প্রতীকী চিত্র। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
পরিবর্তনশীল বিশ্বে শিশুর অধিকার রক্ষার জন্য বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা প্রতিনিয়ত কাজ করে চলেছে। কিন্তু তার মধ্যেই রাষ্ট্রপুঞ্জের সাম্প্রতিক রিপোর্টে নতুন করে শিশুস্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। রাষ্ট্রপুঞ্জের অধীনস্থ ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা’ (হু) জানিয়েছে, ২০২৪ সালে বিশ্বে প্রায় ১ কোটি ৪০ লক্ষ শিশু কোনও টিকা পায়নি। তার মধ্যে সিংহভাগ শিশু (৫২ শতাংশ) মূলত নয়টি দেশের (নাইজেরিয়া, ভারত, সুদান, কঙ্গো, ইথিয়োপিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ইয়েমেন, আফগানিস্তান এবং অ্যাঙ্গোলা)।
মঙ্গলবার রাষ্ট্রপুঞ্জ এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তরফে টিকাকরণ বিষয়ক বার্ষিক সমীক্ষা প্রকাশ্যে এসেছে। জানা যাচ্ছে, গত বছর ১ বছর বয়সের নীচে এমন ৮৯ শতাংশ শিশু ডিপথেরিয়া, টিটেনাস এবং হুপিং কাশির টিকার প্রথম ডোজ় পেয়েছে। ২০২৩ সালের পরিসংখ্যানও একই ছিল। গত এক বছরে তিনটি ডোজ় সম্পূর্ণ করেছে, এ রকম শিশুর সংখ্যা ৮৪ শতাংশ থেকে বেড়ে ৮৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
হু এবং রাষ্ট্রপুঞ্জের আধিকারিকেরা জানিয়েছেন, চলতি বছরে আরও বেশি সংখ্যায় শিশুর কাছে টিকা পৌঁছে দেওয়া এক অর্থে কঠিন হতে চলেছে। কারণ, গত এক বছরে একাধিক সূত্র আর্থিক সাহায্য বন্ধ করেছে। গত জানুয়ারি মাসে আমেরিকা ‘হু’-এর থেকে সরে এসেছে। জুন মাসে, আমেরিকার হেল্থ সেক্রেটারি রবার্ট এফ কেনেডি জুনিয়র বহু দিন ধরেই টিকাকরণের সমালোচনা করে আসছেন। অতীতে তিনি ডিপথেরিয়া, টিটেনাস এবং হুপিং কাশি প্রতিরোধী টিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। যদিও রাষ্ট্রপুঞ্জের পরিসংখ্যান বলছে, টিকা প্রতি বছর ৩৫ থেকে ৫০ লক্ষ মানুষের প্রাণরক্ষা করে। হু-এর ডিরেক্টর জেনারেল টেডরস আধানম গিব্রিয়াসেসের কথায়, ‘‘আর্থিক সাহায্যের অভাব, টিকা নিয়ে মানুষের মধ্যে ভ্রান্ত ধারণা ছড়িয়ে দেওয়ার মতো ঘটনা বহু বছরের প্রচেষ্টাকে নষ্ট করে দিতে পারে।’’
রাষ্ট্রপুঞ্জের আধিকারিকেরা জানিয়েছেন, টিকার বণ্টন ব্যবস্থা নিয়েও একাধিক দেশের মধ্যে বৈষম্য তৈরি হয়েছে। যেমন ডিপথেরিয়া, টিটেনাস এবং হুপিং কাশির টিকার ক্ষেত্রে সুদান এখনও সব থেকে পিছিয়ে রয়েছে। আবার জানা গিয়েছে, হামের টিকার ক্ষেত্রে পরিস্থিতি ২০২৩ এর তুলনায় কিছুটা উন্নত হয়েছে (৭৬ শতাংশ)। যদিও হু এবং রাষ্ট্রপুঞ্জ আগামী দিনে এই পরিসংখ্যানকে ৯০ শতাংশ করার উদ্যোগ নিতে চলেছে। উল্লেখ্য, গত সপ্তাহে ইংল্যান্ডের লিভারপুলে হামে আক্রান্ত হয়ে একটি শিশুর মৃত্যু ঘটে। স্বাস্থ্য আধিকারিকদের পরিসংখ্যান অবশ্য বলছে, ব্রিটেনের ৮৪ শতাংশ শিশু হামের টিকা পেয়েছে। উল্লেখ্য, হু জানিয়েছে, ২০২৪ সালে বিশ্বে প্রায় ৬০টি দেশে হামের প্রাদুর্ভাব দেখা গিয়েছিল।