Air Conditioner

আরামের ঠিকানা

ভ্যাপসা গরম থেকে বাঁচতে ভরসা এসি, কুলার। জেনে নিন খুঁটিনাটি

Advertisement

কোয়েনা দাশগুপ্ত

শেষ আপডেট: ১১ মে ২০২৪ ০৯:৩৫
Share:

এক সময়ে এয়ার কন্ডিশনার, এয়ার কুলার ছিল বিলাসদ্রব্য। এখন ক্রমশ অপরিহার্য হয়ে উঠছে তা। এক-দু’দিনের বৃষ্টিতে সাময়িক স্বস্তি মিললেও, গরম কমেনি তেমন। এসি, কুলারের চাহিদায় তাই ছেদ পড়েনি। শোয়ার ঘর থেকে বসার ঘর, ঠান্ডার চাদরে মুড়তে চাইছেন অনেকেই। কিন্তু ঘর ঠান্ডা রাখতে এসি নাকি কুলার কোনটা বেশি কার্যকর, তা ভাবাচ্ছে। অথবা একটি ঘরে এসি রয়েছে, অন্য ঘরের জন্য কুলারের কথা ভাবছেন অনেকে। তবে শুধু এসি, কুলার পছন্দ করলে হবে না, তার হরেক রকমের সাইজ়, সুবিধে— সবটা বুঝে নিতে হবে।

Advertisement

এসির খুঁটিনাটি

স্প্লিট, উইন্ডো দু’ধরনের এসিই বাজারে সহজলভ্য। তবে স্প্লিট এসির চাহিদাই বেশি। এ ধরনের এসিতে জায়গা কম লাগে। এক ইলেকট্রনিক সংস্থার কর্মকর্তা বলছেন, “কেনার আগে কোন ঘরে ঠিক কত টনের এসি প্রয়োজন, থ্রি স্টার নাকি ফাইভ স্টার এসি নেওয়া ভাল, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকেন ক্রেতারা। বিষয়টা নির্ভর করে ঘরের আয়তনের উপরে।” সাধারণ হিসেবে ১০০ থেকে ১২০ বর্গফুটের ঘরের জন্য এক টনের এসি, ১২০ থেকে ১৮০ বর্গফুটের ঘরে দেড় টন এবং এর চেয়ে বড় ঘরে দু’টনের এসি লাগানো ভাল। পাশাপাশি থ্রি স্টার এসির তুলনায় ফাইভ স্টার এসি লাগালে কম্প্রেসারে চাপ কম পড়ে, ফলে বেশি দিন ভাল থাকে মেশিনটি। তুলনামূলক ভাবে ইলেকট্রিক বিলেও সাশ্রয় হয়। তবে এ তো গেল সাধারণ হিসেব। আবহাওয়া, ঘরে থাকা লোকসংখ্যা কিংবা বহুতল বাড়ির কোন ফ্লোরে এসি লাগানো হচ্ছে, সারা দিনে কত ঘণ্টা তা চলছে, তার উপরেও নির্ভর করবে আয়তন।

Advertisement

এসির সতর্কতা

  • বাড়ির যে দেওয়ালে সরাসরি রোদ পড়ে, তাতে এসি না লাগানোই ভাল।
  • এসি দীর্ঘদিন ভাল রাখতে ডিফল্ট মোড ব্যবহার করুন। এই মোডে এসি ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে চলে। ফলে কম্প্রেসারে চাপ কম পড়ে।
  • চেষ্টা করুন ইনভার্টার এসি কিনতে। ইনভার্টার এসির কম্প্রেসারকে প্রয়োজন মতো তাপমাত্রায় রাখে, ঘর তাড়াতাড়ি ঠান্ডা করে। এতে বিদ্যুৎ বিলে সাশ্রয় হয়।
  • গরম বাড়লে দুপুরের দিকে একটানা এসি চললে, কম্প্রেসারের উপরে বেশি চাপ পড়ে। এক এসির বিক্রেতা বলছেন, সে ক্ষেত্রে এসির সঙ্গে ফ্যানও চালিয়ে দিন। ঘর তাড়াতাড়ি ঠান্ডা হবে।
  • গরম থেকে বাঁচাতে ঘরের বাইরের দিকে এসির যে কেবল বা পাইপ থাকে, তা ঢেকে দিতে পারেন।
  • এসি ভাল রাখতে অন্তত বছরে দু’বার সার্ভিসিং করান। গরমে এসি চালু করার আগে একবার, পরে বর্ষা চলে গেলে আর একবার সার্ভিসিং করিয়ে নেওয়া ভাল।
  • অনেক এসিতেই এয়ার পিউরিফায়ার, অ্যান্টি ব্যাক্টিরিয়াল ফিল্টার নানা সুবিধে থাকে। কেনার আগে তা দেখে নিন।

কুলারের খুঁটিনাটি

কুলার দামে সস্তা। বিদ্যুৎ খরচও কম। পার্সোনাল, টাওয়ার, উইন্ডো, ডেসার্ট - চার ধরনের এয়ার কুলার পাওয়া যায়। ঘরের আয়তন, বাইরের তাপমাত্রা, পরিবেশের আর্দ্রতা, জলধারণ ক্ষমতা ইত্যাদি অনুযায়ী কুলার বেছে নিতে পারেন। ১৫০-৩০০ বর্গফুটের ঘরে পার্সোনাল বা টাওয়ার কুলার ভাল। যে সকল এলাকায় বাতাসে আর্দ্রতা থাকে, তাপমাত্রা ৩০-৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে হয়, সেখানে এ ধরনের কুলার উপযোগী। দৈনন্দিন ব্যবহারে এই কুলার ভাল। ৩০০-৬০০ বর্গফুটের ঘরে, বিশেষত যেখানে আবহাওয়া শুষ্ক, তাপমাত্রা প্রায় ৪৫-৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস, সেখানে ডেসার্ট কুলার ব্যবহার করুন। এই কুলার আকারে বড় হওয়ায় হাওয়া অনেকটা জায়গায় ছড়াতে পারে। বড় ঘরের জন্য অন্তত ৬০ লিটার জলধারণ ক্ষমতাযুক্ত এয়ার কুলার কিনুন। ছোট ঘরে ৪০ লিটারের কুলারই যথেষ্ট।

  • আধুনিক কুলারগুলিতে ইনভার্টার টেকনোলজি, রিমোট কন্ট্রোল, মশা নিরোধক ফিল্টার, ডাস্ট ফিল্টার, অটো ফিলের মতো অতিরিক্ত কিছু সুবিধে থাকে। বিশেষত অটো ফিল সুবিধে থাকলে কুলারের মোটর ভাল থাকে। কেনার আগে তাই খুঁটিয়ে দেখে নেওয়া দরকার।
  • এখন অনেক কুলারেই হানিকম কুলিং প্যাড থাকে। এই হানিকম ঘরের বাতাস থেকে আর্দ্রতা শুষে ঘর তাড়াতাড়ি ঠান্ডা করে। তা ছাড়া, কুলারে এক বার জল ভরলে তা অন্তত দু’-তিন দিন চলে। একই জল বারবার ব্যবহারের ফলে তা থেকে ব্যক্টিরিয়া, ভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ারও সম্ভাবনা থাকে। হানিকম কুলিং প্যাড তা থেকেও রক্ষা করে। প্রায় তিন থেকে চার বছর স্থায়ী হয় এই হানিকম।

কুলারের সতর্কতা

  • বাজারে এখনও আয়রন কুলার পাওয়া যায়। এতে বিদ্যুৎ খরচ যেমন বেশি, তেমন জলও বেশি লাগে। তুলনায় প্লাস্টিকের কুলার কেনাই ভাল।
  • কেনার আগে দেখে নিন, তাতে কতটা শব্দ হয়। আয়রন কুলারে শব্দ বেশি হয়।
  • কুলারের জল একটানা বেশি দিন ব্যবহার না করে, দু’ দিন অন্তর বদলে দেওয়া ভাল।
  • এসির মতোই কুলার ভাল রাখতে বছরে দু’বার সার্ভিসিং করান।

চিকিৎসকের মতামত

জেনারেল ফিজ়িশিয়ান ডা. সুবীর মন্ডল বলছেন, “কুলার কিন্তু এসির মতো ঘর ঠান্ডা করে না, কেবল ঠান্ডা হাওয়া দেয়। এতে ঠান্ডা লেগে যাওয়ার ভয় থাকে। ঘরে ফাঙ্গাস হতে পারে, ইনফেকশন ছড়াতে পারে। অ্যাজ়মা বা হাঁপানির সমস্যা থাকলে, কুলারে না থাকাই ভাল। এসিতে সে সব ভয় থাকে না। বরং ব্যথা, যন্ত্রণা তাতে কমতেও পারে।” পাশাপাশি ডা. মন্ডল বলছেন, ঘরের আয়তন যা-ই হোক না কেন, সব সময়েই ১ টনের এসি লাগানো ভাল। ঘর তাড়াতাড়ি ঠান্ডা করতে, এসি মেশিন ভাল রাখতে কিংবা বিদ্যুতের সাশ্রয় করতে বড় এসি লাগালে, শরীর খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়। রাতে দ্রুত ঘর ঠান্ডা হয়ে যাওয়ার পর যখন বিদ্যুতের বিল সাশ্রয় করতে এসি অটোমেটিক বন্ধ হয়ে যাবে তখন ঘরে ফের আর্দ্রতা বাড়বে, যা শরীরের ক্ষতি করবে। তা এড়াতে বরং ধীরেসুস্থে ঘর ঠান্ডা রাখাই ভাল।

তা ছাড়া, প্রয়োজনে গরম ছাড়া অন্যান্য সময়েও এয়ার কন্ডিশনার চালানো যেতে পারে। সমুদ্র উপকূলবর্তী কিংবা উপকূল সংলগ্ন অঞ্চলে যাঁরা বসবাস করেন, তাঁদের জন্যও এয়ার কন্ডিশনার ভাল। কিন্তু এসি থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাস উৎপন্ন হয়, যা পরিবেশের ক্ষতি করে। সে দিক দিয়ে কুলার ভাল। তবে বিভিন্ন কোম্পানির কুলার বা এসির ফিচার দেখেবুঝে তবেই কিনুন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন