এ বার পুরুলিয়ার রাস্তায় ‘ফুটবল কোচ’ প্রসেনজিৎ

পুরুলিয়ায় শ্যুটিং করছেন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়। তা-ও কোথায়, না এক সময় মাওবাদী উপদ্রুত হিসাবে পরিচিত ছিল যে এলাকা! বুধবার পুরুলিয়া-জামশেদপুর ৩২ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে যেখানে শ্যুটিংয়ের তাঁবু পড়েছিল, সেই জঙ্গল থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বেই কাঁটাডি রক্ষিশিবিরে কয়েক বছর আগে বন্দুক লুঠ করেছিল মাওবাদীরা।

Advertisement

প্রশান্ত পাল

আড়শা শেষ আপডেট: ২০ মার্চ ২০১৪ ০১:০৭
Share:

শ্যুটিংয়ের একটি মুহূর্ত। বুধবার ছবিটি তুলেছেন সুজিত মাহাতো।

পুরুলিয়ায় শ্যুটিং করছেন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়। তা-ও কোথায়, না এক সময় মাওবাদী উপদ্রুত হিসাবে পরিচিত ছিল যে এলাকা!

Advertisement

বুধবার পুরুলিয়া-জামশেদপুর ৩২ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে যেখানে শ্যুটিংয়ের তাঁবু পড়েছিল, সেই জঙ্গল থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বেই কাঁটাডি রক্ষিশিবিরে কয়েক বছর আগে বন্দুক লুঠ করেছিল মাওবাদীরা। মাওবাদী প্রভাবিত হিসাবে পরিচিত আড়শা ও বলরামপুর সীমানার এই জঙ্গলরাস্তা সন্ধ্যা নামলেই কিছু দিন আগেও চলে যেত ছিনতাইবাজদের দখলে। যে কারণে জঙ্গলে পাহারার ব্যবস্থা করেছে পুলিশ।

সেই জঙ্গলের রাস্তাই ছিল এ দিন পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় পরিচালিত ‘লড়াই’ ছবির প্রথম দিনের লোকেশন। ছবিতে প্রসেনজিৎ রয়েছেন ফুটবল প্রশিক্ষকের ভূমিকায়। শহর থেকে এসেছেন সেই প্রশিক্ষক। আর গ্রামের ফুটবলারেরা মোটরবাইকের পিছনে বসিয়ে জঙ্গলমহলের প্রত্যন্ত গ্রামে তাঁদের কোচকে নিয়ে যাচ্ছেন। সেই দৃশ্যই একাধিক টেকে এ দিন ধরলেন পরমব্রত। পিচরাস্তার এক দিকে অযোধ্যা পাহাড়। মাওবাদী কার্যকলাপের জেরে কিছুদিন আগেও কার্যত সুনসান ছিল এই এলাকা। রাজ্যে সরকার পরিবর্তনের পরে ২০১২ সালে অযোধ্যা পাহাড়ে মাওবাদী আন্দোলনের প্রেক্ষাপট নিয়ে ‘শূন্য অঙ্ক’ নামে একটি ছবি তৈরি করেন পরিচালক গৌতম ঘোষ। তার পর আরও কয়েকটি ছবি হয়েছে পুরুলিয়ায়। ফের সেখানে শ্যুটিংয়ের তাঁবু ফেলেছেন পরমব্রত। যিনি নিজে রাজ চক্রবর্তী পরিচালিত ‘প্রলয়’ ছবির শ্যুটিং করেছিলেন এই জেলাতেই। পরমব্রতর কথায়, “আমি যখন প্রলয়ের শ্যুটিংয়ে এখানে আসি, তখনই আমার ছবির লোকশেন হিসাবে পুরুলিয়াকেই বেছেছিলাম। পুরুলিয়া রুক্ষ হলেও এখানকার একটা ঔদার্য আছে। একটা অদ্ভুত সৌন্দর্য আছে। পুরুলিয়ার যে-দিকেই ক্যামেরা ঘোরান, সেটাই দারুণ ফ্রেম!”

Advertisement

অকালে কেরিয়ার শেষ হয়ে যাওয়া এক ফুটবল কোচের প্রত্যন্ত গ্রামে এসে ফুটবল প্রতিভা তুলে আনাই ‘লড়াই’ ছবির থিম। এ দিন কাঁটাডির অদূরে জঙ্গলে বসে পরমব্রত বলছিলেন, “ছবির মূল চরিত্রের নাম সেবাস্তিয়ান। প্রত্যন্ত গ্রামে এসে কলকাতার সেবাস্তিয়ান আবিষ্কার করে অন্য এক বাংলাকে।” কেমন সে বাংলা? পরিচালকের জবাব, “সেটা এখনই বলছি না।”

বাঘমুণ্ডির পাড়ডি গ্রামের পাশাপাশি কাড়ামারা, আঘরপুর ডুংরির মতো বেশ কিছু জায়গায় এই ছবির শ্যুটিং হবে। অযোধ্যা পাহাড়তলির জঙ্গলঘেরা গ্রাম পাড়ডিতে ২০১০ সালের সেপ্টেম্বর মাসের এক রাতে মাওবাদীরা তিন জনকে খুন করেছিল। সেই পাড়ডির বাসিন্দা লক্ষ্মণ মুর্মু নিজেও ছবিতে কাজ করছেন। তাঁর কথায়, “আমাদের গ্রামেও যে ছবির শ্যুটিং হবে, তা কখনও ভাবিনি।”

এ দিন শ্যুটিং দেখতে ভিড় জমিয়েছিলেন এলাকার মানুষ। স্থানীয় কোরাং গ্রামের বাসিন্দা ভীমচন্দ্র লায়া, লালমোহন মাহাতো, নকুল পরামানিকেরা বলেন, “এখন আমাদের গ্রামে শ্যুটিং হচ্ছে। কিছুদিন আগেও এ সব ভাবা যেত না।” সুদীপ্ত মাহাতোর কথায়, “এই জঙ্গলে রাতে কিছুদিন আগে প্রায় রোজই ছিনতাই হত। সেটাও অনেকটা কমেছে।” বলরামপুরের বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গত সেপ্টেম্বরে পাহাড়ের নীচে বাঘমুণ্ডিতে রাত্রিবাসের উদ্দেশ্যই ছিল পাহাড় বা সংলগ্ল এলাকায় শান্তি ফেরানো এবং আরও বেশি পর্যটক যাতে এই এলাকায় আসেন, সেই বার্তা দেওয়া। এখন তো অনেক ছবিরই শ্যুটিং হচ্ছে পুরুলিয়ায়। তার মূল কারণ, এখানে শান্তি ফিরেছে।”

কাজলনয়না: মুম্বইয়ের একটি অনুষ্ঠানে। বুধবার। ছবি: পিটিআই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন