনী সেই একই উদ্যমে সামাজিক অন্যায়ের বিরুদ্ধে ভার্চুয়ালি গর্জে ওঠে না। অন্তত তাঁদের সোশ্যাল মিডিয়া তা বলে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন