সেলফি মানেই অবিকল ছবি নয়

তাই স্মার্টফোনে দরকার হয় ফিল্টার। লিখছেন সংযুক্তা বসুকেমন হত যদি অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সামনে এসে দাঁড়াতেন এক জন সাধারণ মানুষ, যার নামও সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়? ঠিক এমনটাই ঘটেছে শোভন তরফদার পরিচালিত ‘সেলফি’ ছবিতে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০১৫ ০০:৪১
Share:

কেমন হত যদি অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সামনে এসে দাঁড়াতেন এক জন সাধারণ মানুষ, যার নামও সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়?

Advertisement

ঠিক এমনটাই ঘটেছে শোভন তরফদার পরিচালিত ‘সেলফি’ ছবিতে।

এখানে অনেক চরিত্রই কাল্পনিক। কিন্তু অভিনেতা সৌমিত্র কাল্পনিক নন। একটা কথা বলে রাখতেই হয়, এ ছবির অভিনেতা সৌমিত্রর বায়োপিক নয়। যদিও ‘সেলফি’ ছবির অবলম্বন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের জীবন ও অভিনয় জীবন।

Advertisement

আমরা কী ভাবে কিংবদন্তি শিল্পীকে দেখি এই ছবি আসলে তারই উত্তর সন্ধান। এবং সেই জন্যই এই ছবির নাম ‘সেলফি’।

এ সেলফির এক প্রান্তে রয়েছে এক অখ্যাত সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। শুধু নামের কারণে এই সৌমিত্র নামের তরুণকে অনেক উপহাস সহ্য করতে হয় সারা জীবন ধরে। পাড়া- প্রতিবেশী থেকে প্রেমিকা সবাই সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় বলতে বোঝে এক জাতশিল্পীকে। অথচ সেই তরুণ রাম-শ্যাম-যদুর মতোই এক জন সাধারণ মানুষ। অন্য দিকে সেলফির অপর প্রান্তে আছেন সেই কিংবদন্তি, যিনি অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়।

এ ছবির নাটক শুরু হয় তখনই যখন ঘটনাচক্রে কিংবদন্তি সৌমিত্রর দুঃস্বপ্নে ফিরে ফিরে আসে অখ্যাত সৌমিত্র। তার সঙ্গে আসে এক মেয়ে যার নাম অপর্ণা। দেখতে দেখতে মনে পড়ে যায় ‘অপুর সংসার’য়ের নানা দৃশ্য। নস্টালজিয়া। আর তার মাঝখান আলো করে থাকেন অভিনেতা সৌমিত্র।

অখ্যাত সৌমিত্র অভিনেতা সৌমিত্রর ওপর প্রতিশোধ নেওয়ার চেষ্টা করে কারণ তার প্রেমিকা অপর্ণা তার মধ্যে খোঁজে শিল্পী সৌমিত্রকে। এই সব জায়গায় জমজমাট নাটক তৈরি হয় ছবিতে।

সিনেমার সূত্র ধরে সৌমিত্র অভিনীত বহু ছবির অনুষঙ্গ এসে পড়ে, যা উপভোগ্য হয়ে উঠতে পারে সৌমিত্র অনুরাগীদের কাছে।

তবে গল্প কখনই চেনা সরল পথে হাঁটে না। চরিত্ররা যাতায়াত করে স্বপ্ন, বাস্তব, পরাবাস্তবের মধ্যে। অসাধারণ অভিনয় করেছেন অভিনেতা সৌমিত্র তাঁর নিজের ভূমিকায়। কখনও দৃপ্ত, কখনও অসহায় তাঁর চরিত্রের উপস্থাপনা এ ছবিকে উজ্জ্বল করেছে। সাধারণ মানুষ সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের চরিত্রে অনিন্দ্য বন্দ্যোপাধ্যায় অনবদ্য। অপর্ণার চরিত্রে সোহিনী সরকারের সঙ্গে অভিনেতা সৌমিত্রের অন্তরঙ্গ দৃশ্যগুলো আলাদা করে নজর কাড়ে। মীরের সঙ্গে সৌমিত্রর সাক্ষাৎকারের দৃশ্য সৌমিত্র-অনুরাগীদের ভাল লাগবে।

হিরণ মিত্রর শিল্প নির্দেশনা ছবির প্রেক্ষাপটকে জীবন্ত করেছে। স্বপ্ন, বাস্তব আর পরাবাস্তবের সুন্দর যোগসূত্র তৈরি করেছে ছবির সেট। তবে ক্যামেরা আর সম্পাদনার দিকটা আরও টানটান হতে পারত।

স্বয়ং অভিনেতা সৌমিত্র এমনিতে আত্মজীবনীতে বিশ্বাস করেন না। কিন্তু ‘সেলফি’ ছবিতে তিনি যে সব স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি করেছেন তার মধ্যে রয়ে গিয়েছে জীবনীর রসদ। ছবি শেষ হয় যে কবিতায় সেখানে তিনি বলেন, ‘‘যদি কোনও প্রতিবিম্ব থাকে/ যোগভ্রষ্ট আত্মপ্রতিকৃতি ছাড়া’’। সত্যিই কি কোনও অবিকল প্রতিবিম্ব ধরা পড়ে সেলফিতে? এমন একটা দোলাচলের মধ্যে দিয়ে ছবি যখন শেষ হয় মনে হয় সেলফি কি পারে প্রত্যেক মানুষের সঠিক ছবিটা তুলে ধরতে?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন