ছবি : সংগৃহীত।
দামি জিনিস মানে ভাল জিনিস। এমন এক ধারণা অনেকের মনেই গাঁথা থাকে। যার ফলে ‘সস্তা মানে খারাপ’— এই ভাবনাটিও মনের কোনও না কোনও কোণে থেকে যায়। কিছু ক্ষেত্রে ওই ভাবনা ঠিক বলে প্রমাণিতও হয়। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে আবার হয়ও না। এক চিকিৎসক সেই ব্যাতিক্রমের কথাই বলেছেন। তাঁর মতে, কম দামি এক ফলে এমন অনেক পুষ্টিগুণ রয়েছে, যা সুপারমার্কেটের ঝকঝকে কাউন্টারে সাজিয়ে রাখা দামি ফলেও পাওয়া যায় না।
সমাজমাধ্যমে রিলসের দৌলতে আর তাতে নানা পুষ্টিবিদ এবং চিকিৎসকের পরামর্শের জেরে একটি বিষয় এখন অনেকেই জানেন। পেট ঠিক থাকলেই শরীরের অনেকটা ঠিক থাকে। আর পেট ঠিক রাখার জন্য তারকারা যে সব দামি ফলমূল খাওয়ার পরামর্শ দেন, (যেমন অ্যাভোকাডো, কিউয়ি, ব্লুবেরি ইত্যাদি) তা-ও অন্ধ ভাবে অনুসরণ করেন। কিন্তু ২০ বছর ধরে গ্যাসট্রোএন্টেরোলজিস্টের পেশায় থাকা এক চিকিৎসক পালানিপ্পন মাণিক্যম বলছেন, ‘‘দামি ফল ভাল মানে সস্তার চেনা ফলটি খারাপ নয়। বরং ৫ টাকার একটা ফল পেটের জন্য যতটা উপকারী, তেমন গুণ দাম দিয়ে কেনা কিউয়ি অ্যাভোকাডোতে পাওয়া যাবে না।’’
মাদুরাইয়ের ওই চিকিৎসক নিজের পরিচয় দেন ‘ডক্টর পাল’ নামে। ম্যাসাচ্যুসটস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রশিক্ষিত বর্তমানে পেশার সূত্রে ক্যালিফোর্নিয়াবাসী ওই চিকিৎসক নেটসমাজে খ্যাতনামী। তিনি বলছেন, ‘‘ভারতে রাস্তাঘাটে সারা বছরই পাওয়া যায় পেয়ারা। খুব অল্প দাম। সবাই খেতে পারেন। অন্ত্র ভাল রাখার জন্য এই ফলের জবাব নেই। পেট পরিষ্কার রাখা বলুন, উপকারী ব্যাক্টেরিয়াকে ভাল রাখা বলুন বা লিভারের স্বাস্থ্য ভাল রাখা— সব দিক থেকেই পেয়ারা উপকারী। একে সুপারফুডও বলতে পারেন।’’
কী ভাবে পেয়ারা পেট ভাল রাখে?
১। ফাইবার: চিকিৎসক জানাচ্ছেন, অন্ত্র ভাল রাখার জন্য সবচেয়ে জরুরি হল ফাাইবার। পেয়ারায় তা রয়েছে ভরপুর। ১০০ গ্রাম ওজনের পেয়ারাতে ৫ গ্রাম ফাইবার থাকে। যা অন্ত্রের জন্য প্রিবায়োটিক হিসাবেও কাজ করে।
২। গ্লাইসেমিক ইনডেক্স: খাবারের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স থেকে বোঝা যায় তা শরীরে যাওয়ার পরে রক্তে শর্করার মাত্রা কতটা বাড়বে। পেয়ারার গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম। চিকিৎসক জনাচ্ছেন, তা ১২-২৪ এর মধ্যে। তাই এটি রক্তে শর্করার মাত্রা এক ধাক্কায় অনেকটা বেড়ে যেতে দেয় না। তা ডায়াবিটিসের রোগীদের জন্য উপকারী তো বটেই, তার পাশাপাশি সাধারণের স্বাস্থ্যও ভাল রাখে। কারণ রক্তে শর্করার মাত্রা হঠাৎ বাড়লে তার প্রভাব পড়ে অন্ত্রের উপরেও।
৩। ভিটামিন সি: পেয়ারায় যে পরিমাণ ভিটামিন সি রয়েছে, তা আপেল কিংবা কমলালেবুতেও নেই। এক কাপ পেয়ারায় ৩৭০ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি থাকে। যা শরীরের দৈনিক ভিটামিন সি-এর প্রয়োজন একাই মেটাতে পারে। অন্ত্রে ভিটামিন সি থাকার উপকারিতা হল এটি খাবারে থাকা এন্ডোটক্সিনের মতো ক্ষতিকর জিনিস রক্তে মিশতে দেয় না। যা পেট তো বটেই সার্বিক স্বাস্থ্য ভাল রাখার জন্যও জরুরি।
৪। অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট: পেয়ারায় ভিটামিন সি ছাড়াও রয়েছে ভিটামিন এ। দু’টিই অত্যন্ত জোরালো অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট। যা শরীরে গেলে লিভার থেকে অন্ত্র— সব কিছুই দূষণমুক্ত রাখতে সাহায্য করে। লিভার ঠিক থাকলে পেটের স্বাস্থ্য যেমন ভাল থাকে, তেমনই গোটা শরীরও ভাল ভাবে কাজ করে। এ ছাড়া পেয়ারায় থাকা অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট অন্ত্রের প্রদাহ কমাতেও সাহায্য করে। যা পেট ভাল রাখার জন্য জরুরি।
৫। ব্যাক্টেরিয়া: এটি পেটের বিভিন্ন ধরনের উপকারী ব্যাক্টেরিয়ার সংখ্যা বৃদ্ধি করে, একই সঙ্গে ক্ষতিকর ব্যাক্টেরিয়া কমায়।