চোখের পাতায় চুলকানি, চোখ লাল হলে সাবধান। ছবি: ফ্রিপিক।
চোখের পাতায় চুলকানি হলেই কি চোখ ঘষতে থাকেন? এই অভ্যাস বিপজ্জনক হতে পারে। চোখ ফুলে ওঠা, লালচে ভাব, অনবরত জল পড়তে থাকলেই অনেকে ভেবে নেন কনজাঙ্কটিভাইটিসের সংক্রমণ। না জেনেই চোখের ড্রপ নিয়ে গিয়ে হিতে বিপরীত হয়। চোখে নানা ধরনের সংক্রমণ হতে পারে, তবে ব্যাক্টেরিয়াঘটিত এক রকম সংক্রমণ বিষয়ে সতর্ক করছেন চিকিৎসকেরা। বর্ষার সময়ে তো বটেই, শীতের সময়েও এমন সংক্রমণ বাড়ে। রোগটির নাম ট্র্যাকোমা।
ক্ল্যামিডিয়া ট্র্যাকোমাইটিস নামে এক ধরনের ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমণে রেটিনার ক্ষতি হয়। সংক্রমণ বাড়াবাড়ি পর্যায়ে চলে গেলে দৃষ্টিশক্তি চলেও যেতে পারে। ট্র্যাকোমা রোগটি কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারে সে নিয়ে দেশের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেল্থের একটি গবেষণাপত্র আছে। গবেষকেরা জানিয়েছেন, চোখের পাতায় মূলত সংক্রমণ ঘটে। সেখান থেকে গোটা চোখে তা ছড়িয়ে পড়ে। চোখে চুলকানি শুরু হয়, মনে হয় চোখের পাতা ভারী হয়ে আসছে। এমন অবস্থায় অনেকেই চোখ চুলকে ফেলেন বা বারে বারে চোখ ঘষতে থাকেন। এতে সংক্রমণ আরও বেড়ে যায়। চোখ লাল হয়ে ফুলে ওঠে, দৃষ্টি ঝাপসা হতে শুরু করে, সাইড ভিশন নষ্ট হতে থাকে।
ট্র্যাকোমা ছোঁয়াচে রোগ। যিনি সংক্রমিত, তাঁর থেকে রোগ অন্যের শরীরেও ছড়াতে পারে। তাই যাঁর ট্র্যাকোমা হয়েছে, তাঁকে খুব সাবধানে থাকতে হয়। বাড়িতে শিশু বা বয়স্কেরা থাকলে, রোগ দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে। ট্র্যাকোমা দুই চোখেই হলে অনেক সময়ে চোখ থেকে পুঁজ বেরোতে দেখা যায়। চোখের মাঝে সাদা অংশটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আক্রান্তের চোখ থেকে বেরোনো জল বা পুঁজ অন্যের শরীরে লাগলে তাঁরও সংক্রমণ হওয়ার ঝুঁকি থাকে। তাই বাড়িতে কেউ আক্রান্ত হলে তাঁর ব্যবহার করা পোশাক, বিছানা, বালিশ, তোয়ালে বা যে কোনও জিনিসই আলাদা রাখা প্রয়োজন।
সারবে কী করে?
সবচেয়ে আগে জরুরি পরিচ্ছন্নতা। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে থাকলে, পোশাক বা বিছানার চাদর পরিষ্কার না রাখলে সংক্রমণ ঘটতে পারে। ট্র্যাকোমা ছড়িয়ে পড়লে চোখের পাতায় অস্ত্রোপচার করার প্রয়োজন হতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) জানিয়েছে, ট্র্যাকোমা প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে ওষুধে সারতে পারে। না হলে অস্ত্রোপচারই ভরসা। সঠিক অস্ত্রোপচার হলে অন্ধত্বের ঝুঁকি কমবে।
চোখের যত্ন নিতে হবে। বাইরে থেকে ফিরলে চোখ ভাল করে জলের ঝাপটা দিয়ে পরিষ্কার করুন। চোখে কোনও রকম সমস্যা হলে দেরি না করে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। নিজে থেকে আই ড্রপ দেওয়া বা স্টেরয়েড যুক্ত ড্রপ ব্যবহার করা বিপজ্জনক হতে পারে।