বায়োস্কোপের মতো

গত রবিবার আনন্দplus বায়োস্কোপে বাজিমাত-এর মঞ্চে তাঁদের একসঙ্গে দেখে দর্শকের একটাই হা-হুতাশ ছিল। কেন পর্দায় দেখা যায় না তাঁদের! কে জানত, এটা আসলে ট্রেলার, যে প্রসেনজিৎ-ঋতুপর্ণা জুটি বারো বছর বাদে আবার ফিরে আসবে পর্দায়! এ বছরই। লিখছেন ইন্দ্রনীল রায়।গত রবিবার আনন্দplus বায়োস্কোপে বাজিমাত-এর মঞ্চে তাঁদের একসঙ্গে দেখে দর্শকের একটাই হা-হুতাশ ছিল। কেন পর্দায় দেখা যায় না তাঁদের! কে জানত, এটা আসলে ট্রেলার, যে প্রসেনজিৎ-ঋতুপর্ণা জুটি বারো বছর বাদে আবার ফিরে আসবে পর্দায়! এ বছরই। লিখছেন ইন্দ্রনীল রায়।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৪ মার্চ ২০১৫ ০১:০০
Share:

মাঝখানে কেটে গিয়েছে দীর্ঘ বারো বছর। কিন্তু কিছুতেই তাঁদের টলানো যায়নি।

Advertisement

কথা পর্যন্ত বলতেন না। কোনও পার্টিতে, কী অনুষ্ঠানে একজন বেরিয়ে গেলে তবেই অন্যজন ঢুকতেন।

তাঁদের জুটি নিয়ে যেমন মানুষের মনে তুমুল কৌতূহল ও আগ্রহ থাকত, তাঁদের একসঙ্গে না দেখতে পাওয়ার জন্য হাহাকারও ছিল তার দশ গুণ।

Advertisement

কিন্তু গত রবিবার ‘ক্যামেলিয়া প্রেজেন্টস্ আনন্দplus বায়োস্কোপে বাজিমাত’ ক্যুইজের মঞ্চে পুরো ছবিটাই যেন পাল্টে গেল।

প্রসেনজিৎ-এর গলায় তখন লাল মাফলার পরিয়ে দিচ্ছেন অনুষ্ঠানের সঞ্চালক মীর। হাতে তুলে দিচ্ছেন টুপি আর সানগ্লাস। তিন হাত দূরে তখন ‘অমরসঙ্গী’র বিজয়েতা পণ্ডিতের বদলে দাঁড়িয়ে ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত।

বসন্তের সন্ধেয় আরসিজিসি-র লনে তখন, ‘চিরদিনই তুমি যে আমার... যুগে যুগে আমি তোমারই...’।

মঞ্চ তখন বায়োস্কোপে পরিণত। একসঙ্গে আবার প্রসেনজিৎ-ঋতুপর্ণা। উস্কে দিচ্ছেন পুরনো সব স্মৃতি।

মঞ্চে প্রসেনজিৎ-ঋতুপর্ণার নাচ দেখতে দেখতে তখন তুমুল হাততালি দিচ্ছেন দেব, যিশু, আবিররা। দর্শকাসনে বসা রাজ, মিমি, সোহমরা ক্যামেরায় ছবি তুলছেন।

পুরো ব্যাপারটা চলল মাত্র আড়াই মিনিট। কিন্তু শ’তিনেক মানুষ যদি কোনও অভ্যর্থনার মাপকাঠি হয়, তা হলে ওই অল্প সময়েই বুঝিয়ে দিয়ে গেল আজও দর্শকমনে কী অনায়াসে ম্যাজিক সৃষ্টি করতে পারেন তাঁরা।

আদতে ওই আড়াই মিনিট ছিল এ বছরের সবচেয়ে বড় খবরের ট্রেলার বা ফার্স্ট লুক।

হ্যাঁ, এই বছর আবার একসঙ্গে ছবিতে ফিরছেন প্রসেনজিৎ-ঋতুপর্ণা। দীর্ঘ এক যুগ পর।

পরপর তিনটে ছবি সই করার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে বাংলা ছবির এই অমর জুটির।

প্রথম ছবি এক প্রখ্যাত গায়িকার জীবন অবলম্বনে। ছবির নাম ‘জান’। পরিচালক শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়-নন্দিতা রায়। চিত্রনাট্য লেখা শেষ। প্রযোজক হিসেবে উৎসাহীদের মধ্যে অগ্রগণ্য রানা সরকার।

দ্বিতীয় ছবি, কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়ের পরিচালনায় প্রসেনজিৎ, ঋতুপর্ণা। সঙ্গে পাওলি। এই মুহূর্তে কমলেশ্বর চিত্রনাট্য লিখছেন। প্রযোজনায় টালিগঞ্জের এক বড় প্রযোজক সংস্থা।

আর তৃতীয় ছবির প্রযোজক ক্যামেলিয়া প্রোডাকশনস্ প্রাইভেট লিমিটেড। এই ছবির পরিচালক এখনও ঠিক হয়নি। তবে কথা চলছে বড় কোনও পরিচালকই এই ছবিটা বানাবেন। প্রাথমিক ভাবে কথা বলা হয়েছিল কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে, কিন্তু তিনি অন্য ছবি নিয়ে ব্যস্ত থাকায় এই ছবিটি করতে পারছেন না।

সব মিলিয়ে টালিগ়ঞ্জে বারো বছর বাদে সেই জুটি, সেই যুগ।

মাঝখানে নয় বছর তাঁদের মধ্যে প্রায় কোনও কথাবার্তাই হয়নি। কিন্তু আজ থেকে দেড় বছর আগে দু’জনেরই ঘনিষ্ঠ এক সাংবাদিকের ফ্ল্যাটে তাঁরা একে অপরের সঙ্গে প্রথম খোলাখুলি কথা বলেন। আলোচনা হয় একসঙ্গে আবার ছবি করার।

