নাট্যোৎসব ঘিরে আশায় শিল্পীরা

মকর পরবের ছুটির আবহে পুরুলিয়ার রবীন্দ্র ভবনে শুরু হয়েছে চার দিনের নাট্যোৎসব। শুক্রবার উৎসবের সূচনা হয়। উৎসব এ বার চতুর্থ বর্ষের।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৭ জানুয়ারি ২০১৬ ০১:২৯
Share:

হাওড়ার ‘নটধা’-র কুশীলবরা মঞ্চস্থ করলেন ‘সিজার ও ক্লিওপেত্রা।—নিজস্ব চিত্র

মকর পরবের ছুটির আবহে পুরুলিয়ার রবীন্দ্র ভবনে শুরু হয়েছে চার দিনের নাট্যোৎসব। শুক্রবার উৎসবের সূচনা হয়। উৎসব এ বার চতুর্থ বর্ষের। বাংলার প্রান্তিক জেলা পুরুলিয়ার দর্শকদের অন্যধারার নাটকের স্বাদ দিতে এ বারও হাওড়ার নটধা, বর্ধমানের নাট্যসেনা, কলকাতার থিয়েলাইট, নির্ণয়, প্রাচ্য, ঝাড়গ্রামের কথাকৃতি, নদিয়ার শান্তিপুর সাংস্কৃতিক, সংলাপের মতো বহু নাট্যদল তাঁদের প্রযোজনা নিয়ে হাজির হয়েছেন। উৎসবে ভাল মানের নাটকের স্বাদ পেয়ে নাট্যপ্রেমীদের আক্ষেপ, পুরুলিয়ায় উৎসবের আয়োজন হলেও সেই উৎসবে পুরুলিয়ার দলই নেই।

Advertisement

একটা সময় ছিল যখন এই শহরে নাট্যচর্চা ছিল পাড়ায় পাড়ায়। শহরের প্রবীণ নাট্যব্যক্তিত্ব অমিয় বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, সময়টা সত্তরের দশকের মাঝামাঝি। তখন দুর্গাপুজো, সরস্বতী পুজো ছাড়াও বছরের নানা সময়ে শহরের বিভিন্ন পাড়ার দল নাটক করত। ঐকতান, উদয়ন, আমলাপাড়া ইউনিট, শক্তি সঙ্ঘ, বিএফ ক্লাব— এ রকম বেশ কয়েকটি ক্লাব বছরভর নাটক নিয়ে মেতে থাকত। এক পাড়ার সঙ্গে আর এক পাড়ার প্রতিযোগিতা চলত। তাঁর কথায়, ‘‘লোকে যে দলের নাটকের প্রশংসা বেশি করত, আমরা মনে করতাম তারই জিত হয়েছে। মানুষের প্রশংসাই ছিল আমাদের স্বীকৃতি।’’

চারদিনের নাট্য উৎসব ওই প্রবীণ শিল্পীকে ফেলে আসা দিনের কথা মনে করিয়ে দিয়েছে। অমিয়বাবুদের দলের নাম ছিল ‘নাট্যনিকেতন’। তিনি জানান, জ্যোৎস্নাময় ঘোষ নামে এক নাট্যকারের ‘স্বরবর্ণ’ নামে একটি নাটক তাঁরা মানভূমের লোকেদের কথ্যভাষায় মঞ্চস্থ করেছিলেন। সেই নাটকের সাতাত্তরটি শো অভিনীত হয়েছিল। অমিয়বাবু বলে চলেন, ‘‘আশির দশকে আমরাও শহরের দলগুলিকে নিয়ে এ রকম ভাবেই একটি উৎসবের আয়োজন করেছিলাম। তবে শহর নাটক পাগল বলে যাঁদের চিনত তাঁদের অনেকেই প্রয়াত হয়েছেন। নাট্যচর্চাও থমকে গিয়েছে।’’

Advertisement

শহরের ‘অন্যচোখে’ নামে একটি সংস্থা এই নাট্যোৎসবের আয়োজন করেছে। ওই সংস্থার পক্ষে অনুপ মুখোপাধ্যায় জানান, একটা সময়ে পুরুলিয়া শহর তো বটেই, সাঁওতালডিহি, আদ্রাতেও নাটকের নিয়মিত চর্চা ছিল। এখন তাতে ভাটা পড়েছে। নতুন প্রজন্ম কেন জানি না উৎসাহ হারাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘‘সেই কারণেই নাটকের দর্শক তৈরি করার জন্যই রাজ্যের বিভিন্ন এলাকার ভাল নাট্য সংস্থাকে এনে নাটক করানো হচ্ছে। দর্শক তৈরি হলেই নাট্যশিল্প বাঁচবে। প্রসারও হবে এই জেলায়।’’ তিনি মনে করিয়ে দেন, পুরুলিয়া শহরেই হরিপদ দাঁ নামে এক ব্যক্তি একটি মঞ্চ গড়ার কথা ভেবেছিলেন। তাঁর নামেই তৈরি হয় হরিপদ সাহিত্য মন্দির। তিনি নিজে নাট্যোৎসাহী মানুষ ছিলেন। কলকাতা থেকে দল এনে নাটক করাতেন।

সেই সাহিত্য মন্দিরের পাশেই শুরু হয়েছে এই নাট্যোৎসব। উৎসবের উদ্বোধন করতে গিয়ে বিশিষ্ট চলচ্চিত্রকার বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘এই পুরুলিয়াতেই আমি জন্মেছি। তাই বারবার পুরুলিয়ায় ছুটে আসি। আর ছবি করতে গিয়ে পুরুলিয়াতে যে রসদ আমি খুঁজে পাই অন্য কোথাও তার সন্ধান মেলে না।’’

শহরের নাট্যকর্মী রাজু রায় জানান, বুদ্ধদেববাবুর জানিয়েছেন পুরুলিয়ার শিল্পীদের নিয়ে তাঁর ছবিতে কাজ করেন। ভালই অভিনয় করেন এখানকার শিল্পীরা। এতে জেলার নাট্যশিল্পীরা উৎসাহ পেয়েছেন। প্রবীণ অমিয়বাবুও তাই বলছেন, ‘‘এই বয়সে আমিও ভাবছি নতুনদের নিয়ে ফের শুরু করব। তবে শরীর কতটা সঙ্গ দেবে জানি না।’’ অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলা পরিষদ) অরিন্দম দত্তের কথায়, ‘‘আট বছর আগে আমি এই শহরে কর্মরত ছিলাম। তখন নাট্যোৎসব হত না। এ বার নাট্যৎসব দেখে জেলায় নতুন করে নাট্যচর্চা শুরু হলে সেটাই হবে বড় প্রাপ্তি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement