Organ Donation Situation

রোটো-র উদ্যোগে রাজ্যে বর্তমান অঙ্গদান পরিস্থিতি কেমন? জানাচ্ছেন অর্পিতা রায়চৌধুরী

এই বিষয় নিয়ে এখনও বেশ খানিকটা সচেতনতা প্রয়োজন। এই বিষয়ে আনন্দবাজার অনলাইনের সঙ্গে খোলামেলা কথা বললেন প্রাক্তন রোটো আধিকারিক অর্পিতা রায়চৌধুরী।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২৭ নভেম্বর ২০২৩ ১২:১৬
Share:

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে রিজিওনাল অর্গ্যান অ্যান্ড টিস্যু ট্রান্সপ্ল্যান্ট(রোটো) বা আঞ্চলিক স্তরে অঙ্গ এবং টিস্যু প্রতিস্থাপন সংস্থাকে ঘিরে অঙ্গ প্রতিস্থাপন ও অঙ্গদানের পথ আরও প্রশস্ত ও সফল হয়ে উঠেছে। যদিও এই বিষয় নিয়ে এখনও বেশ খানিকটা সচেতনতা প্রয়োজন। এই বিষয়ে আনন্দবাজার অনলাইনের সঙ্গে খোলামেলা কথা বললেন প্রাক্তন রোটো আধিকারিক অর্পিতা রায়চৌধুরী।

Advertisement

শুরুতেই তিনি জানান, শেঠ সুখলাল কর্ণানি মেমোরিয়াল হাসপাতাল বা কলকাতার পিজি এসএসকেএম হাসপাতালের আউটডোর বা অন্যান্য সরকারি হাসপাতালের আউটডোরে যদি কোনও কিডনি বা সংশ্লিষ্ট রোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক লিখে দেন রোগীর অঙ্গ প্রতিস্থাপনের প্রয়োজন রয়েছে, তা হলে রোটো-র অফিসে এসে আবেদন জানানো যায়।

অঙ্গদাতারা দু’ভাবে অঙ্গ দিতে পারেন। জীবিত অবস্থায় এবং মৃত্যুর পরে। স্বভাবতই জীবিত মানুষের থেকে অঙ্গ নিয়ে সব সময়ে প্রতিস্থাপনের প্রয়োজন মেটানো সম্ভব নয়। অর্পিতার কথায়, “সাধারণত কোনও মানুষের যে বয়সে পৌঁছে প্রতিস্থাপন দরকার পড়ে, তত দিনে তাঁর অভিভাবকেরাও বয়স্ক হয়ে পড়েন। প্রতিস্থাপনের জন্য প্রয়োজন মতো রক্তের গ্রুপ সব ক্ষেত্রে মেলে না। কখনও কখনও শারীরিক অসুস্থতার কারণে স্ত্রীর পক্ষেও অঙ্গদান করা সম্ভব হয় না। সহজ ভাবে বললে জীবিত মানুষের থেকে অঙ্গ পাওয়া একপ্রকার প্রায় অসম্ভব হয়। সেই কারণেই ‘ব্রেন ডেড’ রোগীর থেকে অঙ্গগ্রহণের প্রয়োজন হয়।”

Advertisement

মনে রাখতে হবে, অনৈতিক বা বেআইনি পদ্ধতিতেও অঙ্গ কেনাবেচা হয়। তা রুখতে আইন রয়েছে। ধৃত ব্যক্তির জন্য উপযুক্ত শাস্তিও রয়েছে। বর্তমান সময়ে সচেতনতার অভাবে ভারতের মতো দেশে মরণোত্তর অঙ্গদানের সংখ্যাটা বেশ কম। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, পশ্চিমি দেশগুলিতে প্রায় ৭০ শতাংশ অঙ্গই আসে মৃত ব্যক্তির শরীর থেকে। সংখ্যার তুলনায় ভারতে ৮৫% জীবিত দাতা, মৃত দাতার ক্ষেত্রে এ দেশ বেশ পিছিয়ে। অবশ্য ভারতের অন্যান্য জায়গার তুলনায় দক্ষিণ ও পশ্চিম ভারতে অঙ্গদানের হার তুলনামূলক ভাবে বেশি।

এ দেশে কিডনি বিকল হওয়ার মূল কারণ ভায়াবেটিস আর উচ্চ রক্ত চাপ। বেশির ভাগেরই কিডনি খারাপ হয় মধ্যবয়সে। সে সময়ে নিজের পরিবারের জীবিত দাতা পাওয়া মুশকিল। মা বাবা বয়স্ক, নিজেরাই অসুস্থ। ভাই বোনেরও হয়তো সুগার বা প্রেশার থাকতে পারে , কারণ এই অসুখগুলি অনেক ক্ষেত্রেই বংশগত। সুতরাং অঙ্গের চাহিদা কিছুতেই মেটে না জীবিত দাতার মাধ্যমে। এই চাহিদা মেটানো সম্ভব কেবল আইসিইউতে ব্রেন ডেথে মৃত মানুষের অঙ্গদানের মাধ্যমে।

এই পরিস্থিতিতে রোটো-র কাছে নাম নথিভুক্ত করে অঙ্গ পাওয়া সম্ভব। এই বিষয়ে অর্পিতা জানাচ্ছেন, “রোটো-র সঙ্গে যে হাসপাতালগুলি যুক্ত রয়েছে, অর্থাৎ যেখানে প্রতিস্থাপন হয়, সেখানে আইসিইউতে ব্রেন ডেথে মৃত ব্যক্তির শরীর থেকে অঙ্গ নিয়ে অস্ত্রোপচারের ব্যবস্থা করা যায়। জেনারেল ওয়ার্ডে মৃত রোগীকে অঙ্গ প্রতিস্থাপনের জন্য বেছে নেওয়া যায় না। এই পদ্ধতির জন্য দরকার এমন রোগী, যাঁর দেহকে লাইফ সাপোর্টে রেখে প্রতিস্থাপনের জন্য তৈরি করে নেওয়া যায়। আউটডোরে চিকিৎসককে দেখানোর পরে যদি তিনি লিখে দেন রোগীর প্রতিস্থাপন প্রয়োজন, তা হলে এসএসকেএম হাসপাতালের রোটো অফিসে কো-অর্ডিনেটর বা কোনও আধিকারিকের সঙ্গে কথা বলে, দরকারি যা কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষা করে এবং আইনি পদক্ষেপ হিসাবে যা কাজ থাকে, সব গুছিয়ে নেওয়া হয়।”

তবে সব ক্ষেত্রেই রোগীর অঙ্গ ব্যবহার করা যায় না। যদি রোগীর শরীরে ক্যানসার জাতীয় কোনও মারণ রোগ বাসা বেঁধে থাকে,তা হলে প্রতিস্থাপনের দিকে কোনও ভাবেই এগোনো যায় না। এগোনো যায় না, যদি মৃতের শরীরে হেপাটাইটিস বা এডস্-এর মতো রোগ থাকে। রিপোর্টে সব ঠিকঠাক এলে সেই মতোই নাম নথিভুক্ত করা হয়। নাম নথিভুক্তির তারিখ অনুযায়ী সেই রোগী সময়মতো অঙ্গ প্রতিস্থাপনের সুযোগ পান।

অর্পিতা জানাচ্ছেন, “আইসিইউতে যথেষ্ট সংখ্যক রোগীর ‘ব্রেন ডেথ’ ঘোষণা হয় না। এর পিছনে রয়েছে নানা ভুল বিশ্বাস ও সচেতনতার অভাব। আর শুধু ‘ব্রেন ডেড’ ঘোষণাই নয়, পরিবারের মানুষের মধ্যেও সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে, যাতে তাঁরা নিজেরা বুঝতে পারেন অঙ্গদানের গুরুত্ব কতটা এবং কত মানুষের প্রাণ এই পদ্ধতিতে বাঁচানো সম্ভব। তবেই আগামী পরিস্থিতি সামলানো যাবে। এর জন্য বিভিন্ন গণমাধ্যমে আলোচনা ও প্রচারের মারফৎ সচেতনতা গড়ে তোলা জরুরি। ডায়ালিসিসের মতো দীর্ঘস্থায়ী সমস্যার সমাধানের জন্য অঙ্গ প্রতিস্থাপনের থেকে ভাল কোনও পথ আর নেই।”

২০১৭ সাল থেকে প্রায় প্রতি বছর বারো-তেরো জন মৃত ব্যক্তির থেকে অঙ্গদান হয়েছে পশ্চিমবঙ্গে। কিন্তু সংখ্যাটা বাড়ছে না, স্থানু হয়ে রয়েছে।

মৃত মানুষের শরীর থেকে অঙ্গদানের অনুমতি মিললে একসঙ্গে অনেকগুলি অঙ্গ বা প্রত্যঙ্গ পাওয়া যায়। জীবিত অঙ্গদাতার থেকে অঙ্গ নিলে ভবিষ্যতে তাঁদের বিপদ থাকতে পারে। অল্প বয়সে অঙ্গদান করলে ভবিষ্যতে যদি কোনও সময় তাঁরা নিজেরা মধুমেহ বা অন্যান্য সংশ্লিষ্ট রোগের কবলে পড়ে যান, তখন সুস্থ হয়ে ওঠা খুব কঠিন। মৃত অঙ্গদাতার ক্ষেত্রে সে সমস্যা একেবারেই নেই।

অর্পিতা বলেন, “অঙ্গদানের বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য রোটো দীর্ঘদিন ধরেই বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা-সহ বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি স্তরে সফল ভাবে কাজ করছে। পুজোর সময়ে অঙ্গদানের শপথ নেওয়ার ফর্ম বিলি করার জন্য বিশেষ কিয়স্কের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। সহজ বাংলা ভাষায় বার্তা লিখে প্রচার অভিযান চালানো হয়েছে। যদিও এখনও মানুষের সচেতনতা বাড়ানোর খুবই প্রয়োজন। তাঁর মতে, কলেজ স্তর থেকেই যদি সচেতনতা তৈরি করা যায়, তা হলে এই পরিস্থিতি কিছুটা হলেও বদলাতে পারে। আর দরকার আইসিইউতে ব্রেন ডেথ হয়ে থাকলে তার যথাযথ ঘোষণা।

ডাক্তার এবং সাধারণ মানুষ উভয়ের সচেতনতা বাড়লে তবেই বাড়তে পারে অঙ্গদান

অন্যকে নতুন জীবন দিন। এগিয়ে আসুন এবং অঙ্গীকার করুন অঙ্গদানের। ক্লিক করুন পাশের লিঙ্কে — bit.ly/47a6kLV

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন