মীনাক্ষী শেষাদ্রি, শিল্পা শিরোদকর, মমতা কুলকার্নি, রাহুল রায় বা অবিনাশ ওধায়ান।
এ প্রজন্মের ক’জনই বা এঁদের নাম শুনেছেন?
কিন্তু একবার যদি বছর কুড়ি পিছিয়ে যাওয়া যায়? তা হলে দেখবেন বলিউডের রুপোলি পর্দা শাসন করছেন এঁরাই।
আমির খান, শাহরুখ খান, সলমন খানের সমসাময়িক হলেও আজ কিন্তু এঁরা সবাই বলিউডের তলানিতে। আশি আর নব্বইয়ের দশকে একের পর এক হিট ছবি দিয়ে গেলেও, আজ তাঁরা সরে গিয়েছেন লাইমলাইট থেকে অনেক দূরে। কখনও বিয়ে, কখনও বা অন্য কোনও বাজে সিদ্ধান্ত ধীরে ধীরে তাঁদের নাম মুছে গিয়েছে মানুষের মন থেকে।
মীনাক্ষী শেষাদ্রি
১৯৮৩-তে মনোজকুমারের ‘পেন্টার বাবু’তে অভিনয় করে বলিউডে পা রেখেছিলেন মীনাক্ষী। আর ১৯৯৬-য়ে ‘ঘাতক’য়ের পর বলিউডকে বিদায় জানান। এই ১৩ বছরে হিট ছবির তালিকা নেহাত কম নয়। ‘হিরো’, ‘দামিনী’, ‘শাহেনশাহ্’, ‘ঘায়েল’ আর ‘বিশ সাল বাদ’ তাঁর কেরিয়ারের মুকুটের এক একটা পালক। কিন্তু ইনভেস্টমেন্ট ব্যাঙ্কার হরিশ মাইসোরের সঙ্গে বিয়ের পরই চলে গেলেন টেক্সাস। শেষ যা খবর পাওয়া গিয়েছে, মীনাক্ষী এখন নাচ শেখান ওয়াশিংটনে।
কিমি কাতকর
অদম্য যৌন আবেদন। কিমি কাতকরের পরিচয় দিতে গেলে এই তিনটে শব্দই যথেষ্ট। ‘হাম’-‘টারজান’ তো হিট তালিকার উপরের দু’টো। আশি আর নব্বই দশকের শুরুতে বসে থাকার সময় ছিল না কিমি-র। ১৯৯২-তে বিয়ে করলেন ফোটোগ্রাফার শান্তনু শেরয়-কে। তার পরেই নিজেকে গুটিয়ে নিলেন বলিউড থেকে। মুম্বই ছেড়ে চলে গেলেন মেলবোর্ন। সেখানেই শুরু করলেন ঘরকন্না।
এখন-তখন
অনু আগরওয়াল
নব্বইয়ের দশকের শুরুর দিক। ভারত বুঁদ হয়ে আছে এক শ্যামলা সুন্দরীতে। নাম তাঁর অনু আগরওয়াল। প্রথম ছবি ‘আশিকি’ থেকেই খ্যাতির চূড়ায়। যশ, বৈভব আর অর্থ প্রথম ছবি থেকেই তাঁর পদানত। হলে হবে কী! ছ’বছরের বেশি টিকল না খ্যাতির আড়ম্বর। ১৯৯৯-তে এক গাড়ি দুর্ঘটনায় পড়েন অনু। ২৯ দিন কোমায় কাটিয়ে, প্রায় ৩০-টা হাড় ভেঙে মৃত্যুর মুখ থেকে ফেরত আসেন তিনি। এখন তিনি কোথায় আছেন, কী করছেন কারও কাছেই নিশ্চিত কোনও খবর নেই। তবে শোনা যায়, বিহারের মুঙ্গেরে নাকি এক যোগা স্কুলে ইন্সট্রাক্টরের কাজ করেন অনু। এমনকী সম্প্রতি এই প্রতিবেদকও একদিন তাঁকে বান্দ্রা স্টেশনে উদ্দেশ্যহীন ভাবে ঘুরতে দেখেছে।
মমতা কুলকার্নি
‘তিরঙ্গা’, ‘ক্রান্তিবীর’, ‘কর্ণ অর্জুন’। স্বপ্নের দৌড় বললেও যেন কম বলা হয়। তবু বেশি দিন আলোয় থাকতে পারলেন না। শোনা গিয়েছিল ভিকি গোস্বামীর সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক রয়েছে। সেই ভিকি গোস্বামী, যাকে ড্রাগস্ তৈরি আর বেচার জন্য গ্রেফতার করেছিল দুবাই পুলিশ। মমতার সম্পর্কেও এখন আর তেমন কোনও খবর পাওয়া যায় না। এক বিশেষ সূত্রে জেনেছিলাম, এখন তিনি নাইরোবিতে থাকেন। সম্প্রতি আধ্যাত্মিক বিষয় নিয়ে একটা ই-বুকও প্রকাশ করেছেন। কিন্তু ভিকির সঙ্গে সম্পর্কের সূত্রে দক্ষিণ আফ্রিকার পুলিশ নাকি এখনও তাঁর পিছনে পড়ে রয়েছে।
কমল সাদানাহ
প্রথম ছবি ‘বেখুদি’তেই খ্যাতির আঁচ পেয়েছিলেন কমল সাদানাহ। যদিও তাঁর ছবিগুলো গানগুলোর জন্যই হয়তো বেশি জনপ্রিয়। কমলের বাবা ছিলেন বলিউডের পরিচালক-প্রযোজক ব্রিজ। ১৯৯০-তে মত্ত অবস্থায় ব্রিজ গুলি চালান স্ত্রী-কন্যার উপর। কোনও মতে সেখান থেকে পালাতে সক্ষম হন কমল। ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে আসার অনেক চেষ্টা করেও অভিনয়ে তাঁকে আর ফিরতে দেখা যায়নি। যদিও সম্প্রতি সুন্দরবনের পটভূমিতে তৈরি করেছেন ‘রোর’। অভিনয়ে না-হোক পরিচালক হিসেবে অবশেষে দেখা যাবে কমলকে।
অবিনাশ ওয়াধয়ান
আশির দশকের শেষের দিকে ‘আয়ে মিলন কী রাত’ বা ‘মীরা কা মোহন’ ছবিতে অভিনয় অবিনাশকে খ্যাতি দিয়েছিল। ‘বালমা’য় তাঁর আর দিব্যা ভারতীর লিপে গানগুলো সে সময়ে ছিল দারুণ জনপ্রিয়। কিন্তু একের পর এক ফ্লপ ছবিতে অভিনয় হঠাৎই তাঁর কেরিয়ারে পর্দা টেনে দেয়। আবারও ছোট পর্দাই উদ্ধার করল একদা বড় পর্দার এই তারাকে। আর এখন তো ‘বালিকা বধূ’তে তাঁর অভিনয় কিছুটা হলেও হারিয়ে যাওয়া গৌরব ফিরিয়ে দিতে পেরেছে।
শিল্পা শিরোদকর
জীবনের প্রথম ছবি রমেশ সিপ্পির ‘ভ্রষ্টাচার’। আর তৎক্ষণাৎ আলোচনার কেন্দ্রে। অভিনয় বা ছবি হিট-ফ্লপ হওয়া নয়। সংবাদ মাধ্যমের পাতার পর পাতা কিংবা মানুষের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন ছবিতে একটা ধর্ষণের দৃশ্যের জন্য। এ সব সত্ত্বেও সাফল্যের স্বাদ পেতে দেরি হয়নি তাঁর। ‘কিষণ কানাইয়া’, ‘খুদা গওয়া’, ‘গোপী কিষণ’ আর ‘আঁখে’ হিট তালিকা নেহাত কম নয়। এম এফ হুসেনের ‘গজগামিনী’তে অভিনয়ের পরেই বিয়ে করলেন অপরেশ রঞ্জিতকে। প্রথমে নিউজিল্যান্ড, তার পর লন্ডন স্বামীর সঙ্গে চলে গেলেন শিল্পা। তবে ‘এক মুঠি আসমান’ ধারাবাহিকে আবার ফেরত এসেছেন মুম্বই।
এখন-তখন
নীলম
ব্যাঙ্কক থেকে ছুটি কাটাতে মুম্বই এসেছিলেন নীলম। সেখানেই তাঁকে দেখেন পরিচালক রমেশ বহেল। আর প্রস্তাব দেন ‘জওয়ানি’তে অভিনয় করার। জীবনের প্রথম ফিল্ম ফ্লপ হলেও, কিন্তু লোকের মন টানতে ব্যর্থ হলেন না নীলম। শিশিরের মতো নিষ্পাপ সৌন্দর্য আর আকর্ষণ মুহূর্তেই আটকে গেল দর্শকদের চোখ। সঙ্গে ছিল ‘তু রুঠা তো ম্যয় রো দুঙ্গি সনম’য়ের মতো গানে তাঁর যৌন আবেদনের অমোঘ টান। আর ফিরে তাকাতে হয়নি নীলমকে। ‘লাভ ৮৬’, ‘ইলজাম’, ‘হত্যা’ আর ‘খুদাগর্জ’ পাকাপাকি জায়গা হয়ে গেল বলিউডে। কিন্তু ‘হম সাথ সাথ হ্যয়’য়ের পর আর তাঁকে তেমন ভাবে দেখা গেল কই? রুপোলি পর্দাকে বিদায় জানিয়ে বিয়ে করলেন ব্যবসায়ী ঋষি শেঠিয়াকে। সে বিয়ে টিকল না। ২০১১-য় আবার বিয়ে করলেন টিভি অভিনেতা সমীর সোনিকে। আর এখন? এখন নীলম ব্যস্ত ‘নীলম জুয়েলস্’ ব্র্যান্ড নামে নিজের গয়না ডিজাইনের ব্যবসায়।
বিবেক মুশরান
১৯৯০। সুভাষ ঘাই জানালেন তাঁর নতুন ছবি ‘সওদাগর’য়ে থাকবে এক মুখ। চমকে গিয়েছিল ইন্ডাস্ট্রি। এর আগে কোনও দিন সুভাষ ঘাই তো ‘নিউকামার’ নিয়ে ছবি করেননি। যদিও ‘সওদাগর’ বিবেকের কেরিয়ারে তেমন কিছু করে দিতে পারেনি। কিন্তু তার পরেই ‘সাঁতওয়া আসমান’, ‘প্রেম দিওয়ানে’ আর ‘রাম জানে’ প্রায় এক দশক বিবেককে জনপ্রিয়তা নিয়ে ভাবতে হয়নি। আর তার পর যখনই বুঝেছেন ফিল্ম কেরিয়ারে আর নতুন কিছুই হওয়ার নেই, বুদ্ধি করে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন টেলিভিশনে। আর এখন? টিভির অন্যতম জনপ্রিয় নামের একটা বিবেক মুশরান।