সেই নৈশভোজ চলাকালীন পরিচালক শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়কে ডেকে পাঠানো হয়।

আলোচনা শেষে ঠিক হয়, যেহেতু তাঁদের প্রত্যাবর্তন নিয়ে মানুষের কৌতূহল সাঙ্ঘাতিক, তাই কোনও বড় বাজেটের ছবি দিয়েই তাঁরা পর্দায় ফিরবেন।

তার পরেই শুরু হয় প্রযোজক খোঁজার কাজ। তবে বরফ একটু গললেও পুরোটা তখনও গলেনি। বরং ফের বিরোধ অন্য মোড় নেয়।

যে প্রযোজকের সঙ্গে ছবিটি হবে বলে ঠিক করেন শিবপ্রসাদ, সেই প্রযোজকের নাম
শুনে বেঁকে বসেন নায়িকা। তাঁর যুক্তি ছিল, সেই প্রযোজক সংস্থা যখন এত দিন তাঁকে বিভিন্ন ছবি থেকে নানাভাবে বাদ দিয়েছেন, তাঁদের সঙ্গে প্রসেনজিতের বিপরীতে কামব্যাক ছবিটা অন্তত তিনি করবেন না। নায়িকার এই যুক্তি মানতে চাননি নায়ক। মনঃক্ষুণ্ণের বাতাবরণ শুরু হয় আবার। মাঝখানে কয়েকটা এসএমএস চালাচালি বা একটা-দু’টো পাবলিক অ্যাপিয়ারেন্স ছাড়া তাঁদের কোথাও একসঙ্গে দেখাও যায়নি।

তাঁদের এই ফিরে আসা নিয়ে কী বলছেন পরিচালক শিবপ্রসাদ, যাঁর হাত ধরেই এই কামব্যাক হচ্ছে!

‘‘প্রায় দেড় বছর ধরে চলেছে এই ছবির প্রস্তুতি। ছবিটি এক গায়িকার জীবন অবলম্বনে একটি পিরিয়ড ছবি। টাইটেল ‘জান’,’’ মঙ্গলবার বিকেলে বলছিলেন শিবপ্রসাদ।

শোনা যায়, এই ছবিটা নিয়ে কথা বলতে গিয়েই ঋতুপর্ণার সঙ্গেও তাঁর প্রথম আলাপ।

‘‘হ্যাঁ, ঋতুর সঙ্গে প্রথম আলাপ হয় এই ছবিটা নিয়ে। প্রচুর রিসার্চ করছি। টাইটেলটা আমার খুব পছন্দের। আর যে ছবির নাম ‘জান’ সেটা তো অবশ্যই প্রেমের ছবি। এ বার সই-সাবুদ হয়ে গেলে দুগ্গাদুগ্গা বলে ছবির শ্যুটিং শুরু করতে চাই,’’ বলছেন পরিচালক।

অন্য দিকে প্রসেনজিৎ-ঋতুপর্ণার সঙ্গে ছবি করা নিয়ে যথেষ্ট উত্তেজিত ক্যামেলিয়ার রূপা দত্তও।

‘‘প্রসেনজিৎ আর ঋতু, দু’জনেই পারিবারিক বন্ধু। আমাদের কাছে ব্যাপারটা খুব গর্বের যে প্রসেনজিৎ-ঋতুকে নিয়ে ছবি করার কথা ক্রমশ এগোচ্ছে,’’ বলছেন তিনি।

আর কী বলছেন খোদ জুটি?

প্রসেনজিৎ মুখে কিছু না বললেও, তাঁর ঘনিষ্ঠ মহল থেকে জানা যাচ্ছে তিনিও চান দ্রুত তাঁর এবং ঋতুপর্ণা জুটির প্রত্যাবর্তন হোক।

এই মুহূর্তে তিনি বাংলাদেশে গৌতম ঘোষের শ্যুটিং নিয়ে ব্যস্ত। সেই ছবিটি শেষ করেই ঋতুপর্ণার সঙ্গে এই ছবিগুলোর ফাইনাল স্ক্রিপ্ট ও কনট্রাক্ট নিয়ে আলোচনায় বসবেন।

তাঁরা দু’জনেই চান তিনটে ছবি পরপর অ্যানাউন্স করে তাঁদের প্রত্যাবর্তনটা ঘোষণা করতে।

আর কী বলছেন ঋতুপর্ণা?

‘‘আমাদের দু’জনের জুটি নিয়ে মানুষের মধ্যে কৌতূহল তো রয়েছে, সেটা সে দিন বায়োস্কোপে বাজিমাতের মঞ্চে আবার বোঝা গেল। আর আমার ইচ্ছে ছিল আমাদের কামব্যাক ছবি যেন কোনও স্পেকটাকুলার ছবি হয়। ‘জান’ সে রকম একটা ‘লার্জার দ্যান লাইফ’ ছবি। ‘জান’টা শেষ করে আমরা আরও দু’টো ছবির কাজ শুরু করব,’’ বলছেন ঋতুপর্ণা।

যা পরিস্থিতি, রবিবার সন্ধেয় স্টেজে ওই আড়াই মিনিটের ট্রেলারই বুঝিয়ে দিয়েছে কিছু মুহূর্ত, কিছু রসায়ন সত্যি চিরকালীন।

আনন্দplus বিশেষ বায়োস্কোপে
বাজিমাত সংখ্যা আগামী সোমবার

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন