মনে পড়ছে এই তো ক’মাস আগে ওয়ার্ল্ড কাপ ফুটবলের অরেঞ্জ ম্যাজিক?
অরেঞ্জ জার্সিধারীদের পায়ের জাদুতে ওয়ার্ল্ড কাপ আরেকটু হলেই জার্মানদের হাতছাড়া হচ্ছিল বলে।
এ দিকে আমেরিকাও কিন্তু অরেঞ্জ-ফিভার আক্রান্ত। ২০১৩-র জুলাই মাসে প্রথম রিলিজ করেছিল আমেরিকান কমেডি-ড্রামা সিরিজ ‘অরেঞ্জ ইজ দ্য নিউ ব্ল্যাক’। এ বছর জুন মাসে প্রিমিয়ার হয়ে গেল তার দ্বিতীয় সিরিজ।
ও দিকে আবার ‘শেডস অব অরেঞ্জ’য়ে কেঁপে গেল নিউ ইয়র্ক, মিলান বা লন্ডন ফ্যাশন উইক-এর বিশ্বখ্যাত ফ্যাশন র্যাম্পও।
একে একে মডেলরা হেঁটে গেলেন বেটসি জনসন, অ্যালবার্টা ফেরেটিদের মতো বিশ্বখ্যাত সব ডিজাইনারদের ক্রিয়েশনে। মধুর সেই কমলা বিস্ফোরণে শুধুই মুগ্ধতার ছোঁয়া।
ফ্যাশন সার্কিটে এখন চালু কথাটাই হল ‘অরেঞ্জ ইজ দ্য নিউ রেড’।
কমলার ছোঁয়া নিয়ে শহরের ডিজাইনার বা আর্টিস্টরাও কিন্তু পরীক্ষানিরীক্ষায় কম যান না।
কম নয় কমলা
ডিজাইনার অভিষেক দত্ত যেমন ক্রপ টপ থেকে ম্যাক্সি ড্রেস, আনারকলি চুড়িদার থেকে ছেলেদের সামার জ্যাকেটস সবেতেই দারুণ ভাবে পরীক্ষানিরীক্ষা চালাচ্ছেন কমলা রং নিয়ে। বললেন, “অরেঞ্জ ক্রপ টপের সঙ্গে অনায়াসে টিম আপ করা যায় পালাজো। মেয়েদের ওয়েস্টার্ন ওয়্যারের ক্ষেত্রে অরেঞ্জ ম্যাক্সি ড্রেস বা টিউনিক। ইন ফ্যাক্ট আমি অরেঞ্জ আনারকলি সালোয়ার নিয়েও প্রচুর এক্সপেরিমেন্ট করছি। লেহঙ্গা শাড়ি বা ডিজাইনার শাড়িতেও অরেঞ্জ দারুণ চলছে। মেয়েদের সিঙ্গল প্যান্ট, এথনিক কুর্তা, এমনকী ছেলেদের প্যান্টস ও সামার জ্যাকেটসয়েও অরেঞ্জের সাঙ্ঘাতিক কদর। অরেঞ্জের সঙ্গে কালোর কম্বিনেশন দারুণ যায়। একটা অরেঞ্জ টপের সঙ্গে ব্ল্যাক টাইট প্যান্টস পরলেই পার্টি অ্যাটায়ার হয়ে যাবে। অরেঞ্জ-এর সঙ্গে গ্রে-র কম্বিনেশন ইজ অলসো আ ভেরি ক্লাসি কম্বিনেশন। বা এমন হতে পারে আপনি কোনও লাইট শেড-য়ের ড্রেস পরলেন। তার সঙ্গে অনায়াসে পরতে পারেন একটা কমলা বেল্ট বা একটা স্ট্রাইকিং কমলা রঙের জুতো। ইউ উইল ডেফিনিটলি স্ট্যান্ড আউট ইন দ্য ক্রাউড।”
ডিজাইনার সৌমিত্র মণ্ডল আবার ‘ওল্ড রয়্যালটি’ থেকে কমলা রং নিয়ে কাজ করার অনুপ্রেরণা পান। অধিকাংশই খাদি বা হ্যান্ডলুম মেটিরিয়ালে কাজ করা সৌমিত্র বললেন, “লক্ষ করলে দেখবেন কমলা রং খুব বেশি ব্যবহার করতেন রাজপরিবারের মানুষেরা। তবে সেই কমলা প্যাস্টেল শেডের। মেজাজে সাটল্। সাবডিউড। লাউড কমলা রং কিন্তু খুব মেজাজি। খুব প্রাণবন্ত। আমার তৈরি শাড়ি, কুর্তা বা যে কোনও ব্রাইডাল ওয়্যারে আমি জোর দিই কমলার সঙ্গে অন্যান্য রঙের কম্বিনেশনের ওপর। কমলা রংটার তো বিভিন্ন টোনাল শেডস আছে। হাল্কা কমলার সঙ্গে অফ হোয়াইট বা গোল্ড-এর কম্বিনেশন তো মেজাজে পুরো রাজকীয়। ক্লাসি কমলার সঙ্গে গ্রিন-এর টিঞ্জও দারুণ মানায়। মুডটাই অন্য রকম করে দেয়।”
পোশাক-আশাক তো হল। কিন্তু সাজ?
পিচ-অরেঞ্জের খেল
কমলা রঙে নিজেকে পুরোদমে রাঙাচ্ছেন অভিনেত্রী মিমি চক্রবর্তীও। মিমি যদিও ব্রাইট অরেঞ্জের চাইতে বেশি পছন্দ করেন সাবডিউড অরেঞ্জ শেড বা পিচ অরেঞ্জ রং। বললেন, “পিচ-অরেঞ্জ রঙের অনেক পোশাক আছে আমার। অরেঞ্জ রংটা খুব প্রাণবন্ত। তবে হ্যাঁ, এই রং নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করার সময় কমপ্লেক্সনের কথা মাথায় রাখতে হবে। সব গায়ের রঙে অরেঞ্জের সব শেড যায় না। ব্রাইট অরেঞ্জ টপের সঙ্গে ব্ল্যাক জিন্স আর জাঙ্ক জুয়েলারি পরলে গর্জাস দেখাবে।”
মেক আপ আর্টিস্ট অনিরুদ্ধ চাকলাদার মেক আপে অরেঞ্জ ব্যবহার করছেন বেশ অনেক দিন ধরেই। মৈনাক ভৌমিকের ‘আমি আর আমার গার্লফ্রেন্ডস’ ছবিতে রাইমার কমলা রাঙা ঠোঁটের আইডিয়াটাও ছিল অনিরুদ্ধরই। আর অনিরুদ্ধও মিমির সঙ্গে একমত যে গায়ের রং কী, সেটা যেন মাথায় থাকে অরেঞ্জ নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করার সময়। বললেন, “খুব ফর্সা স্কিন টোনে ব্রাইট অরেঞ্জ দারুণ মানায়। আর কমলা রং কাটস থ্রু ব্ল্যাক। ধরুন আপনার চোখের নীচে ডার্ক সার্কল রয়েছে বা স্কিন একটু ডাল লাগছে। মেক আপ-য়ে অরেঞ্জ-এর টাচ ইনস্ট্যান্ট গ্লো নিয়ে আসবে। অরেঞ্জ আই শ্যাডো, ব্লাশ অন দারুণ ড্রামা নিয়ে আসে চেহারায়। পার্টিতেই নয়, ফর্ম্যাল পোশাকের সঙ্গেও ব্যবহার করতে পারেন সাবডিউড অরেঞ্জ টোন। অরেঞ্জয়ের পিচ ভেরিয়েশনও মেক আপে দারুণ দেখায়। ধরুন একটা ব্রাইট অরেঞ্জ শাড়ি পরলেন। ঠোঁটে দিলেন পিচ অরেঞ্জ টোনের লিপস্টিক। অরেঞ্জের সঙ্গে কী কম্বাইন করছেন সেটাও খেয়াল করবেন।”
থিম কমলা
কমলা রং আপন খেয়ালে অনুপ্রাণিত করেছে শিল্পী সনাতন দিন্দাকেও। দিন কুড়ি আগে প্যারিস গিয়ে সেখানকার বিশ্ববিখ্যাত ফ্যাশন শো-তে তিনি অনুভব করে এসেছেন এই কমলা উন্মাদনা। বললেন, “কমলা রং-টা খুব ডমিনেটিং, খুব ভাইব্র্যান্ট। এই রঙের মধ্যে যেমন প্রগাঢ় বৈরাগ্য রয়েছে, তেমনই চেতনারও উন্মেষ ঘটায় এই রং।” ‘বোধি ট্রি’ সিরিজে সনাতন নিজের নন-ফিগারেটিভ কাজের মধ্যেও কমলা রং নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা করেছিলেন। বিপুল সমাদর পেয়েছিল তাঁর ওই শিল্পকর্ম। নিজেই বললেন, “বোধি বৃক্ষের থেকে যে রং গড়িয়ে গড়িয়ে পড়ছে দেখিয়েছিলাম, সেটাও কিন্তু এই কমলা রংই। ঠিক গোধূলির রংই। যেটা খুব আলাদা, যার একটা নিজস্ব অস্তিত্ব রয়েছে, যে রং চেতনা সঞ্চার করে।”