বিদ্যার অসমাপ্ত কহানি

এক রক্ষিতা। যিনি মহেশ ভট্টর গর্ভধারিণীও। তাঁর জীবনের এক চাঞ্চল্যকর ঘটনার অনুপ্রেরণায় বিদ্যা বালন-এর ছবি। প্রকাশ হচ্ছে উপন্যাস। জানাচ্ছেন প্রিয়াঙ্কা দাশগুপ্ত।এক রক্ষিতা। যিনি মহেশ ভট্টর গর্ভধারিণীও। তাঁর জীবনের এক চাঞ্চল্যকর ঘটনার অনুপ্রেরণায় বিদ্যা বালন-এর ছবি। প্রকাশ হচ্ছে উপন্যাস। জানাচ্ছেন প্রিয়াঙ্কা দাশগুপ্ত।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০১:০১
Share:

পরভিন ববির সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের ছায়ায় মহেশ ভট্ট লিখেছিলেন ‘অর্থ’।

Advertisement

নিজের জীবনকে আরও একবার পর্দায় তুলে ধরতে চলেছেন মহেশ। তবে এ বার অনুপ্রেরণা পরভিন নন, মহেশের বাবা ও তাঁর সৎমা। নেপথ্যে রয়েছেন মহেশের গর্ভধারিণী, যাঁকে তাঁর বাবা কোনও দিন বিয়ে করেননি।

আর এই ছবির মূল চরিত্রে অভিনয় করছেন বিদ্যা বালন। ‘অর্থ’য়ের শাবানা যেখানে তাঁর বিপ্লব ঘোষণা করেছিলেন নিজের মতো বাঁচতে চেয়ে, সেখানে ‘হমারি অধুরি কহানি’র বিদ্যা হয়তো শাবানার থেকে কয়েক কদম এগিয়ে। সোচ্চাের বলেন এত দিন সমাজের নিয়ম মেনেই চলেছেন মেয়েরা। কিন্তু এখন তিনি নিজের জন্য নিয়ম তৈরি করবেন। নিজের মতো করে বাঁচবেন।

Advertisement

ছবিতে বিদ্যার স্বামীর চরিত্রে থাকছেন রাজকুমার রাও। আর তাঁর প্রেমিকের ভূমিকায় ইমরান হশমি। আর এই চিত্রনাট্যের ওপর ভিত্তি করে প্রকাশ হচ্ছে একটা উপন্যাস। নাম ‘অল দ্যাট কুড হ্যাভ বিন’। লিখছেন মহেশ ভট্ট আর কলকাতার সুহৃতা সেনগুপ্ত। বই প্রকাশ হবে মুম্বইয়ে। ভ্যালেন্টাইন্স ডে’র দিন।


‘হমারি অধুরি কহানি’র ফার্স্টলুক

‘ইশকিয়া’ থেকে ‘পা’— সব ছবিতেই বিদ্যা বেশ দাপুটে নারী চরিত্রে অভিনয় করেছেন। কিন্তু ‘হমারি অধুরি কহানি’র বিদ্যা অনেকটাই আলাদা। এ ছবির অনুপ্রেরণা সম্পর্কে বলতে গিয়ে মহেশ ফিরে যান ১৯৯৯-এ। টেলিফোনের ও প্রান্তে তাঁর গলায় আজও বিস্ময়ের ছোঁয়া। মনে পড়ে যায় কী ভাবে তাঁর গুজরাতি সৎমা তাঁর বাবার মৃতদেহ নিজের বাড়িতে নিয়ে আসতে অস্বীকার করেছিলেন। কুণ্ঠাহীন ভাবে মহেশ বলেন, ‘‘আমার মা ছিলেন বাবার রক্ষিতা। সব সময় দেখেছি বাবা আমার সৎমায়ের সঙ্গেই থাকতেন।’’ কিন্তু মৃত্যুর পর এই সৎ মা-ই মহেশকে ডেকে বলেন মৃতদেহ যেন তাঁর জন্মদাত্রীর বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। ‘‘শুনে আমি থমকে যাই। আমার মা তত দিনে মারা গিয়েছেন। এই মহিলা সারা জীবন নিজের স্বামীকে মানসিক ভাবে নিজের করে পাননি। জানতেন তাঁর স্বামী অন্য মহিলার প্রতি আকৃষ্ট। আর মৃত্যুর পর তিনি এ কথা বললেন!’’ বলেন মহেশ।

এই ঘটনাই নেপথ্যে হয়ে ওঠে বিদ্যার চরিত্রের অনুপ্রেরণা। ভারতীয় সিনেমায় উপন্যাস থেকে চিত্রনাট্য তৈরির বহু নজির রয়েছে। শরৎচন্দ্র, রবীন্দ্রনাথ থেকে হালফিলের চেতন ভগত— সবার লেখা থেকেই সিনেমা হচ্ছে আজকাল। কিন্তু যে ছবির শ্যুটিং চলছে, তারই চিত্রনাট্য নিয়ে আবার উপন্যাসও লেখা হচ্ছে— এ হেন উদাহরণ বলিউডে নেই বললেই চলে।

এই প্রথম এই ছবির গল্প নিয়ে মুখ খুলছেন মহেশ। বলছেন, ‘‘ছবির গল্প এক মেয়ে(বিদ্যা)কে নিয়ে। যাঁর স্বামী (রাজকুমার) হঠাৎ উধাও হয়ে যায়। বহু বছর পর সে আবার ফিরে আসে বিদ্যার কাছে। কিন্তু তত দিনে বিদ্যা অনেকটাই পাল্টে গিয়েছে।’’

সিঙ্গল মাদার হয়ে বিদ্যা একলাই মানুষ করছেন ছেলেকে। এর মধ্যে বিদ্যার আলাপ হয় ইমরানের সঙ্গে। প্রেমে পড়েন। উত্তাল সে সময়। হঠাৎই ইমরান মারা যান। বিদ্যার জীবনকে তখন সজীব রাখে ইমরানের স্মৃতি। আর ঠিক এই সময়ই ফিরে আসেন রাজকুমার। বিদ্যার হাতে রাজকুমারের ট্যাটু। স্বামী অধিকারবোধ জাহির করে বলেন মাঝখানের বছরগুলো, প্রেম ইত্যাদিকে স্রেফ ডিলিট মেরে আবার ফিরে আসতে সংসারের ঘেরাটোপে।

কলকাতার এক কফিশপে আড্ডা দিতে গিয়ে ‘অল দ্যাট কুড হ্যাভ বিন’ নিয়ে বলছিলেন সুহৃতা। দুই সন্তানের মা, সুহৃতার আলাপ হয় মহেশের সঙ্গে সল্ট লেকের এক পুজো উদ্বোধনের সময়। প্রথম আলাপেই নিজের পরিচয় দিয়ে সুহৃতা বলেন ‘আমি ডান হাত দিয়ে লিখি আর বাঁ হাতে চুল কাটি!’ মহেশের কাছে তা ছিল বেশ চাঞ্চল্যকর একটা উক্তি।

দু’জনের পরিচয় বাড়তে থাকে। তত দিনে সুহৃতা তাঁর সালোঁর ব্যবসা গুটিয়ে এনেছিলেন অনেকটাই। দু’টো পার্লারের মধ্যে একটা বন্ধ করে দিয়েছেন। ইতিমধ্যে মহেশের লেখা ‘আ টেস্ট অব লাইফ’ পড়ে ফেলেছিলেন তিনি। হঠাৎ একদিন মহেশ ওঁকে ‘হমারি অধুরি কহানি’র গল্পটা বলেন। বিদ্যার চরিত্রটা তাঁকে ভাবাতে থাকে। ‘‘পার্লারে মেয়েদের দেখেছি হেয়ারড্রেসারদের সঙ্গে ব্যক্তিগত ঘটনা আলোচনা করতে। মনে হয়েছিল বিদ্যার চরিত্রটা যে রকম দোলাচলে রয়েছে তা অনেক মহিলার জীবনের গল্প হতে পারে। এক দিকে সমাজের চিরাচরিত প্রথা। অন্য দিকে নিজের কেরিয়ার, আশা-আকাঙ্ক্ষা। উপন্যাস লিখতে গিয়ে বিয়ে নামক প্রতিষ্ঠানটাকেও ভাল করে বুঝতে শিখি,’’ বলেন সুহৃতা।

একটার পর একটা চ্যাপ্টার মহেশকে ই-মেল করে দেন সুহৃতা। ‘‘চিত্রনাট্য যে-যে জায়গায় যেতে পারে না, সেগুলো আমি কল্পনা করতে থাকি। বিদ্যার যাত্রাটা বইয়ে এক রকম ভাবে দেখানো হয়েছে। সিনেমায় অন্য রকম। গল্পটা মুম্বই থেকে শুরু হয়ে চলে যায় দুবাই। সেখানে বিদ্যার কর্মক্ষেত্র। তার পর বিদ্যা ফিরে আসেন কলকাতায়,’’ বলছেন সুহৃতা।

কলকাতায় ফেরার কারণ ইমরানের শিকড়ের খোঁজ। প্রায় ১৪ বছর পর মহেশ একটা ছবির চিত্রনাট্য লিখেছেন। তার পরতে পরতে রয়েছে চাঞ্চল্যকর সব ঘটনার বিবরণ। ইমরানের জন্ম কলকাতায়। মা ছিলেন এখানকার ক্যাবারে নর্তকী। সে এক অদ্ভুত জীবন। অত্যাচার। অসহায়তা। কী নেই সেখানে! এ সব পেরিয়েই একদিন ইমরান সাফল্যের মুখ দেখেন। হয়ে যান বিশ্বের নামী হোটেল চেন-এর মালিক। এবং তখনই তাঁর আলাপ বিদ্যার সঙ্গে। ‘‘বইতে ইমরানের মৃত্যুর পর বিদ্যা আবার ফিরে আসেন কলকাতায়। তাই উপন্যাসে কখনও বিদ্যার চরিত্রকে নিয়ে এসে ফেলি পার্ক স্ট্রিটের কবরখানায়। কখনও বা কুইন্স ম্যানসনে,’’ বলে চলেন সুহৃতা।

সিনেমাতে এ সব নেই। আবার দুর্গাপুজোর যে ব্যাকড্রপটা সিনেমাতে রয়েছে, সেটা বইয়ে রাখা হয়নি। প্রথমে ঠিক হয়েছিল এই দুর্গাপুজোর দৃশ্যগুলোর শ্যুটিং হবে কলকাতায়। শেষ পর্যন্ত সেট তৈরি করে মুম্বইতেই শ্যুটিং হয়েছে।

বইয়ের কাজের সঙ্গে সঙ্গে সুহৃতা এখন একটা হিন্দি ছবির চিত্রনাট্য লিখছেন ভট্ট ক্যাম্পের জন্য। ‘‘হাতে ধরে ভট্টসাব আমাকে দিয়ে চিত্রনাট্য লেখাচ্ছেন। আপাতত চিত্রনাট্যের নাম রাখা হয়েছে ‘অব রাত গুজরনেবালি হ্যায়’। কলকাতায় এক বর্ধিষ্ণু পরিবারে বড়় হয়ে ওঠা এক ছেলের গল্প। যে মুম্বইয়ে গিয়ে স্ট্রাগল করতে আরম্ভ করে। হঠাৎ করেই যার সম্পর্ক হয় এক অভিনেত্রীর সঙ্গে,’’ বলেন সুহৃতা।

উপন্যাস লিখতে গিয়ে কখনও ভেবেছেন ভারতীয় দর্শকের কাছে বিদ্যার চরিত্রটা বেশি বোল্ড হয়ে যেতে পারে? বোধনের দিন বিদ্যার জীবনে ফিরে আসেন তাঁর স্বামী। কিন্তু বিদ্যা যে চান না আবার ঘরে ফেরার গান গাইতে! স্বামীকে অনুরোধ করেন মৃত্যুর পর রাজকুমার যেন বিদ্যার অস্থিভস্ম ছড়িয়ে দিয়ে আসেন এমন একটা জায়গায়, যেখানে তাঁর মৃত প্রেমিক ইমরানের অস্থি ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল!

হিন্দি সিনেমার নারী চরিত্রদের থেকে এ যে বড্ড বেশি আলাদা! কোথায় সে নারী শেষ পর্যন্ত জীবনের সব ভাললাগা, ভালবাসাকে উৎসর্গ করে দেবে... সে সব না করে মৃত প্রেমিকের প্রতি তাঁর এত টান! ‘‘চিত্রনাট্যে বিদ্যার লজিকটা খুব পরিষ্কার। জীবনে প্রেম ব্যাপারটা ও অনুভব করেছে একমাত্র ইমরানের সঙ্গে। তাই ইমরান মারা গেলেও ও আর স্বামীর কাছে এখন ফিরে যেতে চায় না,’’ বলেন সুহৃতা। কিন্তু কোনও মানুষ তার সঙ্গীর ভালবাসাকে এ ভাবে মেনে নিতে পারেন? ‘‘নিজের জীবন দিয়ে জানি এমনটা করা যায়,’’ টেলিফোনে বলেন মহেশ। আরও জানান, ‘‘আমার সৎমাকেই তো দেখেছি। বাবার মৃত্যুর পরে তিনি তো তাঁর মৃতদেহকে আগলে রাখতেই পারেন। কিন্তু তা তো করেননি। সেটা ছিল ১৯৯৯। এখন ২০১৪-তে এসে বিদ্যার এই আর্জি অস্বাভাবিক কেন হবে?’’

এর উত্তর অবশ্য আগামী দিনেই দর্শক আর পাঠকদের কাছে পাওয়া যাবে!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন